ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর

মাঝারি পাল্লার পারমাণবিক শক্তি চুক্তির অবসান

প্রকাশিত: ১২:০০, ২৫ আগস্ট ২০১৯

মাঝারি পাল্লার পারমাণবিক শক্তি চুক্তির অবসান

মাঝারি পাল্লার পরমাণবিক শক্তি চুক্তি (Intermediate Range Nuclear Forces Treaty- INF) বা আইএনএফ যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ান ফেডারেশনের মধ্যে স্বাক্ষরিত ও বলবৎকৃত পরমাণবিক অস্ত্র নিক্ষেপণ সীমিতকরণ বিষয়ক দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ২০১৯ এর ২ আগস্ট থেকে পরিত্যক্ত হয়েছে। এই চুক্তিটি ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউসে ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রর প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির মহাসচিব মিখাইল গর্বাচেভ তাদের স্ব-স্ব দেশ ও সরকারের পক্ষ থেকে সই করেছিলেন। চুক্তিটি সম্পাদন করার লক্ষ্যে যুক্তরাজ্যের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তেরেজা মে এবং জার্মানির চ্যান্সেলর হেলমুট কোহল সক্রিয় সমর্থন যুগিয়েছিলেন। সংশ্লিষ্ট আইনী সর্তাদি পূরণ করার পর ১ জুন ১৯৮৮ থেকে এটি বলবৎ হয়ে আসছিল। এই চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র ও (তখনকার) সোভিয়েত ইউনিয়ন ১. ভূমি থেকে নিক্ষেপনীয় ৫০০ থেকে ৫৫০০ কিঃমিঃ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের উৎপাদন ও মোতায়েন বন্ধ, ২. ইতোমধ্যে এই পাল্লার উৎপাদিত ও মোতায়েনকৃত ক্ষেপণাস্ত্রাদি বিনষ্ট এবং ৩. এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রাদি উন্নয়ন ও উৎপাদন বিষয়ক গবেষণা ও অন্যান্য কার্যক্রম পরিত্যক্ত করার প্রতিশ্রুতি দেয়। এই চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন (এখনকার রাশিয়ান ফেডারেশন) তাদের স্ব-স্ব স্থানে বা প্রভাবের বলয়ে মোতায়েন ৫০০ থেকে ৫৫০০ কিঃমিঃ পাল্লার সকল ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ মিসাইল বা ক্ষেপণাস্ত্র এবং সে সবের উৎক্ষেপক অনুষঙ্গাদি নিষেধাজ্ঞার আওতায় নিয়ে এসে পারস্পরিক সরেজমিন তত্ত্বাবধানের আওতায় বিনষ্ট করার কার্যক্রম গ্রহণ করে। এই প্রক্রিয়ায় ১৯৯১ এর ১ জুন পর্যন্ত দুই পারমাণবিক পরাশক্তি সর্বমোট ২৬৯২টি ভূমি থেকে নিক্ষেপণীয় ক্ষেপণাস্ত্র বিনষ্ট করে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ৮৪৬টি এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক ১৮৪৬টি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র অন্তর্ভুক্ত ছিল। এসব ক্ষেপণাস্ত্র তৎকালীন সোভিয়েত বলয় থেকে মূলত ইউরোপের ন্যাটো (উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংঘ) চুক্তির আওতাধীন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশসমূহের দিকে এবং সোভিয়েত ইউনিয়নকে পশ্চিম, দক্ষিণ ও পূর্ব থেকে ঘেরা যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশসমূহ থেকে সোভিয়েত ইউনিয়ন তথা এখনকার রাশিয়ান ফেডারেশনের দিকে তাক করে মোতায়েন ছিল। বিনষ্টকৃত ক্ষেপণাস্ত্র সমূহের উন্নয়ন ও উৎপাদন বিষয়ে সকল গবেষণা ও কার্যক্রম এই দুই পরাশক্তি বন্ধ এবং ক্ষেপণাস্ত্র বিনষ্টকরণ বিষয়ক পারস্পরিক সরেজমিন পরিদর্শন ২০০১ সাল পর্যন্ত অব্যাহত রাখে। ২০০১-এর পর চুক্তিতে অবশ্য দুই পরাশক্তি সরেজমিন পরিদর্শনের বিকল্পে তাদের স্ব-স্ব উপগ্রহের মাধ্যমে পারস্পরিক পরিদর্শন সক্রিয় রাখে। এই চুক্তির আওতায় আকাশ ও সমুদ্র থেকে নিক্ষেপণীয় ক্ষেপণাস্ত্র অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। চুক্তিতে অন্যান্য স্বীকৃত পরমাণবিক অস্ত্রে শক্তিধর রাষ্ট্র যথা যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, চীন, ভারত, ইসরায়েল, উত্তর কোরিয়া ও পাকিস্তান অন্তর্ভুক্ত হয়নি। