ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষমা চেয়েছে বিমান

উড়োজাহাজে যান্ত্রিক ত্রুটি, বিপাকে হাজীরা

প্রকাশিত: ১০:২৭, ২৬ আগস্ট ২০১৯

 উড়োজাহাজে যান্ত্রিক ত্রুটি, বিপাকে  হাজীরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ৭৭৭-উড়োজাহাজ যান্ত্রিক ত্রুটিতে গ্রাউন্ডেড হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন হজযাত্রীরা। এ ছাড়া সিডিউল ফ্লাইটেও বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই বিলম্ব হচ্ছে ফ্লাইট। এ অবস্থা আরও অন্তত এক সপ্তাহ চলবে বলে জানিয়েছে বিমানের প্রকৌশল বিভাগ। আগামী ২ সেপ্টেম্বরের আগে অচল উড়োজাহাজটি সচল করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন প্রকৌশল পরিচালক সাজ্জাতুর রহিম। এদিকে প্রতিদিনই পূর্ব নির্ধারিত ফ্লাইটে হাজিরা ঢাকায় (দেশে) ফিরতে না পারায় ক্ষমা চেয়েছে বিমান। প্রত্যেক হজযাত্রীকে সময়মতো ঢাকায় ফিরিয়ে আনতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। রবিবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে জনসংযোগ বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার দুঃখ প্রকাশ করেন। গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, এই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার জন্য আমরা দুঃখিত। এ বছর হজযাত্রীদের পরিবহনে বিমান নিজস্ব চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর উড়োজাহাজ ব্যবহার করছে। প্রতিটি ফ্লাইট ৪১৯ যাত্রী পরিবহনে সক্ষম। একটিতে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে অন্য উড়োজাহাজে করে কম সংখ্যক হজযাত্রী দেশে ফিরতে পারছেন। ফলে নির্ধারিত ফ্লাইটে ফিরতে না পেরে অনেকে দুর্ভোগে পড়ছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে কেন হজের জন্য ডেডিক্যাডেট একটি ব্র্যান্ড নিউ ৭৭৭ উড়োজাহাজে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। বিমান এ উড়োজাহাটি দিয়ে হজ ফ্লাইট অপারেট করবে এটা ছিল অনেক আগের পরিকল্পনা। অধিকতর নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য হিসেবে উড়োজাহাজটি হজ ফ্লাইটের জন্য নির্ধারিত করা হয়। এ অবস্থায় গত শুক্রবার রুটিন ইন্সপেকশানের সময় ইঞ্জিনে বড় ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ায় এটি গ্রাউন্ডেড হয়ে পড়ে। এতে সৌদি থেকে হাজীদের ফিরিয়ে আনার কাজে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটে। ৪১৯ আসনের পরিবর্তে এয়ার এশিয়া থেকে লিজে আনা ছোট উড়োজাহাজ দিয়ে সিডিউল ফ্লাইট পরিচালনা করে কিছু হাজী আনা হচ্ছে। এতে জেদ্দা বিমানবন্দরের হাজীরা এসে আটকা পড়েন। তাদের সেখানেই ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এদিকে ঢাকা থেকে বিদেশগামী বিমানযাত্রীরাও প্রতিদিনই সিডিউল বিলম্বের শিকার হচ্ছেন। তারা লাগেজ নিয়ে বিমানবন্দরের চেকইন কাউন্টারে এসে জানতে পারেন ফ্লাইট ডিলে অথবা বাতিল। উপায় না দেখে তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে গালিগালাজ করে বিমানকে। তখন তারা জানতে চায় ফ্লাইট বাতিলের তথ্য আগে নোটিস করা হলে তো বিমানবন্দরে এসে ভোগান্তির শিকার হতে হতো না। রবিবারও এমন একটি ফ্লাইট