ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সীমান্তে চোরাচালান বেড়েছে, অভাব নজরদারির

প্রকাশিত: ১০:০৫, ২৬ আগস্ট ২০১৯

 সীমান্তে চোরাচালান বেড়েছে, অভাব নজরদারির

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ প্রায় ৪০ কেজি গাঁজা, কয়েক কোটি ইয়াবা, লাখ লাখ বোতল ফেনসিডিল, ১০ কেজির চেয়ে বেশি গুঁড়ো নেশা যা হেরোইন নামে পরিচিত, সাম্প্রতিক কালে সারেংপুর থেকে ৫ কেজি ৩ গ্রাম হেরোইন আটক হয়। এখান থেকে পদ্মা নদীর ওপাড়ে মুর্শিদাবাদের লালগোলা। কয়েক হাজার নেশা জাতীয় ইনজেকশন, শত শত অস্ত্র ও বিস্ফোরকের চালান। যার মূল্য প্রায় হাজার কোটি টাকার ওপর ছাড়িয়ে যাবে। এভাবে মাদক আসছে বরেন্দ্র এলাকায়। এই চিত্র চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সংলগ্ন রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ীসহ তিন চারটি থানার বা উপজেলার। এর পাশাপাশি মাদক ও অস্ত্রের বড় বড় কয়েক হাজার চালান এসেছে এই জেলায়। যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়িয়ে চলে গেছে গন্তব্যে। কয়েক মাসের এই চিত্র থেকে অনুমান করা যায় কিভাবে মাদক, অস্ত্র ও বিস্ফোরকের ছড়াছড়ি হচ্ছে। এইসব সামগ্রী নিয়ে যাওয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানের লোকজন মাসের পর মাস চাঁপাইনবাবগঞ্জে এসে পড়ে থাকেন। এদের সহযোগিতা করে শহরের বেশ কয়েক জন হুন্ডি ব্যবসায়ী। এদের হোটেলসহ নানা ধরনের ব্যবসা রয়েছে। তবে এরা মূলত পাচারকারী। এরা দীর্ঘদিন ধরে হুন্ডি ও পাচারের ব্যবসা করায় সরকারের তালিকায় নাম উঠে এসেছে। এরাই মূল মাদক ও অস্ত্র, বিস্ফোরক ব্যবসায়ী। তাদের মধ্যেই দেশের বিভিন্ন এলাকার পাচারকারীরা মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে এসে এদের হাতে তুলে দিয়ে অবৈধ মালামালের অর্ডার দিয়ে থাকে। এরাই সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এদের অবাধ যাতায়াত আছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন কোন প্রভাবশালী সদস্যের সঙ্গে। এরা শুধু সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করে না। এদের আওতায় রয়েছে সোনামসজিদের মতো পোর্ট। তারা বিভিন্ন বৈধ মালের আড়ালে এইসব পণ্য নিয়ে আসে। এরাই শহরের সবচেয়ে বড় গুণীমানী ব্যক্তি। এদের অবাধ যাতায়াত রয়েছে সর্বত্র। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এসব সদস্যরা চিন্তা করে তারাই একদিন জেলার নিয়ন্ত্রণ নেবে। তার জন্য যা যা করার তাই করছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য এক সভায় বক্তৃতা থেকে উঠে আসে, বর্তমানে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গামী ছাত্রদের মধ্যে ইদানীং রাজনীতি করার মানসিকতা নষ্ট হলেও এক শ্রেণীর আমলাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে রাজনীতিতে আসার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের অনেকেই সেই ভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে। যে কোন সময় চাকরি ছেড়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজনীতিতে আসবেন। তারাই এমপি হয়ে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ নেবেন। এই ধরনের আমলারা এখন থেকেই সরাসরি বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকা-ে মদদ দিচ্ছে। তাদের জন্যই বিভিন্ন চোরাকারবারির সংস্থা চুটিয়ে ব্যবসা করছে। তারাই নিয়ে আসছে বিভিন্ন ধরনের মাদক, অস্ত্র ও বিস্ফোরক। যার কারণে সামাল দেয়া যাচ্ছেনা মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ীদের। এমন কোন দিন বা রাত নেই যে এই সীমান্ত পথে অস্ত্র, বিস্ফোরক ও মাদক আসছে না। ধরা পড়ছে চোরাকারবারিরা কিছু সাধু আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তার জন্য। তবে ইদানীং চোরাকারবারি চক্র খুবই সচেতনভাবে মালামাল নিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করছে। তারা একটু বাধা বা বিপত্তি দেখলেই মালামাল ফেলে সীমান্ত পথে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছে। যার কারণে গত ছয় মাসে যে সব মালামাল আটক হয়েছে তার সঙ্গে চোরাকারকারিরা ধরা পড়েনি। তারা নিরাপদে সীমান্ত পেরিয়েছে মালামাল ফেলে দিয়ে যায়। যার কারণে হঠাৎ করে সীমান্ত পথে চোরাচালান বেড়ে গেলেও কোন লোক বা ব্যক্তি ধরা পড়ছেনা। এ ছাড়াও সোনামসজিদ পোর্টে নানা ধরনের রেস্ট্রিকশন ও গ-গোলের কারণে কোন নিয়ম কানুন চালু হচ্ছেনা। এই ফাঁকে চোরাকারবারিরা নানা ধরনের অবৈধ পণ্য বৈধ পণ্যের আড়ালে নিয়ে আসছে। অপরদিকে সীমান্ত পথে যে সব অবৈধ পণ্য আসছে তা গুদামজাত করা হচ্ছে গ্রামীণ পরিবেশে। সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামগুলোর বাড়ির কয়েকটি রুম চড়া মূল্যে ভাড়া নিয়ে চোরাকারবারিরা তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এইসব মালামাল গুদাম থেকে মওকা বুঝে অবৈধ পণ্য গন্তব্যে পাঠাচ্ছে। ব্যবহার করছে ট্রাক, বাস, মাইক্রোসহ নানা ধরনের যানবাহান। এইসব মালামাল পারাপারে খাকি পোশাক পরিয়ে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর লোক বানিয়ে সহযোগিতা নিচ্ছে। তাই অবিলম্বে সীমান্ত সুরক্ষার জন্য অভ্যন্তরভাগে তদারকি ও তল্লাশি জোরদার করার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
×