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর উত্তরাধিকারী রাষ্ট্র হিসাবে বেলারুশ, কাজাকস্থান, রাশিয়ান ফেডারেশন ও ইউক্রেন এই চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় কার্যত সক্রিয় অংশীদারের ভূমিকা নিয়ে অন্তর্ভুক্ত হয়। চুক্তিটি বলবৎকরণের পরের বছরের মধ্যেই তা ভঙ্গ করণের অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া থেকে একে অন্যের বিরুদ্ধে উত্থাপিত হতে থাকে। ২০০৭ এর ফেব্রুয়ারিতে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বলেন যে এই চুক্তির আওতায় ঈপ্সিত নিরাপত্তা বিধান করা কঠিন এ জন্য যে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার বাইরে অন্যান্য পরমাণবিক শক্তি সম্পন্ন দেশসমূহ এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয়। ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করে যে রাশিয়া চুক্তিতে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে অন্বেষণী বা ক্রুজ মিসাইল পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি ও নিক্ষেপ করণে হাত দিয়েছে। পক্ষান্তরে রাশিয়া বারবার বলে এসেছে যে চীনকে চুক্তির নিষেধাজ্ঞার বাইরে রেখে চুক্তির উদ্দেশ্য সফল হতে পারে না। এই শতাব্দীর শুরু থেকে চীন পরমাণবিক শক্তির অধিকারী এবং ক্ষেপণাস্ত্রে সে সব সন্নিবেশিত করার প্রযুক্তি অর্জন করেছে বলে জানা যায়। ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়াকে চুক্তি লঙ্ঘন করার দায়ে অভিযুক্ত করে চুক্তিটি এক তরফাভাবে ত্যাগ করার অভিপ্রায় ঘোষণা করেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র চীনকে চুক্তির বাইরে রেখে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ সীমিত করার কোন সমঝোতা বা চুক্তি সার্বিকভাবে সেদেশের স্বার্থরক্ষা করে না বলে বলতে থাকে। এই প্রেক্ষিতে চুক্তিতে আবদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র, তখন পর্যন্ত চুক্তির বাইরে অবস্থিত চীন, ভারত, পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়াকে ক্ষেপণাস্ত্র সীমিতকরণ বিষয়ক চুক্তিতে আবদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তার প্রতি রাশিয়াসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে থাকে। পক্ষান্তরে রাশিয়া, অন্য দুটি পরমাণবিক শক্তিধর দেশ ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যকে এই বিষয়ক চুক্তির বাইরে রাখা অযৌক্তিক বলে বিভিন্ন সময় ও সম্মেলনে তার অবস্থান ব্যক্ত করে। ২০১৮ এর ২০ নবেম্বর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ঘোষণা করেন যে ক্রেমলীন হোয়াইট হাউসের সঙ্গে চুক্তিটির পরিধি ও সময়ব্যাপ্তি নিয়ে আলোচনা করতে উদগ্রীব এবং এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র একপাক্ষিকভাবে চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ালে রাশিয়াও চুক্তি অনুযায়ী তার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন ও স্থাপন বন্ধকরণের