স্টাফ রিপোর্টার ॥ নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনসাম্বল প্রযোজিত ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’ নাটকটি আবার মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে আজ। দল সূত্রে জানা গেছে আজ শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার মিলনায়তনে নাটকটির ২৪তম মঞ্চায়ন হবে। সৈয়দ শামসুল হকের প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটারে নাটকটি ২৫তম মঞ্চায়ন হবে। সৈয়দ শামসুল হক রচিত ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’ নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন মঞ্চ সারথি আতাউর রহমান। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করবেন ড. চঞ্চল সৈকত, আবদুল্লাহ আল মামুন, জুয়েইরিয়াহ মৌ, সাইদুর রাহমান, শেফালী পারভীন, আবদুল আজিজ, তাজুল ইসলাম রুবেল, মানব সরকার, আনিসুর রহমান শাহীনসহ অনেকে ।
মুক্তিযুদ্ধের সূচনা লগ্নের পটভূমিতে রচিত নাটক ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’। নাটকে তুলে ধরা হয়েছে সে সময় একদিকে চলছিল গণহত্যা, অন্যদিকে চলছিল মুক্তিযুদ্ধ। দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনী নির্বিচারে হত্যা করতে থাকে এ দেশের মানুষকে। গ্রেফতার করতে থাকে দেশপ্রেম সন্দেহ করে অনেককেই। সাধারণ একজন মানুষ নজরুলকে কবি কাজী নজরুল ইসলাম ভেবে পাকিস্তানীরা তার ওপর যে অকথ্য অত্যাচার করে, তা ধারণাতীত। অথচ মানুষটি মোটেও যুদ্ধ কিংবা অস্ত্রের সঙ্গে পরিচিত নয়। সে স্ত্রী, সন্তান আর নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন বলেই ২৫ মার্চ পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ভয়ে তাদের গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছিল। সুযোগ বুঝে সেও সেখানেই যাচ্ছিল। আর তখনই পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। তাকে পাকিস্তানীরা চিহ্নিত করে বিদ্রোহী কবি নজরুল হিসেবে।
কিন্তু নজরুল জানে, সে কবি কাজী নজরুল নয়। কোথাও বিরাট ভুল হয়ে গেছে সেনাবাহিনীর। সে তো কবিতা লিখতেই জানেন না! কীভাবে সে ‘বিদ্রোহী’ কবিতার লেখকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে? নজরুল যে যুদ্ধ করছে, এ যুদ্ধ প্রত্যেক বাঙালীর। যার ভাবনায় এত দিন সংসার, সন্তান, একান্ত ব্যক্তিগত জগতের বাইরে কিছুই ছিল না, সেও বুক চিতিয়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সামনে বজ্রকণ্ঠে বলে ওঠে ‘জয় বাংলা’। মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা, অনিশ্চয়তা। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া মানুষের গল্পও উঠে আসে কাহিনীতে।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১৮ মার্চ নাটকটি মঞ্চে আসে। নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন মঞ্চসারথি আতাউর রহমান। বলাই বাহুল্য, সৈয়দ শামসুল হকের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক রচনা নাটক ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’। আমাদের দেশের মঞ্চনাটকে আলোচিত জুটি নাট্যকার সৈয়দ শামসুল হক আর নির্দেশক আতাউর রহমান।
এই মঞ্চ জুটির চমৎকার বোঝাপড়ায় আমাদের দেশীয় মঞ্চনাটক হয়েছে সমৃদ্ধ। ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’ নাটকটি আগে টেলিভিশনে প্রচার হয়েছিল। দর্শক গ্রহণযোগ্যতার দাবির প্রেক্ষিতে পরে নাটকটি মঞ্চে আনা হয় এবং যথারীতি মঞ্চশিল্প হিসেবে এটা সাফল্য পায়। সেটা যেমন পরীক্ষিত ব্যক্তির নির্দেশনার গুণে তেমনি শিল্পীদের অভিনয়শৈলী এবং উপস্থাপনার নান্দনিকতাতেও। মুক্তিযুদ্ধের একটি খন্ডিত অথচ বাস্তব একটি ইতিহাসকে নতুন করে দর্শকদের সামনে তুলে আনার সাহস দেখানোার জন্য নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনসাম্বলের কর্মীরা সাধুবাদ পেতেই পারেন।