ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জাতীয় শোক দিবসের আলোচনায় ওবায়দুল কাদের

রোহিঙ্গাদের ফেরাতে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে সরকার, ব্যর্থতার কিছু নেই

প্রকাশিত: ১২:১৯, ২৫ আগস্ট ২০১৯

রোহিঙ্গাদের ফেরাতে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে সরকার, ব্যর্থতার কিছু নেই

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ফেরাতে সরকার কৌশলী অবস্থান নিয়েছে। এখানে ব্যর্থতার কোন বিষয় নেই। এখানে কৌশলগত বিষয় রয়েছে। অনেক সময় দু’পা এগিয়ে এক পা পিছিয়ে যেতে হয়। এটিকে কূটনৈতিক ব্যর্থতা বলা যাবে না। বরং নির্যাতিত রোহিঙ্গারা কক্সবাজার সীমান্ত অতিক্রম করে আসার পর মিয়ানমার সরকার সবচেয়ে বেশি চাপ অনুভব করছে। শনিবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিআরটিসি শ্রমিক-কর্মচারী লীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, মিয়ানমার সরকার সেখানে পরিবেশ সৃষ্টি করেনি, নিরাপত্তা সৃষ্টি করেনি, সিটিজেনশিপের (নাগরিকত্ব) মতো বিষয়টি সুরাহা করতে পারেনি; এজন্য তাদের বিশ্বাস করতে পারেনি রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গারা সেদেশে অত্যাচারিত-নির্যাতিত হয়েছে। এর দায় মিয়ানমার সরকারকেই নিতে হবে। সেজন্য আমরা যুদ্ধের পথে যাব না, আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখব। সেই কৌশলে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ আবদুল কাদেরের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, বিআরটিসির চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ ভুইয়া, জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির প্রমুখ। সেতুমন্ত্রী বলেন, সবকিছু মিলিয়ে জাতিসংঘ ইউরোপসহ আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে শেখ হাসিনা সরকার যতটা কূটনৈতিক সাফল্য অর্জন করেছে এটা অন্য কোন দেশে সম্ভব হয়নি। এখানকার সমস্যাটা জটিল। এই জটিলতার মধ্যে যুদ্ধ পরিহার করে ঠা-া মাথায় যুদ্ধের উস্কানির মধ্যে যুদ্ধের পথে না গিয়ে শান্তির মাধ্যমে আলাপ-আলোচনা করে এর সমাধানের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তিনি বলেন, আজকের দিনে যুদ্ধের পথে গিয়ে জয়ী হওয়া যাবে না। শান্তিকে জয় করতে হবে। এই লোকগুলোকে সম্মানের সঙ্গে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ফেরত পাঠাতে হবে। সেজন্য চেষ্টা চলছে। আজকে যারা বলেন এখানে কূটনৈতিক প্রয়াস ব্যর্থ হয়েছে, তাদেরকে বলতে চাই, এটা তাদের বিগ মিসটেক (বড় ভুল)। সরকারের কূটনৈতিক প্রয়াস এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এই ব্যাপারে আমাদের মনে রাখতে হবে মিয়ানমারেরও বন্ধু আছে এবং শক্তিশালী বন্ধু আছে। রোহিঙ্গাদের দীর্ঘমেয়াদে অবস্থান কক্সবাজার-টেকনাফ এলাকার পর্যটনসহ সব বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, রোহিঙ্গাদের লালন-পালন ও আশ্রয় দেয়ায় আমাদের ট্যুরিজম (পর্যটন) ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। আমাদের ইকোনমি (অর্থনীতি) ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত যা দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে, সেই পর্যটন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কক্সবাজারে আওয়ামী লীগের এক নেতা রোহিঙ্গাদের হাতে নিহত হওয়ার ঘটনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওবায়দুল কাদের বলেন, এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এখন সেখানে রোহিঙ্গারাই ১১ লাখ, আমাদের দেশের নাগরিক মাত্র ৪ লাখ। মনে রাখতে হবে রোহিঙ্গাদের মধ্যে সবাই যে নিরীহ, শান্ত, সেটি মনে করার কারণ নেই। তাদের মধ্যে হতাশা আছে, বেপরোয়া মনোভাব আছে, সেটির একটি বিচ্ছিন্ন প্রকাশ ঘটেছে। কাজেই এর জন্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যাবে এটা মনে করা সঠিক হবে না। পরিস্থিতি আমাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। লাভের গুড় পিঁপড়ায় খায় ॥ বিআরটিসিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতিমুক্ত না হলে বিআরটিসি লাভের মুখ দেখবে না। লাভের গুড় এখানে পিঁপড়ায় খেয়ে ফেলে। লাভের গুড় যখন পিঁপড়ায় খেয়ে ফেলে তখন লোকসান হবে। যারা উপরে আছেন ভাগাভাগি তারাই করেন। তবে আমি বিআরটিসির ব্যাপারে কঠিন হতে চলেছি। নতুন গাড়িগুলো এসে বহর আরও সমৃদ্ধ হয়েছে। আপনারা সহযোগিতা করলে বিআরটিসিকে লাভবান করা সম্ভব। বিআরটিসি থেকে দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধ করা হবে। এই প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক করার যে স্বপ্ন, সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করে দেখাব।
×