ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের বিশাল শোডাউন

দাবি ন মানিলে বর্মাত ন যাইয়্যুম

প্রকাশিত: ১০:২১, ২৬ আগস্ট ২০১৯

দাবি ন মানিলে বর্মাত ন যাইয়্যুম

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সঙ্কট সৃষ্টির দুই বছর পূর্তিতে রবিবার উখিয়ার কুতুপালংয়ে আয়োজিত বিশাল শোডাউনে রোহিঙ্গারা আওয়াজ তুলেছে এই বলে যে, ‘আঁরার দাবি ন মানিলে বর্মাত ন যাইয়্যুম (আমাদের দাবি মানা না হলে বার্মায় যাব না)।’ রোহিঙ্গারা এ শোডাউনকে তাদের দাবি আদায়ের মহাসমাবেশ বলে আখ্যা দিয়েছে। অবশ্য এ সমাবেশে হাজার হাজার রোহিঙ্গা অংশ নেয়। যে সংখ্যা লাখের কাছাকাছি হবে বলে ধারণা পাওয়া গেছে। অপরদিকে রোহিঙ্গাদের পক্ষে যেসব দাবি উত্থাপন করা হয়েছে সেসব দাবি মিয়ানমার সরকার মেনে নেয়াতো দূরের কথা, আলোচনায়ও আনবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কেননা, মিয়ানমার পক্ষ দুদেশের মধ্যে আলোচনা বা পত্রালাপে এমনকি বিশ্ব ফোরামে রোহিঙ্গা শব্দটিও ব্যবহার থেকে বিরত রয়েছে। রবিবার ছিল ২৫ আগস্ট। ২০১৭ সালের এই তারিখের গভীর রাতে রাখাইন রাজ্য জুড়ে বর্বর সেনা অভিযান শুরু হয়। সেনা সদস্যদের নির্বিচারে গুলি ও হত্যাযজ্ঞে অনেকে প্রাণ হারানোর ঘটনায় ভীতসন্ত্রস্ত রোহিঙ্গারা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা শুরু করে। বাংলাদেশ সরকার সীমান্ত খুলে দেয়ায় রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। ওই সময়ে টানা দীর্ঘ সময় রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ অব্যাহত থাকে। একপর্যায়ে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৭ লাখেরও বেশি। ফলে নতুন ও পুরনো মিলে এবং এদের পরিবারে নতুন সদস্য আগমনের ফলে বর্তমানে বাংলাদেশে রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখেরও বেশি। এদের মধ্যে ১১ লাখের বেশি সরকারের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত হয়েছে। রবিবার উখিয়ার কুতুপালং পাহাড় সংলগ্ন ক্যাম্প ও সমতল ভূমিতে এ সমাবেশ করে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি, ভয়েস অব রোহিঙ্গা, রোহিঙ্গা আরাকান সোসাইটি এ তিন সংগঠনের ব্যানারে। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন রোহিঙ্গাদের এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে কোন বাধা দেয়নি। ফলে ‘উই আর রোহিঙ্গা, নট বাঙালি’সহ নানা স্লোগানে সকাল থেকে কুতুপালং চার নং ক্যাম্পের বর্ধিতাংশে সমবেত হতে থাকে আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যরা। এছাড়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানববন্ধনও করে তারা। রোহিঙ্গাদের নিজস্ব রীতির সাদা পোশাকে সমবেত হয় তারা। হাতে ছিল ব্যানার, পোস্টার ও প্ল্যকার্ড। সকাল ৯টায় সমাবেশ শুরু হয় এবং তা বেলা ১২টা পর্যন্ত চলে। সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মহিবুল্লাহসহ এ জনগোষ্ঠীর কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ। তারা এ দিনটিকে রাখাইনে গণহত্যা দিবস হিসাবে পালন করে আসছে। সমাবেশে তাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। পাশাপাশি মিয়ানমারে তাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়াসহ তাদের প্রদত্ত ৫ দফা দাবি নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সমাবেশে রোহিঙ্গারা নিজেদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণা দেয় তাদের ভাষায়। নিজেদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার দৃঢ় প্রত্যয়ও ব্যক্ত করা হয়। দাবি মেনে নেয়ার মুহুর্মুহু স্লোগানে সমাবেশস্থল প্রকম্পিত হয়। