ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ডাঃ শাহজাদা সেলিম

শিশু-কিশোরদের হাইপার থাইরয়েডিজম

প্রকাশিত: ০৬:২১, ২৭ আগস্ট ২০১৯

শিশু-কিশোরদের হাইপার থাইরয়েডিজম

থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে সাধারণত দু’ধরনের সমস্যা দেখা যায় যথা গঠনগত ও কার্যগত। গঠনগত সমস্যায় থাইরয়েড গ্রন্থি ফুলে যায়, যেটাকে গয়টার বলা হয়। কার্যগত সমস্যা দু’রকমের হয়। যথা হাইপারথাইরয়েডিজম ও হাইপোথাইরয়েডিজম। হাইপারথাইরয়েডিজমে থাইরয়েড গ্রন্থি বেশি মাত্রায় সক্রিয় হয়ে পড়ে এবং শরীরে থাইরয়েড হরমোনের আধিক্যের লক্ষণ দেখা দেয়। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের এ সমস্যায় বেশি ভুগতে দেখা যায়। কিন্তু কম বয়সীরাও হাইপারথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত হতে পারে। কারণ বিভিন্ন কারণেই শিশু-কিশোরদের হাইপারথাইরয়েডিজম হতে পারে। গ্রেভ্স ডিজিজ এর প্রধানতম কারণ। থাইরয়েড নডিউল, অতিরিক্ত আয়োডিন ইত্যাদিও হাইপারথাইরয়েডিজম করতে পারে। আবার থাইরয়েড গ্রন্থির প্রদাহ সাময়িকভাবে হাইপারথাইরয়েডিজম করে থাকে। হাইপারথাইরয়েডিজমে যে লক্ষণগুলো দেখা যায় : -অস্থিরতা দেখা দেয়। মেজাজ খিটখিটে থাকে। - বুক ধড়ফড় করে । - হৃদস্পন্দনের হার বেড়ে যায়। - দুর্বল লাগে, যে কোন কাজে অনিহা দেখা দেয়। শিশুরা খেলাধুলা করতে চায় না। - শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, তা সত্ত্বেও হাত ঘামে। - খিদে বেড়ে গেলেও ওজন কমতে থাকে। - মেয়েদের মাসিকের সমস্যা হয়। - ত্বক কালো হয়ে যায়। - রক্তচাপ বেড়ে যায়। - হাড়ের ক্ষয় শুরু হয়। বেশি বয়সে অস্টিওপোরোসিস হতে পারে। - চোখ ঠেলে বেরিয়ে আসে। - বন্ধ্যত্ব হতে পারে। - ঘন ঘন পায়খানা হতে পারে। দ্রুত চিকিৎসা না করলে মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে; এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। রোগ শনাক্তকরণ হাইপারথাইরয়েডিজম শনাক্তকরণের জন্য প্রথমেই রোগীর শারীরিক লক্ষণগুলোকে সঠিকভাবে পর্যালোচনা করতে হবে। শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করে নিম্নলিখিত ল্যাবরেটরি পরীক্ষার সাহায্য নেয়া হয়। ক) থাইরয়েড হরমোন পরীক্ষা (FT4, TSH, FT3)। খ) থাইরয়েড এন্টিবডি (TRAb, Antithyroid Antibodies)। গ) থাইরয়েড আল্ট্রাসনোগ্রাম : এটি ক্রমশ খুব গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হিসেবে জায়গা করে নিচ্ছে। ঘ) থাইরয়েড রেডিও আপটেক ও স্ক্যান : নিউক্লিয়ার মেডিসিন কেন্দ্রগুলো এ পরীক্ষাটি করতে সহায়তা করে। হাইপারথাইরয়েডিজমে এটি একটি আদর্শ পরীক্ষা। ফাইন নিডেল এস্পিরেশন: কোন কোন সময় এ পরীক্ষাটি প্রয়োজন হতে পারে। চিকিৎসা হাইপোথাইরয়েডিজমের চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্রে শিশুটির বয়স, হাইপারথাইরয়েডিজমের কারণ এবং বিদ্যমান চিকিৎসা প্রতুলতাকে বিবেচনায় এনে নিম্নলিখিত তিনটির যে কোন একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। - এন্টিথাইরয়েড ওষুধ। - রেডিওএবলাশন। - অপারেশন করে নডিউল দূর করা। বাংলাদেশে সাধারণভাবে শিশু-কিশোরদের মুখে খাবার ওষুধ দিয়ে হাইপারথাইরয়েডিজমের চিকিৎসা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সফলতার হার প্রায় ৫০ শতাংশ। হৃদস্পন্দন কমাবার ওষুধও একই সঙ্গে দেয়া হয়। নিউক্লিয়ার মেডিসিন কেন্দ্রগুলোর সংখ্যা বাংলাদেশে মোট চাহিদার তুলনায় মারাত্মভাবে কম হবার কারণে হাইপারথাইরয়েডিজমের চিকিৎসায় রেডিওএবলাশনকে বাংলাদেশে প্রধানতম চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। যদিও বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই এটিকে মূলধারার চিকিৎসা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এক্ষেত্রে সফলতার হার ৮০ শতাংশের বেশি। থাইরয়েড নডিউল যদি থাকে, বিশেষ করে ৪ সেন্টিমিটারের বেশি ব্যাসের হলে, থাইরয়েড গ্রন্থির অপারেশন করে তা দূর করা সবচেয়ে কার্যকর চিকিৎসা। লেখক : সহকারী অধ্যাপক এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ফোন ঃ ০১৭৩১৯৫৬০৩৩
×