ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দৃষ্টিপাত নাট্যদলের ‘রাজা হিমাদ্রি’ আজ

প্রকাশিত: ০৭:২৬, ২৭ আগস্ট ২০১৯

 দৃষ্টিপাত নাট্যদলের ‘রাজা হিমাদ্রি’ আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গ্রীক ট্র্যাজিক নাট্যকার সফোক্লিসের অসামান্য নাট্যকর্ম ‘ইডিপাস’ অবলম্বনে দৃষ্টিপাত প্রযোজনা ‘রাজা হিমাদ্রি’ নাটকের মঞ্চায়ন হবে আজ সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার মিলনায়তনে। তিন প্রখ্যাত গ্রীক ট্র্যাজিক নাট্যকারের মধ্যে অন্যতম প্রধান সফোক্লিস, বিশ্ব নাট্যাঙ্গনে যার কীর্তিময় তাৎপর্য বর্তমান শতকেও সমান প্রযোজ্য। তার অসামান্য নাট্যকর্ম ‘ইডিপাস’ অবলম্বনে ‘রাজা হিমাদ্রি’ নাটকের মূল অনুবাদ করেছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব শম্ভু মিত্র। বাংলায় রূপান্তর এবং নির্দেশনা দিয়েছেন ড. খন্দকার তাজমি নূর। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করবেন খন্দকার তাজমি নূর, অধরা প্রিয়া, আবদুল হালিম আজিজ, জাহাঙ্গীর কবির বকুল, রাকিব হাসান ইভন, শ্রেয়া খন্দকার, সুনীল কুমার, সুজন খান, রফিকুল ইসলাম, সুপ্তি হালদারসহ আরও অনেকে। ‘রাজা হিমাদ্রি’ নাটকের গল্পে দেখা যায়, প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টির পূর্বাভাস। পশ্চিমের আকাশে এমনই কালো মেঘ করেছে যা প্রাগ্জ্যোতিষপুর বা হিমালয়ের ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা। রাজা হিমাদ্রির রাজ্যের সকল প্রজাগণ তাই সন্ত্রস্ত এই অশুভ ঝড়ের আগমনে। সকলে ভিড় করেছে রাজপ্রাসাদের সামনে। ভীষণ এক সঙ্কটের সম্মুখীন হিমালয় পুত্র রাজা হিমাদ্রি। পৃথিবীর কোন কিছুকেই যে কখনও ভয় করেনি আজ হঠাৎ কি এক দৈব ভীতিতে আক্রান্ত হয়ে পরে এই অসীম ক্ষমতাধর মহাপুরুষটা। কেন, কি সেই কারণ? যার জন্য তার রাজ্যে আজ এই অশুভ ইঙ্গিত! নির্ভয় এই মানুষটা সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই জন্ম হয় আরও নতুন কিছু প্রশ্নের। হিমাদ্রির চিন্তার প্রধান কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে তার ‘জন্মসূত্র’, এই চিন্তার সূত্রধরে সে ছুটে চলে সমস্ত হিমালয়ের ইতিহাস জুড়ে। সৃষ্টির উৎসমুখ থেকেই পদ্মা মেঘনার স্রোতধারা ভিন্ন গতিপথে নির্ধারণ করে দিয়েছেন স্বয়ং বিধাতা; যেমনি আলো এবং অন্ধকারকে। তাই রাজা হিমাদ্রিও চায় তার জন্মের নেপথ্য ইতিহাসকে অন্ধকার থেকে আলোতে উদ্ভাসিত করতে। যত নিচ জন্মই সে হোক না কেন, তার সেই বৃত্তান্ত সে জানবেই। তার ধারণা রানী ইন্দ্রানী হয়ত বংশের অভিমানে এই হীন জন্মকথার আশঙ্কায় লজ্জিত। কিন্তু হিমাদ্রি জানে যে, সে হিমগিরির ঐশ্বর্যে লালিত, হিমালয় নন্দিনী পার্বতীর সন্তান এবং কালের দেবী তারই ভিন্ন রূপ মাত্র। কখনও তিনি তাকে তুলেছেন উচ্চে, কখনও নামিয়েছেন নিচে, তার বিশ্বাস, স্বয়ং দুর্গতিনাশিনী যার প্রতীকী মাতা অসম্মানে কখনও তার সমাপ্ত হতে পারে না। মহাভারতে মহাবীর কর্ণের জন্মসূত্রও প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল তার সকল আধুনিক অস্ত্রবিদ্যা শিক্ষা তার নিষ্ঠা এবং সততাকে। গুরু পরশুরামের কাছে পরিচয় গোপন করার অপরাধে নির্মম শাস্তি পেয়েছিলেন; যুদ্ধের চরম সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে তার দেয়া দিব্যাস্ত্রের মন্ত্র ভুলে গিয়ে। তাই আজ এই সঙ্কটময় পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়ে আলোর দিশারী রাজা হিমাদ্রি’র প্রত্যাশা, এই যদি হয় মানব জীবনের আদি ইতিহাস তবে কেন সে তার নিজের জন্মবৃত্তান্তের গূঢ় কাহিনীকে অন্ধকার থেকে আলোতে এনে উদ্ভাসিত করবে না? ব্রহ্মার নির্দেশে ব্রহ্মপুত্রের পবিত্র জলে হাতের মাতৃরক্ত ধুয়ে পবিত্র হয়েছিলেন পশুরাম। তাই হিমালয়ের এই মহাসঙ্কটের মাঝে দাঁড়িয়েও হিমাদ্রির বিশ্বাস এবং প্রত্যাশা নিয়তি, হায় নিয়তি আমার বিধিলিপি পূর্ণ করার পথে তুমি আমাকে চালনা কর, আমাকে আমার সম্পূর্ণতার পথে সত্যের পথে আলোর পথে নিয়ে চলো, হে দেব মহেশ্বর, আলো আলো চাই আমার। মানুষের জীবনের অন্তিম বিচার করতে হয় তার শেষ মুহূর্ত দিয়ে, যে গৌরব তাকে নিয়ে যায় সমাধিশয়ানে। একজন নিষ্ঠাবান সৎ চরিত্রের অধিকারী এই হিমালয়ের রাজাকে তাই জানতেই হবে তার জন্ম নির্মাণের নেপথ্য ইতিহাস, কেননা এখানেই নিহীত তার সকল যোগ্যতা তার মনের গতি, রাজ্য পরিচালনা পদ্ধতি, তার জন্ম এবং কর্মের সফলতা। নিয়তি নয়ত সমাজ অথবা সংস্কার যেটা আমাদের অবশ্যই পালনীয় এবং ইতিহাসে যার কোন বিকল্প নেই, এমন কিছু সত্যের অনুসন্ধান করতেই চরম সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে আস্তে আস্তে আবিষ্কার হয় হিমালয়পুত্র রাজা হিমাদ্রির জন্মের নেপথ্য ইতিহাস।
×