দেশের উন্নয়নে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কাজে লাগাতে হবে ॥ রাষ্ট্রপতি

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি অর্জনে দেশের বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কাজে লাগানোর জন্য সব ধর্মের অনুসারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে ধর্মীয় উৎসবগুলোকে আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে এর আবেদন কল্যাণকামী সমাজ প্রতিষ্ঠায় কাজে লাগানোরও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে শুক্রবার বঙ্গভবনে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এ আহ্বান জানান। শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথিতে হিন্দু ধর্মালম্বীদের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, মানুষ সামাজিক জীব। তাই শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত না থেকে সমাজ থেকে অন্যায়, অবিচার ও কুসংস্কার দূর করতে সকলকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। জন্মাষ্টমী উৎসবকে শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতা ও আনন্দোৎসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে এর আবেদনকে একটি কল্যাণকামী সমাজ প্রতিষ্ঠায় কাজে লাগাতে হবে। তা হলেই একটি সুখী-সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলা সম্ভব হবে। রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আবহমানকাল থেকে এ দেশে সকল ধর্মের অনুসারীরা পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বজায় রেখে নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করে আসছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি তাই আমাদের সুমহান ঐতিহ্য। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই ঐতিহ্য অব্যাহত রেখে জাতীয় অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি অর্জনে তা কাজে লাগানোর জন্য আমি দেশের সকল ধর্মাবলম্বীদের প্রতি আহ্বান জানাই। তিনি বলেন, একটি শান্তিপূর্ণ ও কল্যাণকামী সমাজ গঠনে পারস্পরিক সদ্ভাব ও শ্রদ্ধাবোধ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই সকল ধর্মেই পারিবারিক বন্ধনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। তিনি বলেন, পারিবারিক কাঠামোর বিবর্তন, ক্রমবর্ধমান নগরায়ণ ও আধুনিকায়নের ফলে মানুষের কর্মব্যস্ততা বাড়ছে। এতে পারিবারিক বন্ধন ক্রমান্বয়ে শিথিল হয়ে আসছে এবং ঘটছে নানা সহিংস ঘটনা। সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ও পারিবারিক বন্ধনের শিথিলতা এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য এ অবস্থা মোটেই কাম্য নয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে করে রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সমাজ থেকে অন্যায়-অত্যাচার, নিপীড়ন ও হানাহানি দূর করে মানুষে মানুষে অকৃত্রিম ভালবাসা ও সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে তোলাই ছিল শ্রীকৃষ্ণের মূল ভাবনা। হিন্দুধর্ম মতে অধর্ম ও দুর্জনের বিনাশ এবং ধর্ম ও সুজনের রক্ষায় সমাজ সংস্কারে শ্রীকৃষ্ণ যুগে যুগে আবির্ভূত হয়েছেন। অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন। পরে রাষ্ট্রপতি দরবার হলে ঘুরে ঘুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, ভারতের হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাশ, রামকৃষ্ণ মিশন মঠের অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ মহারাজ ছাড়াও হিন্দু ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ, সিনিয়র সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন পেশার বিশিষ্টজনেরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তারা জন্মাষ্টমী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতিকে ফুলের তোড়া উপহার দেন।