দায়িত্ব পালন করবে না। ২০১৯ এর ৩০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনে চুক্তিটি সংশোধন বা এর সময়কাল সুনির্দিষ্টভাবে বাড়ানোর বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। ফলত, ২০১৯ এর ২ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেয়। এই প্রেক্ষিতে ২০১৯ এর ৬ আগস্ট রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ঘোষণা করেন যে মাঝারি পাল্লার পরমাণবিক শক্তি চুক্তি ২ আগস্ট থেকে তার দেশের জন্যও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। মাঝারি পাল্লার পারমাণবিক শক্তি চুক্তি এভাবে বিলুপ্ত হওয়ার পর ১. রাশিয়া থেকে ইউরোপের উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংঘ (ঘড়ৎঃয অঃষধহঃরপ ঞৎবধঃু ঙৎমধহরুধঃরড়হ- ঘঅঞঙ) এর সদস্য দেশসমূহ রাশিয়ার মূল ভূ-খ- থেকে ভূমি থেকে উৎক্ষেপণীয় ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণের সামনে দাঁড়িয়ে গেছে, ২. রাশিয়ান ফেডারেশনকে ৩ দিক দিয়ে ঘেরা যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররাষ্ট্রসমূহ থেকে তেমনি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়া ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহ আক্রমণ করার ঘাঁটিগুলো সক্রিয় করার পরিধি সৃষ্ট করেছে, ৩. চীন, ভারত, উত্তর কোরিয়া, পাকিস্তান ও ইসরাইলকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি বিস্তৃত ক্ষেপণাস্ত্র নিরোধক চুক্তিতে উপনীত হওয়ার আশাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে এবং ৪. পৃথিবীব্যাপী পারমাণবিক গবেষণার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ প্রযুক্তি উন্নয়ন ও ব্যবহারের পরিধি সীমিত করে ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যকার এই চুক্তি অবসানের ফলে রাশিয়ান ফেডারেশন বহির্ভূত সাম্প্রতিককালে রাশিয়ার প্রতি বৈরী ভাবাপন্ন ইউক্রেন কর্তৃক রাশিয়ার প্রতিকূলে এমনকি মস্কোর দিকে তাক করানো ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণের পথ খুলে দিয়েছে। উল্লেখ্য, ইউক্রেনের ক্রিমিয়ায় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্ষেপণাস্ত্র ভা-ারের প্রায় ৬০% মোতায়েন ছিল। এসব ক্ষেপণাস্ত্রের বেশ সংখ্যক এখনও সেখানে মোতায়েন আছে বলে বলা হচ্ছে। পক্ষান্তরে বলা হচ্ছে যেÑ এই চুক্তি অবসায়নের পর যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ভারত, পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়া কর্তৃক নতুনতর ক্ষেপণাস্ত্র উদ্ভাবন ও মোতায়েন করার পরিধি উন্মুক্ত ও বিস্তৃত হয়েছে। আইএনএফ চুক্তির এরূপ অবসায়ন ১৯৭০ সালের ৫ মার্চ থেকে বলবৎকৃত ১৯০টি দেশ কর্তৃক গৃহীত পারমাণবিক অস্ত্র নিবর্ধন চুক্তির (ঞৎবধঃু ঙহ ঘড়হঢ়ৎড়ষরভবৎধঃরড়হ ড়ভ ঘঁপষবধৎ ডবধঢ়ড়হং) কার্যকারিতার প্রতিকূলে একটি বিরাট আঘাত বলে বিবেচনীয়। ঐ চুক্তির আওতায় সকল স্বাক্ষরকারী দেশ ১. পারমাণবিক অস্ত্রের নিবর্ধন, ২. নিরস্ত্রীকরণ ও ৩. বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের অধিকার প্রযুক্তকরণের বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল। এই চুক্তি অনুযায়ী সুস্পষ্টভাবে সামনের সারির ৫টি পারমাণবিক শক্তি সম্পন্ন দেশ যথা, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়ান ফেডারেশন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও চীন অন্য কোন রাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র হস্তান্তর কিংবা এ অস্ত্রের উদ্ভাবন বিষয়ে কোন সহযোগিতা না দেয়ার এবং অন্যান্য অপারমাণবিক দেশসমূহ কোন প্রকার পারমাণবিক অস্ত্র গ্রহণ, তৈরি, আহরণ ও ঐ ধরনের অস্ত্র তৈরিকরণে কোন সহায়তা চাওয়া কিংবা পাওয়ার প্রতিকূলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল। এই চুক্তিটি ভারত, ইসরাইল, উত্তর কোরিয়া, পাকিস্তান ও দক্ষিণ সুদান কর্তৃক গ্রহণ না করা সত্ত্বেও বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের কাজ ধীরে হলেও এগিয়ে চলছিল বলা চলে। এই চুক্তি অনুসরণ প্রক্রিয়ায় শীতল যুদ্ধের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ১৩০০০ পরমাণবিক অস্ত্র বিনষ্ট করেছে বলে বিদিত হয়েছে। অধিকন্তু যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন/ রাশিয়া ফেডারেশন থেকে হাজারাধিক পরমাণবিক অস্ত্র নির্মাণক্ষম ইউরেনিয়াম কিনে শান্তিপূর্ণ বিদ্যুত উৎপাদনে প্রযুক্ত করেছে বলে জানা গেছে। মাঝারি পাল্লার পারমাণবিক শক্তি চুক্তির অবসায়ন ১৯৬৮ এর ১ জুনে সইকৃত এবং ১৯৭০ এর ৫ মার্চ থেকে বলবৎকৃত পরমাণবিক অস্ত্র নিবর্ধন চুক্তির ধারাবাহিকতার এবং এর যুগোপযোগী সংশোধনের পথে এক বিরাট অন্তরায় হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। ১৯৭০-এর এই চুক্তির আওতায় পরাশক্তি এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়ান ফেডারেশন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও চীনসহ মোট ১৯০টি রাষ্ট্র তাদের তরফ থেকে ১. পরমাণবিক অস্ত্র ও অস্ত্রবিষয়ক প্রযুক্তি নিবারণ, ২. পরমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার প্রসারণ এবং ৩. পরমাণবিক, সাধারণ ও পূর্ণাঙ্গ নিরস্ত্রীকরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। চুক্তিটির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় দৃষ্ট দুর্বলতা ধীরগতি ও বিতর্কের অবসানকল্পে ২০১৭ সালের জুলাই এ জাতিসংঘ পরমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তি গ্রহণ করে ২০১৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর তা সব সদস্যদেশ কর্তৃক অনুস্বাক্ষরের জন্য উন্মুক্ত করেছে। বাংলাদেশ ১৯৭৯ এর ৩১ আগস্ট পরমাণবিক অস্ত্র নিবর্ধন চুক্তিতে সই করেছে। একই সূত্র অনুসরণ করে বাংলাদেশ ২০১৭ এর পরমাণবিক অস্ত্র নিবর্ধন চুক্তির সমর্থক। এই চুক্তি সর্বজনীনভাবে গৃহীত হলে সকল সদস্য দেশ কর্তৃক পরমাণবিক অস্ত্র উন্নয়ন, পরীক্ষাকরণ, উৎপাদন, মজুদকরণ, মোতায়েন হস্তান্তর নিষিদ্ধ হবে এবং তাই যদি হয় পৃথিবীব্যাপী টেকসই উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে সম্পদ ও প্রযুক্তির বিনিয়োগ প্রতি বছর ৭ থেকে ১০% ভাগ বাড়ানো সম্ভব হবে। এই প্রেক্ষিতে বলা ও স্মরণ রাখা প্রয়োজন, আলোচনাধীন মাঝারি পাল্লার পরমাণবিক শক্তি চুক্তির অবসায়ন, পরমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তির সর্বজনীনভাবে গ্রহণ ও বলবৎকরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, পৃথিবীব্যাপী টেকসই উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে নিশ্চিত অন্তরায় সৃষ্টি করেছে। এই অন্তরায় দূর করার লক্ষ্যে পৃথিবীব্যাপী সুশীল সমাজের চেতনাবোধ অধিকতর জাগরিত ও প্রসারিত করা প্রয়োজন। লেখক : সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী
×