ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ব্যতিক্রমী আয়োজন ‘মা’ সমাবেশ

শিশুর শিক্ষায় মায়ের বিকল্প নেই

প্রকাশিত: ০৯:৩৭, ২৪ আগস্ট ২০১৯

 শিশুর শিক্ষায় মায়ের বিকল্প নেই

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ জন্মের পর আমাদের মুখের প্রথম উচ্চারিত শব্দটি হচ্ছে ‘মা’। বাঙালী হিসেবে আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। আর এ ভাষা সবার প্রথমে আমরা মায়ের কাছ থেকে শুনতে পাই। তাই শুক্রবার দুপুরে সীতাকুন্ড উপজেলা কমপ্লেক্স অডিটোরিয়ামে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ‘মা’ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘মা’ কে প্রধান্য দিয়েই অভিভাবক সম্মেলন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন। মানসম্মত ও প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্বের উপর ভিত্তি করেই ‘মা’ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। সীতাকুন্ড উপজেলা কমপ্লেক্সে অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এ সম্মেলনে মায়েরা যেমন তার আদরের শিশুদের নিয়ে এসেছেন তেমনি একটি আদর্শ জাতি গঠনে মায়েদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনায় মেতেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ অনেকে। যারা শিক্ষার মূল বুলি শুনিয়েছেন শিশুদের স্বপ্ন গড়তে। বিভিন্ন শিক্ষাবিদের মতে, শিক্ষার সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য মায়ের কোন বিকল্প নেই। একমাত্র মায়েরাই পারেন সন্তানের দেখভালের পাশাপাশি শিক্ষার প্রতি নজর দিতে। একজন সন্তানকে মায়েরাই পারেন শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে। মায়ের কোন বিকল্প নেই। মাকেই শিক্ষার মূল হিসেবে ধরে নিতে পারলেই সন্তানের শিক্ষা নিশ্চিত করা যাবে। একজন শিক্ষিত মা একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দিতে পারে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের আলোচনায় উঠে এসেছে, সবার সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সীতাকুন্ড উপজেলা প্রশাসন কমপ্লেক্সে শুক্রবার ‘মা’ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। শত শত মায়েরা এই আয়োজনে অংশ নিয়েছে। উপস্থিত অতিথিরাও শিশুদের শিক্ষার আলো নিশ্চিত করতে গোড়া থেকেই মানসম্মত শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। সরকার প্রাথমিক শিক্ষায় যেন গুণগতমান নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়ে জোর দিয়েছেন জেলা প্রশাসনের উপর। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এর ৪নং ধাপ অর্জনে সরকার শিক্ষা নিশ্চিতে সব ধরনের কর্মযজ্ঞ হাতে নিয়েছে। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে সব শ্রেণী ও পেশার মানুষের সন্তানেরা যেন প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনে কোন ধরনের বেকায়দায় পড়তে না হয় সেদিকে দৃষ্টি দিয়েছেন। গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করনে শৈশব থেকে যেন শিক্ষায় মানসম্মত বিকাশ ঘটাতে পারে এমনকি পরিচর্যাও যেন সঠিক হয় তাদের বেড়ে ওঠায়। বক্তারা আরও বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আনন্দময় করে তুলতে পারলেই শিশুরা শিক্ষার আলোর দিকে এগিয়ে আসবে। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের পাশাপাশি তাদের পাঠ্যপুস্তকেও পরিবর্তন আনতে হবে। এই পুস্তক থেকেই শিশুরা তাদের ন্যায়বোধ, কর্তব্যবোধ, শৃঙ্খলার প্রতি আকর্ষিত হবে। শিশুদের কুসংস্কার থেকে দূরে রেখেই বিজ্ঞানের প্রতি আকর্ষণ বাড়াতে হবে। ‘মা’ সমাবেশের আবেগঘন পরিবেশে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘বড় হতে হলে বিনয়ী হতে হবে। অভিভাবকদের প্রতিটি শিশুকে নীতি ও নৈতিকতা শেখাতে হবে। শিশুর পুষ্টিগুণের পাশাপাশি শিক্ষার গুণগতমান ঠিক রাখতে হবে। মায়েরা তার শিশুটি জিপিএ পেল কিনা সেদিকে ধাবিত না হয়ে নিজের শিশুটি নীতি নৈতিকতায় পরিপূর্ণ কিনা সেদিকে খেয়াল রাখবেন। তিনি নেপোলিয়নের সেই বিখ্যাত উক্তিটিও মায়েদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদেরকে একটি শিক্ষিত জাতি দেব। কারণ একজন মায়ের সচেতনতাই একটি শিশুকে শিক্ষা-দীক্ষায় বড় হতে সহায়তা করে। অনুষ্ঠানের শেষে প্রধান অতিথি শিশুদের শিক্ষা উপকরণ ও স্কুল পোশাক বিতরণ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বাদ্যযন্ত্র প্রদান, মেধাবী শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেন। দেয়া হয় আর্থিক অনুদানের চেক ও পুরস্কার। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই ব্যতিক্রমী আয়োজনে সীতাকুন্ড উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম আল মামুন, সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও সমাজসেবা কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
×