ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ১৫ শতাংশ

লেনদেন পরিস্থিতির উন্নতি

প্রকাশিত: ১২:১০, ২৫ আগস্ট ২০১৯

লেনদেন পরিস্থিতির উন্নতি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ গত অর্থবছরের তুলনায় বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের লেনদেন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি ১৪ শতাংশ ৭৬ শতাংশ কমেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স বেড়েছে। অন্যদিকে আমদানি ব্যয় কমে আসায় বিদেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে চাপ আরও কমে আসবে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যের (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের (জুলাই-জুন) সময়ে পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি হয়েছে এক হাজার ৫৪৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার। তার আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল এক হাজার ৮১৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। বছরের ব্যবধানে পয়েন্ট টু পয়েন্টে ঘাটতি কমেছে ২৬৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার বা ১৪ শতাংশ ৭৬ শতাংশ। রফতানিতে আগের চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি ও আমদানিতে কম প্রবৃদ্ধির কারণে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে। এ সময়ে রফতানি আয় বেড়েছে ১০ দশমিক ০৯ শতাংশ। আর আমদানি ব্যয় বেড়েছে ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ। আলোচিত সময়ে ইপিজেডসহ রফতানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে তিন হাজার ৯৯৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় করেছে পাঁচ হাজার ৫৪৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার। সেই হিসেবে গত অর্থবছর শেষে দেশে বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় এক হাজার ৫৪৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় (বিনিময় হার ৮৪ টাকা দরে) এক লাখ ৩০ হাজার ১৫০ কোটি ৬০ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের চলতি হিসাব ঋণাত্মক রয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় এ ঋণাত্মক কমেছে। গত অর্থবছরের চলতি হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫২৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৯৫৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার। আমদানি ব্যয় কমার পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ চাঙ্গা ছিল গত অর্থবছরে। গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ। এ ছাড়া প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) উল্লেখযোগ্য অংকে বেড়েছে। সব মিলিয়ে চলতি হিসাবে ঘাটতি কমেছে। তবে ঘাটতির এই অংক ২০১৭-১৮ অর্থবছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ কম হলেও তার আগের ২০১৬-১৭ বছরের চেয়ে ৬৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি। লাগামহীন আমদানিতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে বাণিজ্য ঘাটতি এক হাজার ৮১৭ কোটি ৮০ লাখ ডলারে উঠেছিল। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এই ঘাটতি ছিল ৯৪৭ কোটি ২০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরে আমদানি খাতে ব্যয় বেড়েছে মাত্র ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তার আগের বছরের চেয়ে আমদানি বেড়েছিল ২৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। সার্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পদ্মা সেতু, মেট্টোরেলসহ বিভিন্ন বড় প্রকল্পের সরঞ্জাম আমদানির কারণে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ খাতে ব্যয় বেড়েছিল। এছাড়া বন্যায় ফসলের ক্ষতির কারণে চাল আমদানি বেড়েছিল। বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বেড়েছিল এ খাতের খরচ। কিন্তু গত অর্থবছরে এসব খাতেই আমদানি ব্যয় কমেছে। আর সে কারণেই বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে। লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি ৫২৫ কোটি ডলার ॥ আমদানি কমায় বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যও কমেছে। ৫২৫ কোটি ৪০ লাখ ডলারের ঘাটতি নিয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষ করেছে বাংলাদেশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই ঘাটতি ছিল প্রায় দ্বিগুণ ৯৫৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার। ২০১৬-১৭ বছরে ছিল ১৩৩ কোটি ১০ লাখ ডলার। সাধারণভাবে কোন দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝা যায় চলতি হিসাবের মাধ্যমে। আমদানি-রফতানিসহ অন্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এখানে উদ্বৃত্ত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোন ঋণ করতে হয় না। আর ঘাটতি থাকলে তা পূরণ করতে ঋণ নিতে হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সামগ্রিক লেনদেনে শেষ পর্যন্ত ১ কোটি ২০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই লেনদেনে ৮৫ কোটি ৭০ লাখ ডলারের ঘাটতি ছিল। বিদেশী বিনিয়োগ ও সহায়তা ছাড়ের পরিমাণ বাড়ায় গত অর্থবছরে সরকারের আর্থিক হিসেবে ভাল ৫৬২ কোটি ৮০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত তৈরি হয়েছে। আগের বছরে এই উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল আরও বেশি; ৯০১ কোটি ১০ লাখ ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোন ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সে হিসেবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভাল। এদিকে আলোচিত সময়ে সেবাখাতে বেতনভাতা বাবদ বিদেশীদের পরিশোধ করেছে এক হাজার ৫০ কোটি ডলার। আর এর বিপরীতে বাংলাদেশ এ খাতে আয় করেছে মাত্র ৬৭৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এ হিসাবে সেবায় বাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৭১ কোটি ৫০ খাল ডলার। যা গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল (ঘাটতি) ৪২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এফডিআই বেড়েছে ৩৭ শতাংশ ॥ গত অর্থবছরের সবমিলিয়ে ৪৫০ কোটি ১০ লাখ ডলারের প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) বাংলাদেশে এসেছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ৩২৯ কোটি ডলার। এ হিসাবে গত অর্থবছরে এফডিআই প্রবাহ বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৮১ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশে নিট এফডিআই এসেছে ২৫৪ কোটি ডলার। আগের বছরে এসেছিল ২৭৭ কোটি ডলার। এ হিসাবে নিট এফডিআই বেড়েছে ৪২ দশমিক ৮৬ শতাংশ। বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে মোট যে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ দেশে নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটাকেই নিট এফডিআই বলা হয়ে থাকে। পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগ কমেছে ॥ তবে পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগ (পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট) অর্ধেকে নেমে এসেছে। গত অর্থবছরে এখানে ১৭ কোটি ২০ লাখ ডলারের নিট এফডিআই এসেছে। আগের বছরে এসেছিল ৩৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বাবদ বাংলাদেশে এসেছে ৫৯৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ২০১৭-১৮ বছরের ছিল প্রায় সমান; ৫৯৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
×