বাতিলে চার শতাধিক যাত্রী ভোগান্তির শিকার হন। সন্ধ্যা ৬টায় জেদ্দাগামী ফ্লাইটের যাত্রীরা বিমানবন্দরে জানতে পারেন ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। তখন তারা হৈচৈ করতে থাকেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা বিমানকে গালিগালাজ করতে থাকেন। এ সময় হাসান নামের এক যাত্রী বলেন, বিমান যদি আগেই জানিয়ে দিতো তাহলে এখানে আসতাম না। এখন তারা মুখে মুখে স্যরি বলছে। এই স্যরি বলাতে আমাদের কি ভোগান্তি দূর হবে। আলম নামের অপর যাত্রী জানিয়েছেন, তিনি বাসায় যেতে রাজি না হওয়ায় তাকে উত্তরার একটি হোটেলে নিয়ে যাওয়া যায়। বিমানের উচিত ছিল আগেই ফ্লাইট বাতিলের তথ্য যাত্রীদের জানিয়ে দেয়া। জানতে চাইলে এয়ারপোর্ট সার্ভিস মহাব্যবস্থাপক নুরুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, ওই ফ্লাইটটি ডিলে ঘোষণা দিয়ে আজ (সোমবার) দুপুর একটায় জেদ্দার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ার রি-সিডিউল করা হয়েছে। এদিকে যাত্রীদের ভোগান্তিতে দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন বিমান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে বিমানের পক্ষে তাহেরা খন্দকার বলেন, বিমান তার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এবং নিজ খরচে হাজীদের প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা প্রদান করে দ্রুত ঢাকায় আনার ব্যবস্থা করছে। হাজীদের আত্মীয়-স্বজনকে উদ্বিগ্ন না হতে বিশেষভাবে অনুরোধ করছে। সাময়িক এ অসুবিধার জন্য বিমান আন্তরিকভাবে সংশ্লিষ্ট সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। তবে অচল বিমানটি কবে নাগাদ ঠিক হবে তা জানাতে পারেননি তাহেরা খন্দকার। যারা আসতে পারছেন না তাদের কী প্রক্রিয়ায় ফেরত আনা হবে তাও তিনি জানাতে পারেননি। এদিকে প্রকৌশল শাখার একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী বৃহস্পতিবার অচল উড়োজাহাজটির ইঞ্জিন আনার পর সেটা সংযোজন করা হবে। ইঞ্জিন পাল্টাতে কমপক্ষে আরও ৩/৪ দিন লাগতে পারে। সে হিসেবে আগামী ২ সেপ্টেম্বরের আগে কিছুতেই উড়োজাহাজটি উড্ডয়নযোগ্য করার সম্ভাবনা নেই। ওই পর্যন্ত বিমানের সিডিউল ও হজ ফ্লাইট বিলম্বের শিকার হবে বলে জানিয়েছেন একজন ম্যানেজার। তার মতে, বিমানের প্রকৌশল শাখার গাফিলতি ও উদাসীনতার দরুণ বার বার একের পর এক উড়োজাহাজে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। গত দু’বছরে কমপক্ষে ৫টি উড়োজাহাজে বড় ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটির ঘটনা ঘটেছে। কেন এমন ন্যক্কারজনক পরিস্থিতি জানতে চাইলে প্রকৌশল শাখার একজন মহাব্যবস্থাপক বলেন, বর্তমান পরিচালকের পেশাগত দক্ষতা ও অভিজ্ঞতায় যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। কিভাবে বোয়িংয়ের নতুন নতুন উড়োজাহাজগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়, সে সম্পর্কে তার ধারণাই নেই। যে কারণে অধস্তনকেও সঠিকভাবে কাজে লাগাতে চরমভাবে ব্যর্থ। উল্লেখ্য, ১৭ আগস্ট থেকে হাজীদের ফিরতি ফ্লাইট শুরু হয়েছে, চলবে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। রবিবার পর্যন্ত ৯৯টি ফিরতি ফ্লাইটে ৩৫ হাজার ৯৯২ জন দেশে ফিরেছেন।
×