ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলার মঞ্চে পারস্যের মহাকবি শেখ সাদী

প্রকাশিত: ০৯:১৯, ২৪ আগস্ট ২০১৯

 বাংলার মঞ্চে পারস্যের মহাকবি শেখ সাদী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মূল হলে আগামী ২৯ আগস্ট বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬-৩০ মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে তারুণ্যনির্ভর নাট্যদল চন্দ্রকলা থিয়েটারের ১৮তম প্রযোজনা নাটক ‘শেখ সাদী’। পারস্যের মহাকবি শেখ সাদীর জীবন ও কর্ম আশ্রীত নাটকটি রচনা করেছেন অপূর্ব কুমার কুন্ডু। নাটকটি নির্দেশনার পাশাপাশি নাম ভূমিকায় একক অভিনয় করবেন এইচ আর অনিক। নাটকটির প্রযোজনা অধিকর্তা হিসেবে রয়েছেন মামুনুর রশীদ, সঙ্গীত হামিদুর রহমান পাপ্পু, মঞ্চ ফজলে রাব্বি সুকর্ণ, মঞ্চ সহযোগী মাহমুদুল হাসান মাসুম, আলো এসএম অঙ্গন, কাজী নজরুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা সৈকত, নিশি, পপি, গোলাম সারোয়ার, আনিস, অবনী, মেহেদী, রিজু, নাহিয়ান, মেকাপ জনি সেন, শিল্প নির্দেশনা সুজন মাহাবুব। ‘শেখ সাদী’ নাটকের কাহিনী এক ঐতিহাসিক মুহূর্তকে ঘিরে। দিল্লীর যুবরাজ মুহম্মদ বুলবনে তার সময়কালে এক বিশ্বকবি সম্মেলনের আয়োজন করেন যেখানে মুখ্য কবি হিসেবে আমন্ত্রণ পান শেখ সাদী। শেখ সাদীর প্রাণাধিক প্রিয় বন্ধু দিল্লীর কবি আমীর খসরু আমন্ত্রণ পত্র রচনা করেন এবং শেখ সাদীর আগমন নিশ্চিত করতে হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে আহ্বান জানান। রাষ্ট্রীয় সম্মান এবং বন্ধুর আহ্বানে উৎফুল্ল শেখ সাদী সম্মানিত এবং আনন্দে আপ্লুত হলেও বার্ধক্যজনিত কারণে বিগত সময়ে একাধিকবার দিল্লী ভ্রমণ করলেও সেবার সে আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে দিল্লী আসতে পারেননি। সশরীরে না যাবার ক্ষেত্রে অপরাপর আরেকটি কারণ ছিল, শেখ সাদী চেয়েছিলেন তাঁর অন্তিম বেলা কাটুক শিরাজী নগরীতে যেখানে তাঁর জন্ম-শৈশব-কৈশোর ও যৌবনে বেড়ে ওঠা। ফলে সিরাজ ত্যাগ করে দিল্লীর সে যাত্রায় শেখ সাদী না গেলেও শেখ সাদী তাঁর রচিত গুলিস্তা, বুলিস্তাসহ অন্যান্য রচিত গ্রন্থ তুলে দিয়েছিলেন শিরাজীতে অভ্যাগত দিল্লীর রাষ্ট্রীয় অতিথিদের হাতে যুবরাজ ও কবিবন্ধুর প্রতি সম্মানার্থে। ইতিহাসের এই সত্যকে ঘিরেই নাটকটি শুরু হয়। মহাকবি শেখ সাদী তাঁর সৃজন সাহিত্যের সম্ভার নিয়ে দাঁড়িয়ে শিরাজীর নিজ গৃহে, পারস্য থেকে দিল্লীগামী মুসাফিরদের আসার অপেক্ষায়। দিল্লীর যুবরাজ মুহম্মদ বুলবন, কবি বন্ধুবর আমীর খসরুর আমন্ত্রণে শেখ সাদী আপেক্ষমাণ তাঁর রচিত সাহিত্য সমগ্র আমন্ত্রণের প্রতিদান হিসেবে মুসাফিরদের হাতে তুলে দিতে। ফজরের আজান শেষে ভোরের আলো ফোটাৃবার মাহেন্দ্রক্ষণের মধ্যবর্তী অপেক্ষমাণ শেখ সাদীর সময়টুকু নিয়েই নাটক শেখ সাদী। পোশাকের পকেটে খাবার পুরার বহুল প্রচলিত কাহিনীর পাশাপাশি পারস্যের কবি রুদকী, ফেরদৌসী, জালাল উদ্দীন রুমি, ওমর খৈয়ামসহ পূর্বসুরি ও সমসাময়িক সাহিত্যিকদের সমান্তরাল পথচলা, যাপিত জীবনকে তুলে ধরা এবং নিজ সাহিত্য সৃজনের প্রেক্ষাপটকে মনোজগতে পুনরায় ফিরে দেখার এবং অপেক্ষার অবসানে শেখ সাদীর আত্ম উপলব্ধির নাটক শেখ সাদী। শেখ সাদীর পা-ুলিপি প্রস্তুতি, চলমান মহড়া এবং মঞ্চায়নের প্রসঙ্গে শেখ সাদী নাটকের নির্দেশক এবং একক অভিনয়ের নাট্যাভিনেতা এইচ আর অনিক বলেন, নাট্যকার অপূর্ব কুমার কু-ু মাইকেল মধুসূদন, হেলেন কেলার নাটক রচনার সুবাধে ইতিমধ্যেই জীবন আশ্রীত নাটক রচনায় দর্শক দ্বারা আদৃত। উপরন্তু শেখ সাদী নাটকটি তিনি ঢাকার ইরানিয়ান কালচারাল সেন্টারের রিভিউ কমিটিকে দেখিয়ে এবং সহায়ক পরামর্শ পেয়ে আপ্লুত। পক্ষান্তরে আমি ও আমার দলীয় কর্মী নিয়ে ইতিমধ্যেই দিল্লীর যে সকল স্থানে শেখ সাদী ভ্রমণ করেছেন সে সকল স্থানে যেয়ে গবেষণা করে সমৃদ্ধ। পাশাপাশি আমি কলকাতায় নাট্যকার মনোজ মিত্রের কাছ থেকে মঞ্চ নির্দেশনা এবং অভিনেতা ও নির্দেশক গৌতম হালদারের কাছ থেকে অভিনয় নির্দেশনা নিয়েছি যা সামগ্রিকভাবে প্রযোজনার মান উন্নয়নে সহায়তা হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। সম্প্রতি আই.টি.আই-এর সাম্মানিক সভাপতি শ্রদ্ধেয় রামেন্দু মজুমদারের কাছ থেকে শেখ সাদী নাটকে অভিনয় থেকে শুরু করে প্রযোজনার সকল বিষয়ে দিক নির্দেশনা নিয়েছি যা নাটকের মানকে উন্নত করতে সহায়তা করবে। পা-ুলিপি প্রস্তুত থেকে মঞ্চায়নের প্রতিটি ধাপে আমাদের শ্রদ্ধেয় নাট্যজনদের দিক নির্দেশনা নিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি মঞ্চায়নের লক্ষ্যে। যতদূর জানি বিশ্বের মধ্যে শেখ সাদীকে নিয়ে প্রথমবারের মতো মঞ্চ নাটক মঞ্চায়নের পথে আমরা চন্দ্রকলা থিয়েটার। ফলে দর্শকদের বিপুল চাহিদা এবং রসাস্বাদনে যতদূর চেষ্টা করা যায় একটা দলের পক্ষে তা করতে আমরা বদ্ধপরিকর। আমরা চন্দ্রকলা থিয়েটার এখন সার্বক্ষণিক মহড়ার মহলায়, নাটকটির প্রযোজনা সহযোগী ঢাকায় ইরানিয়ান কালচারাল সেন্টার। ইরানিয়ান কালচারাল সেন্টারের তত্ত্বাবধানে ইরানের ফজর থিয়েটার ফেস্টিভ্যালে শেখ সাদী নাটকটি অংশগ্রহণ করবে বলে আশা করছি। ফারসী সাহিত্যের গবেষক, ইরানী কালচারাল সেন্টারের পাবলিক রিলেশন অফিসার এবং শেখ সাদী নাটকের প্রযোজনা উপদেষ্টা সাইদুল ইসলাম বলেন, শেখ সাদী নাটকের সকল বিষয়ে আমরা খবরাখবর নিচ্ছি। ইরানের কালচারাল কাউন্সিলর এবং বিদগ্ধ শিল্পানুরাগী ড. মাহদী হোসেইনি ফায়েক কালচারাল সেন্টারে এইচ আর অনিকের অভিনয় মহড়া দেখে বলেন, আমি খুবই আশাবাদী নাটকটি খুবই মানসম্পন্ন এবং দর্শকনন্দিত হবে।
×