ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় কবির প্রয়াণ দিবস

প্রকাশিত: ০৯:২৬, ২৭ আগস্ট ২০১৯

জাতীয় কবির প্রয়াণ দিবস

আজ ১২ ভাদ্র। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৩তম প্রয়াণ দিবস। জন্মেছিলেন ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দে অবিভক্ত বাংলার বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে। মৃত্যু ১২ ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দে ঢাকার তৎকালীন পিজি হাসপাতালে। কবি নজরুল আমাদের জাতীয় কবি। বিদ্রোহী কবি নামে তিনি খ্যাতি লাভ করেন জীবদ্দশাতেই। তাঁর আবির্ভাব ধূমকেতু বা ঝড়ের মতোই। তিনি নিজেই লিখেছেন, ‘আমি দুরন্ত বৈশাখী ঝড়।’ তবে তাঁর লেখা অমর কবিতা ‘বিদ্রোহী’র জন্যই তিনি বিদ্রোহী কবিরূপে সমধিক পরিচিত হয়ে ওঠেন। তাঁর ওই কবিতা প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন প্রবল একটা ঝড় বয়ে যায়। সে ঝড় বাংলা কবিতার ক্ষেত্রে, সে ঝড় মানুষের চিন্তা-চেতনার মধ্যে। কবিতাটি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কবি নজরুল যেন রাতারাতি বিখ্যাত ও সুখ্যাত হয়ে ওঠেন। কবিতাটি আলোড়ন তোলে বাংলা কাব্য সাহিত্যের ধারায়। সমগ্র উপমহাদেশেও। তখন ভাগ হয়নি উপমহাদেশ। চলছে দোর্দ- প্রতাপে ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসন। সেই অবস্থায় এ কবিতা তুমুল আলোড়ন তুলল মানুষের মনে। মানুষ বুঝতে পারল, বাংলা সাহিত্য জগতে আবির্ভাব হয়েছে এমন এক প্রতিভার, যিনি ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণ, নিপীড়ন, নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। নজরুল দাঁড়িয়েছেন সব ধরনের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে, অবিচারের বিরুদ্ধে, মানুষের পূর্ণ মুক্তির সপক্ষে। এভাবেই নজরুল আবির্ভূত হন, মানুষের মন জয় করেন এবং তাঁর সাহিত্য সাধনার মাধ্যমে তিনি মানুষের অন্তরে স্থায়ীভাবে আসন লাভ করেন। কবি নজরুল আমাদের গর্ব। তাঁকে আমরা প্রতিদিন স্মরণ করি। তিনি আমাদের আনন্দ-বেদনা, দুঃখের সঙ্গী। দুর্যোগ-দুর্বিপাকেও তাঁর কাছে আমাদের যেতে হয়। পাকিস্তানী স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামের দীর্ঘ সময়কালে আমরা তাঁর কবিতা উচ্চারণ করেছি, তাঁর গান গেয়ে উদ্দীপনা লাভ করেছি। তাঁর ‘শিকল পরা ছল, মোদের এ শিকল পরা ছল’, ‘কারার ঐ লৌহ কপাট ভেঙ্গে ফেল কররে লোপাট’, ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার/লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে যাত্রীরা হুঁশিয়ার’ গানগুলো মানুষের হৃদয়ে শক্তি যুগিয়েছে, মনে জয়ের প্রত্যাশা জাগিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর কবিতা ও গান মুক্তিযোদ্ধাদের মনে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রেরণা ও সাহস যুগিয়েছে। তাঁর কবিতা ও গান আমাদের দুস্তর পারাবার পেরিয়ে স্বাধীনতার স্বর্ণদ্বারে পৌঁছাতে সহায়তা করেছে। তাই কবির কাছে আমরা চির ঋণী। সর্বপ্রকার শোষণমুক্ত, বিভেদমুক্ত, সাম্পদায়িকতামুক্ত, সম্পূর্ণরূপে ধর্মনিরপেক্ষ ও বাঙালী জাতীয়তাবাদী চেতনা এদেশের মানুষ লালন করে। নজরুলের কাছ থেকে আমরা এ চেতনাই লাভ করি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে কবিকে কলকাতা থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে আনা হয়। ঢাকায় তাঁর বসবাস এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। দেয়া হয় জাতীয় কবির সম্মান। এই ঢাকাতেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত হন। তবে কবি বেঁচে আছেন এ দেশের মানুষের মনে, বাঙালীর মন ও হৃদয়ে। তিনি তাই মরেও অমর। কবির স্মৃতিকে, তাঁর সাহিত্যকে আমাদের নিজেদের প্রয়োজনেই বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আজ এই দিনে কবির স্মৃতির প্রতি আমাদের আন্তরিক শ্রদ্ধার্ঘ্য।
×