ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অনন্য নজির !

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ২৫ আগস্ট ২০১৯

অনন্য নজির !

অনন্য নজির সৃষ্টি করল দ্বিতীয় শ্রেণীর এক ছাত্রী। নিজের বিয়ে বন্ধ করতে দুই সহপাঠীকে নিয়ে থানায় গেল সে। পুলিশ ও প্রশাসনের সহযোগিতায় স্কুলের দুই সহপাঠীকে নিয়ে নিজের বাল্য বিয়ে নিজেই বন্ধ করল বাসুগী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী মনিকা (১১)। তার বাড়ি আমতলী পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের বাসুগী গ্রামে। মনিকার এ রকম সাহসী উদ্যোগের প্রশংসা করছেন প্রশাসনসহ সচেতন মহলের অনেকেই। শুক্রবার রাত ৮টায় তার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল আমতলী পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের পরিচ্ছনতা কর্মী শামীম (১৫) এর সঙ্গে। জানা গেছে, আমতলী পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের বটতলা ব্রিজ সংলগ্ন খালের পাড়ের বাসুগী গ্রামের একটি ভাড়া বাসায় রিক্সাচালক জুয়েল পরিবার পরিজন নিয়ে থাকেন। শুক্রবার রাত ৮টায় মনিকার মা পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মী শাহিনুর ওরফে শাহনাজ বেগম আমতলী পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের পৌরসভার আরেক পরিচ্ছন্নতা কর্মী অপ্রাপ্ত বয়স্ক শামীম (১৫) এর সঙ্গে মেয়ের বিয়ের সকল আয়োজন সম্পন্ন করেন। এ বিয়েতে মনিকার বাবা রাজি ছিল না বলে জানায় মনিকা। নিজের বিয়ের আয়োজন দেখে মনিকা চমকে যায় এবং বিয়ে বন্ধের জন্য স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফারজানা ও দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী কনিকার সহযোগিতায় আমতলী থানায় যায়। থানায় দেখা হয় এসআই নাসরিনের সঙ্গে। তার কাছে মনিকা তার বিয়ের আয়োজনের সব কথা খুলে বলে। তাৎক্ষণিক এসআই নাসরিন কয়েকজন ফোর্স এবং মনিকা ও তার দুই সহপাঠীকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিয়ের আয়োজনের সত্যতা পান। এ সময় খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন আমতলী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কমলেশ চন্দ্র মজুমদার। তিনি মনিকার মাকে ডাকেন এবং বাল্য বিয়ের কুফল সম্পর্কে বুঝিয়ে বলেন। বাল্য বিয়ের কুফল বুঝতে পেরে মনিকার মা তার মেয়েকে বাল্য বিয়ে দিবেন না বলে মুচলেকা দেন। মনিকার মা শাহিনুর ওরফে শাহনাজ বেগম বলেন, ‘আমরা না বুইজ্যা মাইয়ারে বিয়া দিতে চাইছিলাম। স্যারে আইয়া মোগো সব বুঝাইয়া কওনে মোরা এহন মাইয়ারে আর বিয়া দিমু না। মাইয়ারে এহন লেহা পড়া করামু বড় করমু হেইয়ার পর বিয়া দিমু। মনিকা বলেন, বিয়া মুই বুঝি না। মুই লেহা পড়া কইর‌্যা বড় অমু। হেইয়্যার পর পুলিশে চাকরি করমু। চাকরি কইর‌্যা এইরহম কাম যাতে কেউ করতে না পারে হেইয়্যার ব্যবস্থা নিমু।’ আমতলী থানা পুলিশের এসআই নাসরিন বলেন, মেয়েটি অনেক বুদ্ধিমতী। তার বিয়ের আয়োজনের কথা টের পেয়ে সে তার দুই সহপাঠীকে সঙ্গে নিয়ে থানায় আসে। তাৎক্ষণিক আমি ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বাল্য বিয়ে বন্ধ করি। এ জন্য মেয়েটিকে অনেক ধন্যবাদ। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কমলেশ চন্দ্র মজুমদার বলেন, মনিকা অত্যন্ত বুদ্ধিমতী। তার অনেক প্রশংসা করতে হয়। ছোট মেয়ে থানায় উপস্থিত হয়ে নিজের বাল্য বিয়ে নিজেই বন্ধ করেছে। এজন্য মনিকাকে অনেক ধন্যবাদ। সবাই যদি এ রকম হতো তাহলে সমাজে আর বাল্য বিয়ে থাকত না। -নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী, বরগুনা।
×