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাতে রোহিঙ্গাদের একটি অংশ সশস্ত্র সংগঠনের সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা (আরসা) রাখাইনে ২১টি নিরাপত্তা চৌকিতে একই সময়ে হামলে পড়ে। এ ঘটনার জের ধরে সন্ত্রাসী আটকের নামে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা রোহিঙ্গাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নির্যাতন শুরু করে। মিয়ানমার সেনা বিজিপি ও উগ্রপন্থী রাখাইন যুবকদের নির্যাতন, অত্যাচার জুলুম, ধর্ষণ, হত্যাসহ নিপীড়নের কারণে রোহিঙ্গারা এ দেশে পাড়ি জমায়। মিয়ানমার-বাংলাদেশ সরকার কূটনৈতিক পর্যায়ে ব্যাপক আলোচনার পর মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাংলাদেশ সরকারকে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু দফায় দফায় চেষ্টার পরও ষড়যন্ত্রসহ নানা কারণে কোন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারের ফেরত পাঠানো যায়নি। রবিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে উখিয়ার কুতুপালংয়ের ক্যাম্প এক্সটেনশন-৪ এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে আসা রোহিঙ্গাদের পদচারণায় কানা কানায় পরিপূর্ণ হয় সমাবেশস্থল। সমাবেশে অংশগ্রহণের উদ্দেশে সকাল থেকেই কুতুপালং ক্যাম্পের এক্সটেনশন ফোর ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা দলে দলে পাহাড়ের পাদদেশে জড়ো হতে থাকে। উপস্থিত প্রায় ২০-২৫ হাজার রোহিঙ্গার এই সমাবেশকে ঘিরে এলাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছিল। সমাবেশে অংশগ্রহকারী মোহাম্মদ সেলিম নামে একজন রোহিঙ্গা নেতা বলেন, বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যই এই দিনে সমাবেশ করে থাকেন তারা। সমাবেশে অনেক রোহিঙ্গাই টি-শার্ট পরে এসেছেন, যেখানে লেখা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস।’ রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকার নিশ্চিতের দাবি পূরণ হলেই কেবল তারা মিয়ানমার ফেরত যাবে বলে জানিয়ে সমাবেশে দাবি তোলা হয়, মিয়ানমারের নাগরিকত্বের বিষয়ে যেন রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা করে মিয়ানমার সরকার। সমাবেশে অংশগ্রহণকারী নেতারা বলেন, তারা নিজেদের নাগরিক ও মানবাধিকার নিশ্চিত করার যেসব দাবি তুলেছে সেগুলো পূরণ হলেই কেবল মিয়ানমারে ফেরত যাবে রোহিঙ্গারা। তারা আরও বলেন, ‘দরকার হলে বাংলাদেশে আজীবন থাকব। দাবি পূরণ না হলে মিয়ানমারে ফিরে যাবার কোন ইচ্ছা নাই।’ আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস এ্যান্ড হিউম্যান রাইটস বা এআরএসপিএইচ, ভয়েস অব রোহিঙ্গা যৌথভাবে রবিবারের এ কর্মসূচী পালনে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে ক্যাম্পের বিভিন্ন ব্লক মাঝিদের প্রয়োজনীয় ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড সরবরাহ করা হয়। তবে বিশাল আয়োজন, ব্যানার, টি-শার্ট, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড ও খরচপাতি ইত্যাদির জোগানদাতা ও খরচ বহনকারী কারা- এ ব্যাপারে কোন রোহিঙ্গা মুখ খোলেনি। ফলে বরাবরই আড়ালে থেকে যাচ্ছে ওসব ইন্ধনদাতা ও উস্কানিদাতারা। উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা রশিদুল্লাহ, নুরুল বশর ও অলী হোসেন বলেন, আজ রোহিঙ্গা নির্যাতনের দুই বছর, কিন্তু আমাদের ভাগ্যের কোন উন্নয়ন হয়নি। উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হেডমাঝি আবু তাহের বলেন, ক্যাম্প অভ্যন্তরের মসজিদগুলোতে দোয়া করা হয়েছে। এবার প্রায় ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসে। নতুন পুরনো মিলিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংখ্যা এখন ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৭৬ জন। এরা উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার পাহাড়ে আশ্রয় নেয়। উখিয়ায় ২৩টি এবং টেকনাফে ৯টি ক্যাম্প আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন না হওয়ায় স্থানীয়রা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। ক্যাম্পের বাইরেও দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রায় তিন লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। উখিয়ার পালংখালী এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ছমুদা খাতুন জানায়, মিয়ানমারের সেনা, পুলিশ, নৌ সদস্যরা রোহিঙ্গাদের যেভাবে হত্যা নির্যাতন করেছে, আর বাংলাদেশের সেনাসহ সবধরনের সদস্যরা রোহিঙ্গাদের মুখে ভাত ও আশ্রয় দিয়েছেন। তারপরও টেকনাফের যুবলীগ নেতা ওমর ফারুকসহ একাধিক স্থানীয়কে খুন করেছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। সমাবেশে ঘোষণা করা দাবি হলো, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে মেনে নিতে হবে। দিতে হবে নিরাপত্তা ও অবাধে চলাচলের স্বাধীনতা। নিজেদের হারানো ভিটে-মাটি ফেরত ও ২৫ আগস্টের নির্যাতনের বিচার করতে হবে। আরকান রোহিঙ্গা সোসাইটির নেতা মাস্টার মুহিব উল্লাহ সমাবেশে বলেন, মিয়ানমার সেনা ও মগদের নির্যাতনে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে এ মহাসমাবেশ করেছে রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গারা এখন ঐক্যবদ্ধ হয়েছে শুধু অধিকার ফিরে পেতে। আমরা নিজেদের দেশে ফিরতে চাই। কিন্তু অধিকার ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ছাড়া কখনো ফিরবো না। মিয়ানমার সরকারের ওপর আস্থা রাখা বোকামি। রোহিঙ্গা নেতা আব্দুর রহিম বলেন, বাংলাদেশে থাকার ইচ্ছে আমাদের নেই। তবে দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা ফিরে গেলে আবারও নির্যাতন চালাতে পারে। সমাবেশে আসা রোহিঙ্গা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যে দাবিগুলো দেয়া হয়েছে তা আমাদের অধিকার। মিয়ানমার সরকার আমাদের অধিকার দিতে রাজি নয়। তাই এত চলনা করছে। দাবি না মানা পর্যন্ত মিয়ানমারে ফিরে যাব না। সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন রোহিঙ্গা নেতা আবদুর রহিম, মোঃ ইলিয়াসসহ অন্যরা। শূন্য রেখায় এখনও ৩৯১০ রোহিঙ্গা এদিকে, বান্দরবানের শূন্যরেখায় অর্থাৎ সীমান্তের ওপারে তুমব্রু এলাকায় এখনও পর্যন্ত ৬৩৩ পরিবারের ৩৯১০ জন রোহিঙ্গা অবস্থান করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢল নামার পর প্রথমে এ স্থানে ৬ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছিল। কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফের বিভিন্ন পয়েন্ট ছাড়াও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির চাকঢালা, বড় ছনখোলা, আশারতলী, শাপমারা জিরি, ঘুমধুম, কোনারপাড়া, বাইশপাড়ি ও দোছড়ি সীমান্ত দিয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। ওই সময়ে প্রথম দফায় সেখান থেকে ১২ হাজার রোহিঙ্গাকে উখিয়ার বালুখালীতে স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তীতে অন্যান্য পয়েন্ট থেকেও রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু সীমান্তের ওপারে শূন্যরেখায় ৬ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়। এদের জন্য তখন থেকে ত্রাণসামগ্রী যোগান হচ্ছে এপার থেকে। মাঝখানে মিয়ানমার সরকার তাদের নিজ নিজ ভিটেমাটিতে মাইকিং করার পর কিছু রোহিঙ্গা চলে যায়। কিন্তু এখনও ৩ হাজার ৯০১ জন অবস্থান করছে। নাইক্ষ্যংছড়ির উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এদের জন্য নিয়মিত রসদ যোগান দেয়া হচ্ছে। শোডাউনের পর ॥ রবিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত উখিয়ার কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গাদের বিশাল শোডাউনের পর বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন মহলে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা আরও বেড়েছে। কেননা, রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে যেসব দাবি উত্থাপন করে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া থেকে বিরত রয়েছে সেসব দাবি মানার বিষয়টি মিয়ানমার সরকারের ওপর বর্তায়। যারমধ্যে অন্যতম রয়েছে তাদের নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়টি। নাগরিকত্বের বদলে রোহিঙ্গাদের দেয়া হচ্ছে এনভিসি (ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড)। এছাড়া রোহিঙ্গারা তাদের হারানো ভিটেমাটি ফেরত পেতে চায়, চায় সম্পদহানির ক্ষতিপূরণ। আরও চায় সে দেশে বিভিন্ন শিবিরে রাখা লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে ছেড়ে দিয়ে অবাধ চলাফেরার অধিকার। এছাড়া রাখাইন রাজ্যে জাতিসংঘের সেনা মোতায়েনও চেয়েছে রোহিঙ্গারা। অবস্থাদৃষ্টে পরিলক্ষিত হয়েছে এ পর্যন্ত মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গারা এখানে থেকে বিভিন্ন সময়ে যেসব দাবি দিয়েছে তার একটিও মেনে নেয়নি। আগামীতেও মেনে নেবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ, মিয়ানমার সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করেছে। তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। বুলডোজারের মাটির নিচে চাপা দেয়া হয়েছে রোহিঙ্গা পল্লীগুলো। এখন বিশ্বচাপের মুখে পড়ে মিয়ানমার তাদের আদৌ প্রত্যাবাসন শুরু করলে রাখা হবে নবনির্মিত বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে। যদিও সেটা মিয়ানমারের ব্যাপার। কিন্তু এতে রোহিঙ্গারা এভাবে সেখানে যেতে রাজি নয়। অথচ, বাংলাদেশের জন্য এত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা বোঝার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরা আশ্রিত হিসাবে চিহ্নিত হলেও হেন কোন অপকর্ম নেই যেটাতে তারা জড়িত হচ্ছে না। গত টানা দুবছর সরকারী বেসরকারী পর্যায়ে এদের জন্য প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ত্রাণসামগ্রী সরবরাহ দেয়া হয়েছে। এখন যোগানের প্রক্রিয়ায় ছেদ পড়ছে। বিশেষ করে বিদেশী ত্রাণসামগ্রীর যোগান কমে আসছে। ফলে বাংলাদেশ পক্ষ এখন শঙ্কিত। প্রায় তেরলাখ ভিনদেশীদের তিন বেলা খাওয়ানো, আশ্রয় দেয়া যেখানে সহজসাধ্য কোন ব্যাপার নয়, সেখানে বাংলাদেশ সরকার এখনও তা করে যাচ্ছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন করা না গেলে আগামীতে মহা সঙ্কট সৃষ্টির আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ মহলে। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য সরকার পক্ষ আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে আরও জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে পাশে থাকবে জার্মানি ॥ রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাশাপাশি জাতিসংঘকে সহায়তা করার জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করবে জার্মানি। রবিবার ঢাকার জার্মান দূতাবাস এক বার্তায় এ তথ্য জানায়। ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা শরণার্থী সঙ্কটের দ্বিতীয় বছর হিসেবে চিহ্নিত। মিয়ানমার রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে টার্গেট করায় সহিংসতা থেকে ৭ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি শিশু, নারী ও পুরুষ পালিয়ে এসেছেন। জার্মান সরকার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে সহায়তা দিয়ে আসছে। এখনও পর্যন্ত ৯৫ দশমিক ৫ মিলিয়ন ইউরো রোহিঙ্গাদের সহায়তা দেয়ার জন্য জার্মান সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও বার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা আসতে শুরু করে। সেই ঘটনার দুই বছর পূর্তি হলো রবিবার।
×