ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রব শাহের ২১ আগস্টের স্প্লিনটারের যন্ত্রনা বয়ে বেড়াচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ২৪ আগস্ট ২০১৯

রব শাহের ২১ আগস্টের স্প্লিনটারের যন্ত্রনা বয়ে বেড়াচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আর্দশের কর্মী রাজমিস্ত্রি আব্দুর রব শাহ (৬৭)। যেখানেই আওয়ামী লীগের মিছিল-মিটিং সেখানেই রব শাহের অবস্থান। তাইতো সেদিন (২০০৪ সালের ২১ আগস্ট) বড় ছেলে খোকন শাহকে নিয়ে ঢাকায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে প্রিয় নেত্রীর (শেখ হাসিনা) ভাষন শোনার জন্য গিয়েছিলেন। ওই সমাবেশে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় বাবা-ছেলে দুইজনেই আহত হন। এরমধ্যে গ্রেনেডের অসংখ্য স্প্লিনটারের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয় রব শাহের শরীর। সেদিন প্রাণে বেঁচে আসবেন তা কখনও ভাবেননি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সামান্য কর্মী হিসেবে দলের জন্য অন্যান্যদের মতো সেদিন জীবনটা চলে গেলেও আজ এতো দুঃখ ও যন্ত্রনা সইতে হতোনা। নারকীয় সেই ঘটনার ১৫ বছর পর এখনও অর্থাভাবে বিনাচিকিৎসায় শরীরে অসংখ্য স্প্লিনটারের যন্ত্রনা বয়ে বেড়াচ্ছেন আব্দুর রব শাহ। সু-চিকিৎসার মাধ্যমে জীবনের বাকিটা সময় বাঁচার জন্য তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সূত্রমতে, উজিরপুরের প্রত্যন্ত বিলাঞ্চল সাতলা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রব শাহ। আয় রোজগান না থাকায় স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে অজপাড়া গাঁ থেকে ২০ বছর আগে ঢাকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। মীরপুর ১৩ নম্বরের একটি বস্তিতে বসবাস করে নিজে রাজমিস্ত্রির কাজ ও বড় ছেলে খোকন শাহ ফুটপাতে আচার ও চানাচুর বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। বঙ্গবন্ধুর আর্দশের এ কর্মী ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার ভাষন শোনার জন্য বড় ছেলে খোকন শাহকে নিয়ে ছুটে গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে। ভাষণ শুরুর পর অন্যান্য নেতাকর্মীদের সাথে নানান শ্লোগান দিতে থাকেন রব শাহ ও তার পুত্র খোকন শাহ। এসময় আকস্মিকভাবে একের পর এক গ্রেনেড হামলা শুরু হয়। গ্রেনেডের স্পিন্টারের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয় রব শাহের পুরো শরীর। জ্ঞান হারিয়ে সমাবেশস্থলেই পরে থাকেন রব শাহ। তার বড় ছেলে খোকন শাহ চোখে আঘাত পেয়ে বাবা রব শাহের পাশে বসেই বিলাপ করছিলেন। নারকীয় এ হামলার কিছু সময় পর স্থানীয়রা রব শাহকে মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করেন। তিনদিন পর জ্ঞান ফিরে পান রব শাহ। পরবর্তীতে প্রায় তিন মাস চিকিৎসা শেষে তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। এরপর শরীরের অক্ষমতার কারণে কাজ করতে না পেরে পরিবার নিয়ে তিনি ফিরে আসেন গ্রামের বাড়ি। ম্লান হয়ে যায় রব শাহের পরিবারের বেঁচে থাকার স্বপ্ন। এখনো তার শরীরে গ্রেনেডের স্প্লিনটার বয়ে বেড়াচ্ছেন। মাঝে মধ্যে পেকে ফুলে যন্ত্রনা শুরু হলে টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা করাতে না পেরে তিনি (রব শাহ) স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের দেয়া ওষুধ খেয়ে সুস্থ্য হবার স্বপ্ন দেখেন। সাতলা গ্রামের পল্লী চিকিৎসক ডাঃ জগদীশ চন্দ্র জনকণ্ঠকে জানান, গ্রেনেড হামলায় আহত রব শাহ প্রায়ই অসুস্থ্য হয়ে তার কাছ থেকে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। তার শরীরের বিভিন্নস্থান থেকে তিনি সাতটি স্প্লিনটার বের করেছেন। এখনও তার শরীরে স্প্লিনটার রয়েছে। যখন ওইসবস্থান পেকে যায় তখন তিনি তার কাছে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। আব্দুর রব শাহ জনকণ্ঠকে বলেন, বঙ্গবন্ধুকে ভালবেসে তারই যোগ্যকন্যা শেখ হাসিনার জন্য জীবন দেয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার। সেদিন যদি আমার জীবনটা চলে যেতো তাতে আমার কোন দুঃখ ছিলোনা। তবে ক্ষতবিক্ষত হয়ে বেঁচে থাকাটাই হচ্ছে এখন অনেক দুঃখ ও কস্টের। তিনি আরও বলেন, অনেকেই কিছুনা কিছু সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। আমি কারও সাহায্য-সহযোগিতা গ্রহণ করিনি। শুধু আমার প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা যদি আমার সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন তাতেই আমি ধন্য হবো। উজিরপুর উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাতলা গ্রামের বাসিন্দা খায়রুল বাশার লিটন জনকণ্ঠকে বলেন, গ্রেনেড হামলায় আহত আব্দুর রব শাহের উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী তার (রব শাহ) সু-চিকিৎসা ও অসচ্ছল পরিবারের জন্য সহায়তা করবেন এমন দাবি এখন এলাকার সর্বমহলের।
×