ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তদন্ত শুরু ॥ শাস্তি দাবি

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে পাঁচ ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৯:০২, ২৬ আগস্ট ২০১৯

 প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে পাঁচ ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ২৫ আগস্ট ॥ তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণীর একাধিক ছাত্রীকে ছুটির পর নিজের কক্ষে ডেকে যৌন হয়রানির অভিযোগে তদন্তে নেমেছে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ আবুল বাসার। রবিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তদন্ত করে তিনি অন্তত পাঁচ ছাত্রীকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ পেয়েছেন বলে এ প্রতিনিধিকে নিশ্চিত করেছেন। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার উমেদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ রেজাউল করিমের জঘন্যতম অপকর্মে ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন। দীর্ঘদিন এমন অপকর্ম করে আসছিলেন রেজাউল করিম; এমন দাবি সেখানকার অভিভাবকদের। সবশেষ কোরবানির আগে চতুর্থ শ্রেণীর দুই ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করলে তারা বাবা-মায়ের কাছে ঘটনা খুলে বললে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। শনিবার বিকেলে অভিভাবকসহ স্থানীয় শত শত মানুষ স্কুলে বিচার চাইতে জড়ো হয়। বাগ-বিত-ার এক পর্যায় শিক্ষক রেজাউল করিম অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে প্রথমে কলাপাড়া হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক বরিশাল প্রেরণ করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু রেজাউল করিমকে গ্রেফতার করেনি। চিকিৎসক মোঃ আশরাফুল ইসলাম জানান, শিক্ষক রেজাউল করিম হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল রেফার করা হয়েছে। একাধিক অভিভাবকের অভিযোগ, স্কুল ছুটির পর অন্য শিক্ষকরা যখন চলে যেতেন তখন শ্রেণী কক্ষের দরজা, জানালা বন্ধ করার কথা বলে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করত। বেঞ্চে শুইয়ে নির্যাতনের চেষ্টা করত। কোরবানির আগের ঘটনা। চতুর্থ শ্রেণীর এক ছাত্রী জানায়, স্যার আমাকে ক্লাসের জানালা বন্ধ করতে বলে। আমি জানালা বন্ধ করে বের হচ্ছি। এ সময় স্যার (প্রধান শিক্ষক) আমাকে জাপটে ধরে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হাত দেয়। এছাড়া আরও খারাপ কিছু (ধর্ষণ) চেষ্টা করে। সে চিৎকার দিলে তার মুখ চেপে ধরে, পকেট থেকে পাঁচ শ’ টাকার নোট বের করে কাউকে বলতে নিষেধ করে। এ ছাত্রীর অভিভাবক জানায়, মেয়ে বাড়িতে গিয়ে সব খুলে বলে। ভয়ে দুইদিন স্কুলে পাঠাইনি। স্কুল ম্যানেজিং কমিটির কাছে নালিশ করলেও তারা কোন ব্যবস্থা না নিয়ে ঘটনা চেপে যেতে বলে। পঞ্চম শ্রেণীর একাধিক ছাত্রী বলে, তারা যখন তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ত তখন থেকে স্কুৃল ছুটির পর স্যার রুমে আটকে আমাদের শরীরে হাত দিত। তখন আমরা কিছু বুঝতাম না। এখন বুঝতে পারছি। কেউ প্রতিবাদ করলে টাকায় ম্যানেজ করতে চায়। পরীক্ষায় ফেল করানোর ভয় দেখানো হতো। অভিভাবক গোলাম মোস্তফা জানান, প্রধান শিক্ষক ছোট্ট ছোট্ট ছাত্রীদের সঙ্গে যে বর্বর আচরণ করেছে তা ক্ষমা করার মতো নয়। তাদের সন্তানরা স্কুলে যদি নিরাপদ না থাকে তাহলে কোথায় যাবেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোঃ মুসা খান বলেন, তাদের কাছেও অনেক অভিভাবক অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরাও জানেন। প্রধান শিক্ষককে সতর্ক করে দেয়া হয়। এখন অনেক অভিভাবক অভিযোগ করতে এসেছে। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ রেজাউল করিম এসব অভিযোগের কোন উত্তর দেননি। তার সামনে আঙুল উঁচিয়ে পর্যন্ত ছাত্রীরা অভিযোগ করেছেন। এর পরই তিনি অসুস্থবোধ করেন। কলাপাড়ার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, তদন্ত চলছে। পাঁচ ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ পেয়েছেন। এক অভিভাবক লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানালেন তিনি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মুনিবুর রহমান জানান, তদন্ত চলছে।
×