ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভিজিএফের চাল পেলেন প্রবাসীর পরিবারসহ মৃত ব্যক্তিরা !

প্রকাশিত: ০৯:১২, ২৭ আগস্ট ২০১৯

 ভিজিএফের চাল পেলেন প্রবাসীর পরিবারসহ মৃত ব্যক্তিরা !

সাজেদ রহমান, যশোর অফিস ॥ চৌগাছা উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নে ভিজিএফের চাল পেলেন অস্ট্রেলিয়া ও জাপান প্রবাসীর পরিবার। মৃত ব্যক্তিদের নামেও কার্ড থাকায় তাদের পরিবারও চাল নিলেন। গত রবিবার এসব ধনাঢ্য ব্যক্তিদের মাঝে চাল বিতরণ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে। জানা যায়, চৌগাছা উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের তিন গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার ভিজিএফ এর চাল গত ঈদ-উল-আজহার আগে বিতরণ হয়নি। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর গত রবিবার ওই ওয়ার্ডের ৮৩০ পরিবারের মধ্যে ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হয়। বিতরণকৃতদের তালিকায় নাম রয়েছে নারায়ণপুর গ্রামের মৃত জালাল মিয়ার ছেলে রফিকুল ইসলামের। তিনি নারায়ণপুর বাজারে তিনতলা একটি ভবনের মালিক। সেখানে গ্রামীণ ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকের নারায়ণপুর শাখা অফিস রয়েছে। নারায়ণপুর গ্রামের অন্যতম ধনাঢ্য ব্যক্তি অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী রুবেল হোসেন এবং জাপান প্রবাসী আছির উদ্দীন মৃধা। দু’জনেরই রয়েছে গ্রামে দৃষ্টিনন্দন বহুতল বাড়ি। একইভাবে গ্রামের মৃত নুর আলী মুন্সির ছেলে সামসুল মুন্সি, মোবারক সর্দারের ছেলে মনিরুল ইসলামের রয়েছে গ্রামে দৃষ্টিনন্দন বাড়ি। তারা সকলেই রবিবার ভিজিএফ এর চাল নেয়ার তালিকায় ছিলেন। তাদের সকলের বাড়িতে ভিজিএফের চাল উত্তোলনের টোকেন পৌঁছে দেন ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য রাবেয়া খাতুন। তবে কার্ডধারী এ সকল পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা নিজেরাই জানেন না তারা ভিজিএফের চালের কার্ডধারী। তারা জানান, ২৫ জুলাই উপ-নির্বাচনে বিজয়ী ইউপি সদস্য ইউসূফ আলী সাবেক ইউপি সদস্যের করা ভিজিএফএর তালিকা নিয়ে আপত্তি জানালে ঈদের আগে চাল বিতরণ বন্ধ করে দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)। সাবেক ও বর্তমান ইউপি সদস্যের সমর্থকদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এলে তারা জানতে পারেন স্থানীয় ধনাঢ্য ব্যক্তিদের নামেও ভিজিএফের কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। তালিকায় থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ধনাঢ্য ব্যক্তি জানিয়েছেন, আমরা এর আগে কখনও চাল গ্রহণ করিনি। অথচ পূর্বের তালিকায়ও আমাদের নাম রয়েছে। তবে রবিবার পরিষদে বিতরণকৃত চাল এসব ব্যক্তির কয়েকজন গ্রহণ করে দরিদ্রদের দিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, পূর্বের ওই তালিকার অন্ততঃ ষাটভাগ সদস্য ধনী পরিবারের। তাদের বেশিরভাগই জানেন না তাদের নামে ভিজিএফ কার্ড রয়েছে। ওই চাল তুলে আত্মসাত করেন নারী ইউপি সদস্য রাবেয়া খাতুন। তাদের আরও অভিযোগ তালিকায় থাকা নারায়ণপুর গ্রামের মৃত বায়োজিদ সর্দারের ছেলে মোমিনুর রহমান ছয় বছর আগে মারা গেছেন। একই গ্রামের মৃত ওহেদ আলীর ছেলে আব্দুল হালিম দুই বছর আগে মারা গেছেন। তালিকায় তাদের নাম থাকায় গ্রামের লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, নতুন মেম্বার তো এসব অসঙ্গতি তুলে ধরেছেন। তবুও পুরনো তালিকায় কেন চাল বিতরণ করা হলো ? গ্রামের তুহিনুর রহমান তুহিন ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি। তিনি চৌগাছা বাজারে ব্যবসা করেন। বিগত ইউপি নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন। তার নামেও রয়েছে ভিজিএফএর চালের কার্ড। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার নাম যে তালিকায় রয়েছে এবারই প্রথম জানলাম। অথচ এতদিন আমার নামে চাল উঠে যাচ্ছে। তিনি এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন। একই গ্রামের মিজানুর রহমান, বাবর আলী, আমিনুর রহমান, শাহিনুর রহমান সকলেই এলাকায় অবস্থাশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তাদের সকলের দাবি তারা নিজেরাও জানেন না তাদের নামে ভিজিএফের এসব চাল উঠিয়ে নেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন মুকুল বলেন, মৃত সাবেক ইউপি সদস্যের তালিকা অনুসরণ করে চালের স্লিপ করা হয়েছিল। তবে বিষয়টি প্রকাশ পেলে অনেক ধনী ব্যক্তি চাল নিতে আসেনি। সেই চাল আমরা দুস্থদের মধ্যে বিতরণ করেছি।
×