ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

গোয়েন্দা সম্পর্ক ছিন্ন

প্রকাশিত: ০৯:২৫, ২৪ আগস্ট ২০১৯

 গোয়েন্দা সম্পর্ক ছিন্ন

জাপানের সঙ্গে গোয়েন্দা সম্পর্ক ছিন্ন করছে দক্ষিণ কোরিয়া। এতে থেকে ধারণা করা হচ্ছে, উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচী সম্পর্কে তথ্য আর বিনিময় করা নাও হতে পারে। দক্ষিণ কোরিয়া জানিয়েছে, জাপানের সঙ্গে করা গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় চুক্তি পরিত্যাগ করবে তারা। এ সিদ্ধান্তের প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে টোকিও। দক্ষিণ কোরিয়ার দূতকে ডেকে এর প্রতিবাদ জানায় তারা। এর ফলে দু’দেশের মধ্যে বিভিন্ন অমীমাংসিত বিষয় নিয়ে চলা সঙ্কট আরও ঘনীভূত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। খবর বিবিসি ও গার্ডিয়ানের। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেনসিয়াল জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উপ-পরিচালক কিম ইউ জিউন বলেন, এই মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার অগ্রাধিকারমূলক রফতানি মর্যাদা বাতিল করে দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা সহযোগিতার পরিবেশে ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তি শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেমিকন্ডাকটর যন্ত্রপাতি রফতানির ওপর টোকিও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করার পর এই পদক্ষেপ নিল সিউল। এক সংবাদ সম্মেলনে কিম বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে, নিরাপত্তার জন্য স্পর্শকাতর সামরিক তথ্য বিনিময়ের জন্য জাপানের সঙ্গে যে চুক্তি করা হয়েছে, সেটা মেনে চলা আমাদের জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী।’ জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন এগ্রিমেন্ট (জিএসওএমআইএ) নামে খ্যাত এই চুক্তিটি আজ শনিবার স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনর্নবায়ন হওয়ার কথা ছিল। এই চুক্তির ফলে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু কর্মসূচী সম্পর্কে তথ্য আদান-প্রদান করত জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। উত্তর কোরিয়া সম্প্রতি ধারাবাহিকভাবে ছয়টি স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায় এবং এসব তথ্য উভয় দেশই বিনিময় করেছে। জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী তাকেশি আইওয়া শুক্রবার অভিযোগ করে বলেন, উত্তর কোরিয়ার অব্যাহত ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ফলে যে হুমকি তৈরি হয়েছে সেটা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। এই চুক্তি বাতিলের ফলে দেশ দুটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আইওয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘উত্তর কোরিয়ার অব্যাহত ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা ও সহযোগিতার জন্য হুমকি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সুন্দর একটি সিদ্ধান্ত নিতে তাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি আমরা।’ গত বছর দক্ষিণ কোরিয়ার একটি আদালতের একটি রুলিংয়ের পর থেকে জাপানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে। আদালতের ওই রুলিংয়ে, কোরীয় উপদ্বীপে ১৯১০-৪৫ সাল পর্যন্ত জাপানের দখলদারিত্বের সময় যুদ্ধে জোর করে নেয়া শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দিতে জাপানী কোম্পানিগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর জাপানের একটি পদক্ষেপে সম্পর্ক আরও খারাপ হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার চিফ শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি রফতানিতে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে জাপান। এছাড়া এ মাসে পুনরায় জাপান ঘোষণা করে যে, দক্ষিণ কোরিয়ার অগ্রাধিকারমূলক রফতানি মর্যাদা বাতিল করা হবে। এর জবাবে সিউল বিশ্বস্ত বাণিজ্য অংশীদারের ‘শ্বেত তালিকা’ থেকে বাদ দেয় জাপানকে। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার এই বৈরিতার ফলে পর্যটন ও সাংস্কৃতি সম্পর্কে প্রভাব পড়েছে। এই সপ্তাহেই দক্ষিণ কোরিয়া জানায়, আগামী গ্রীষ্মে টোকিও অলিম্পিকে তাদের ক্রীড়াবিদদের জন্য আলাদা ক্যাফেটেরিয়া স্থাপনের কথা চিন্তা করছে তারা। কারণ ফুকুশিমা থেকে তাদের বিষাক্ত খাবার দেয়া হতে পারে। এদিকে কোরীয় উপদ্বীপে নিরাপত্তা সহযোগিতা দুর্বল হয়ে পড়ায় বিরক্তি প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, ‘তথ্য বিনিময় চুক্তি বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সিদ্ধান্তে আমরা হতাশ। দু’দেশকেই সম্পর্ক অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি আমরা।’ তিনি বলেন, ‘জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার পারস্পরিক স্বার্থ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এতে কোন সন্দেহ নেই। আর এ দুটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও অতীব গুরুত্বপূর্ণ।’ জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো বলেন, নিরাপত্তা বিষয়ে পুরোপুরি ভুল বিচার করেছে সিউল। তিনি রফতানি নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে নিরাপত্তা ইস্যুকে গুলিয়ে ফেলায় এর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘উত্তর কোরিয়ার বিষয়টি বাদ দিয়ে এই চুক্তিকে সম্ভবত গুরুত্বপূর্ণ বলে ভাবতে পারে লোকজন। কিন্তু জাপানের রফতানি নিয়ন্ত্রণ পর্যালোচনার সঙ্গে মিলিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আমি না বলে পারছি না যে, তারা নিরাপত্তার বিষয়টি ভুলভাবে আমলে নিয়েছে।’ তিনি বলেন, এ বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার দূতকে তলব করা হয়েছে এবং এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
×