ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘শেখ সাদী’ নাটকটি আমার জন্য চালেঞ্জ ॥ এইচ আর অনিক

প্রকাশিত: ০৮:৫৬, ২৬ আগস্ট ২০১৯

 ‘শেখ সাদী’ নাটকটি আমার জন্য চালেঞ্জ ॥ এইচ আর অনিক

এই সময়ের অত্যন্ত মেধাবী একজন মঞ্চশিল্পী এইচ আর অনিক। বাংলাদেশের তরুণ মঞ্চশিল্পীদের মধ্যে অন্যতম অনিক একাধারে অভিনেতা, নাট্যকার, নির্দেশক। চন্দ্রকলা থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের ঢাকা মহানগরের নির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আদ্যোপান্ত মঞ্চশিল্পী হলেও টিভি নাটক রচনা ও নির্দেশার পাশাপাশি অভিনয় করে থাকেন। তার রচিত এবং নির্মিত অসংখ্য টিভি নাটক বিটিভিসহ বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচারের পর প্রশংসিত হয়েছে। নতুন খবর হচ্ছে অনিক নির্দেশিত এবং অভিনীত মনোড্রামা ‘শেখ সাদী’ মঞ্চে আনছে চন্দ্রকলা থিয়েটার। নতুন এই নাটক এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে সম্প্রতি তার সঙ্গে কথা হয়। এই সময়ে ‘শেখ সাদী’ নাটক মঞ্চায়নের প্রেক্ষাপট কি? এইচ আর অনিক : পোশাককে খাবার খাওয়ানোর গল্প আমরা সবাই জানি। বর্তমান সময়েও গুণীজনদের কদর ক্রমশ কমে যাচ্ছে। আমি মনে করি একেকজন গুণীজন হচ্ছেন- একেকটি লাইব্রেরি। তাই তাদের জীবদ্দশায় মূল্যায়ন করা উচিত। মানুষ ক্রমশ বই পড়া থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এই সময়ের প্রেক্ষাপট ‘শেখ সাদী’ নাটকের সঙ্গে অনেকটাই মিল রয়েছে। কি আছে ‘শেখ সাদী ’নাটকে? এইচ আর অনিক : অপূর্ব কুমার কুন্ডুর রচনায় ফজরের আজান থেকে শুরু করে ভোরের আলো ফোটার মধ্যবর্র্তী সময়ে শেখ সাদী অপেক্ষা করছেন দিল্লী থেকে আগত মুসাফিরদের জন্য। এই স্বল্প সময়ের অপেক্ষা যে কি দীর্ঘ সময় এর অনুভূতি তার রূপ নাটকটিতে তুলে ধরা হয়েছে। নাটকটি মূলত শেখ সাদীর জীবন আশ্রিত। যাপিতজীবন, কর্মের মূল্যায়ন এবং তার বিশ্বভ্রমণ মূলত শেখ সাদী নাটকে নাট্যকার, অভিনেতা, নির্দেশক শেষ পর্যন্ত ইতিহাসের আলোকে শেখ সাদীকে দেখার চেষ্টা করেছেন। মঞ্চে একক অভিনয় অনেকটাই চ্যালেজিং, ‘শেখ সাদী ’নাটকে সেই চ্যালেঞ্জ কতটা উতরে যেতে পারবেন বলে মনে করেন? এইচ আর অনিক : আমিও তাই মনে করি। আমি চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দও করি। ‘শেখ সাদী’ নাটকটি আমার জন্য অবশ্যই চালেঞ্জ। আর আমাকে এই চ্যালেঞ্জ নিতে সাহস জুগিয়েছেন আইটিআইএর সম্মানিক সভাপতি রামেন্দু মজুমদার, উপমহাদেশের বিখ্যাত নাট্যকার মনোজ মিত্র, একক নাটকের বরপুত্র গৌতম হালদার। তারা আমাকে অভিনয়ের বিভিন্ন দিক নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। ‘শেখ সাদী’ সম্পর্কে অনেকের অনেক কিছু জানা অনেকের অনেক অজানা সবটাই দেখা মিলবে এই নাটক মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে। এটা আমাদের জন্য অনেকটাই আনন্দের। আর সব দর্শক আসবেন আমাদের এই আনন্দকে অর্থপূর্ণতা পাইয়ে দিতে এবং প্রেরণা দিতে। আশা করি দর্শকদের নাটকটি ভাল লাগবে। আগামী ২৯ আগস্ট বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬-৩০ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে ‘শেখ সাদী’ নাটকটি মঞ্চস্থ হবে। নির্দেশক হিসেবে নাটকে আপনি কোন ফর্ম ব্যবহার করেছেন, কেন? এইচ আর অনিক : নাটকে আমি প্রায় ১০টি চরিত্রে অভিনয় করেছি। আমি বর্ণনা রীতির মাধ্যমে বিভিন্ন চরিত্রের রূপদান করেছি। কিভাবে মুহূর্তেই একটি চরিত্র থেকে আরেকটি চরিত্রে ট্রান্সফার হওয়া যায় সেই দিকটিও নাটকে আছে। চন্দ্রকলা থিয়েটারের অন্য নাটকের খবর কি? এইচ আর অনিক : চন্দ্রকলা থিয়েটার এই বছর ‘দ্বৈত মানব’ নামে আরও একটি নতুন নাটক মঞ্চে এনেছে। নাটকটি বাংলাদেশসহ ভারতের দিল্লীতে মোট ৪ বার মঞ্চায়িত হয়েছে। নিয়মিত মঞ্চায়িত হচ্ছে ‘তামাশা’ ও ‘তন্ত্রমন্ত্র’। পথনাটক ‘আজব বাক্স’, ‘যদি কিছু না মনে করেন’, ‘আত্মপরিচয়ের সন্ধানে’ নিয়মিত প্রদর্শিত হচ্ছে। ‘শেখ সাদী’ নাটকটি মঞ্চে আসার পর আমরা আরও একটি নতুন নাটকে হাত দেব। তারপর সব নাটক নিয়ে একটি নাট্যোৎসব করব আশা করছি। মঞ্চনাটকের দর্শক বাড়াতে ফেডারেশন কি ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে? এইচ আর অনিক : দর্শক বাড়াতে ফেডারেশন নতুন অনেক দলকে নিয়মিত হল বরাদ্দ দিচ্ছে যাতে নতুন নাটকগুলো নিয়মিত মঞ্চায়ন হতে পারে। নিয়মিত ভাল নাটক কিভাবে মঞ্চায়ন করতে পারে সে ব্যবস্থা করে দিচ্ছে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন। আর আমি মানতে নারাজ যে আমাদের মঞ্চে ভাল নাটক হচ্ছে না। আসলে দর্শক কম হওয়ার একটা প্রধান কারণ হচ্ছে- চারদিকের যানজট। আগে, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে যানজট কম থাকাতে দর্শক বেশি হতো আর এখন শুক্রবারেও যানজট বেশি থাকে। তবে নাটকের মান নিয়ে নানা বিতর্ক আছে। আমি মনে করি নাটক ভাল কি খারাপ সেটা সম্পূর্ণ দর্শক ঠিক করবে। নাটক ভাল হলে দর্শক হবে, আর না হলে দর্শক কম হবে। থিয়েটার আন্দোলন বিষয়টি কতটা চলমান বলে আপনি মনে করেন? এইচ আর অনিক : আমি মনে করি থিয়েটার আন্দোলনের গতি আগের তুলনায় আরও বেড়েছে। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন সমাজে চলমান নানা অসঙ্গতি, অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে সব সময় প্রতিবাদ করে এবং করবে। সমাজের নানা অন্যায়ের চিত্র নাটকের মাধ্যমে তুলে ধরার তাগিদ দেয় বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন। থিয়েটার নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি? এইচ আর অনিক : আমি এবং আমার চন্দ্রকলা থিয়েটারের সব সময়ের প্রচেষ্টা নাটককে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা। মঞ্চ নাটককে পেশাদারিত্বের রূপ দেয়া। চন্দ্রকলা থিয়েটারের নাটক নিয়ে বিশ্বভ্রমণ করা আমার ভবিষ্যত পরিকল্পনার মধ্যে অন্যতম। থিয়েটার চর্চার মধ্যে দিয়ে বর্তমান এবং ভবিষ্যত যাতে অর্থপূর্ণতা পায় সেটা আমার ভাবনা এবং পরিকল্পনা। টিভি নাটক নির্মাণের খবর আছে কি? এইচ আর অনিক : সম্প্রতি আমি হেপাটাইটিস বি-এর উপর একটি ডকুফিল্ম নির্মাণ করেছি যা ইতোমধ্যেই প্রচার হয়েছে। খুব শীঘ্রই ‘শুক্রবার ফাইনাল’ নামে একটি ধারাবাহিক নাটক নির্মাণ করতে যাচ্ছি। নাটকটি লেখা শেষ হলেই শূটিং শুরু করব বলে আশা করছি। -সাজু আহমেদ
×