ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স

বিমানের নিরাপত্তা বিভাগ ঢেলে সাজা হচ্ছে

প্রকাশিত: ১০:৫৩, ২৪ আগস্ট ২০১৯

  বিমানের নিরাপত্তা  বিভাগ ঢেলে  সাজা হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির আলোকে ঢেলে সাজা হচ্ছে বিমানের নিরাপত্তা বিভাগ। যুগ যুগ ধরে ঘাপটি মেরে থাকা চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ ও চোরাচালানিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সরিয়ে দেয়া হয়েছে নিরাপত্তা বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাদের। তাদের স্থলাভিষিক্ত করা হচ্ছে অধিকতর সৎ, পেশাদার ও মেধাবী কর্মকর্তাদের। বিমান মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিবুল হক বলেছেন, ‘যেখানেই অভিযোগ পাওয়া যাবে, সেখানেই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এজন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ধাপে ধাপে বিমানের ক্যান্সার হিসেবে চিহ্নিতদের সরিয়ে দেয়া হবে।’ বিমানের প্রশাসন শাখা জানিয়েছে, নিরাপত্তা বিভাগের দায়িত্বহীনতা ও নানা অপকর্মের দরুন বিমানের ভাবমূর্তি হুমকির মুখে পড়ে। বিশেষ করে চোরাচালান, ঘুষ ও ফাইল ঠেকিয়ে বাণিজ্য করার মতো অভিযোগ ছিল অনেক দিনের পুরনো। দুদকসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তেও এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় শুরু হয়েছে ডিসিপ্লিনিরারি এ্যাকশনসহ রদবদলের মতো ব্যবস্থা। এ জন্য প্রথমেই সরিয়ে দেয়া হয়েছে নিরাপত্তা বিভাগের শীর্ষে ঘাপটি মেরে থাকা ডিজিএম রেজাকে। তাকে বিমানের সদর ভবনে শাস্তিমূলক বদলি করার পর তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে অধিকতর মেধাবী, পেশাদার ও ক্লীন ইমেজের মোখলেছুর রহমান মৃধাকে যিনি এতদিন কোনঠাসা ছিলেন এই সিন্ডিকেটের দরুন। তিনি এ বিভাগের দায়িত্ব নেয়ার পর শীর্ষ ব্যবস্থাপনার নির্দেশে নিরাপত্তা বিভাগকে ঢেলে সাজার প্রক্রিয়া শুরু করেন। চেয়ারে বসেই তিনি একটি গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় জানতে পারেন, কার্গো রফতানি ও আমদানি শাখায় একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরেই চোরাচালান ও অবৈধ মালামাল পাচারের মতো অপরাধে জড়িত। তারা নিরাপত্তা বিভাগের ক্যাজুয়াল গার্ড হয়েও তাদের কয়েকজন প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে অফিসে আসা যাওয়া করেন। এ ধরনের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর নিরাপত্তা বিভাগের বহুল আলোচিত সুপারভাইজার তোফাজ্জল হোসেন, হারুণ, আলাউদ্দিন, রফিকুল ইসলাম, ফিরোজ কবির, শাহজাহান, সেলিমকে বদলি করা হয়। তাদের মধ্যে সার্জেন্ট শাহজাহানকে বরিশাল ও সেলিমকে সৈয়দপুরে বদলি করায় কার্গোতে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। বদলির আদেশ পাওয়ার পরও তারা ঢাকায় স্বপদে বহাল থাকার জন্য চতুর্মুখী তদ্বির ও চাপ প্রয়োগ করেন। তোফাজ্জল বদলির আদেশ পেয়ে নিজেকে অসুস্থ দেখিয়ে ছুটিতে যাওয়ার আবেদন করলে বিমান তা গ্রহণ না করায় তিনি টঙ্গী সরকারী হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হয়ে সার্টিফিকেট এনে জমা দেন। এতে বিমান প্রশাসন চরম ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে ঢাকার বাইরে যশোর বদলি করেন। বিমান প্রশাসন শাখার একটি সূত্র জানায়, সুস্থ থেকেও হাসপাতালে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে গিয়ে একদিন বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত থাকার দরুণ তোফাজ্জলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কার্গো শাখা জানিয়েছে, দৈনিক এ খাত থেকে প্রায় লাখ টাকা আদায় করা হতো চোরাচালান ও অন্যান্য অনৈতিক খাত থেকে যা ভাগাভাগি করা হতো শীর্ষ কর্তাদের একটি সিন্ডিকেটের মধ্যে। সাম্প্রতিক বড় ধরনের বদলি ও ওএসডির মতো শাস্তির দরুণ এ সিন্ডিকেট ভেঙ্গে তছনছ করায় স্বস্তি ফিরেছে আমদানি ও রফতানিকারকদের মাঝে। এখন কার্গোতে ফাইল ঠেকিয়ে পয়সা খাওয়া ও হয়রানি বন্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারক আলী হাসান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রশাসন শাখার একজন দাায়িত্বশীল কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, সম্প্রতি এমদাদ নামের একজন ট্রাফিক হেলপার সোনাসহ ধরা পড়ার পর রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে বিমানের চোরাচালানে জড়িত কর্মচারী কর্মকর্তাদের ১৬ জনের একটা তালিকা প্রকাশ করে। এখন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিচালক প্রশাসন জিয়াউদ্দিন বলেন, আমরা প্রতিটি অভিযোগ খতিয়ে দেখছি। যাদের বিরুদ্ধেই প্রমাণাদি পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। আবার যিনি ভাল কাজ করবেন তাকে পুরস্কার দেয়া হবে। কিছু লোককে শাস্তি দেয়া হয়েছে খারাপ কাজ আর কিছু লোককে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে ভাল কাজের জন্য। এটাই চলবে। যতদিন এ চেয়ারে থাকব এভাবেই কাজ করব।
×