ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

খাদ্য মজুদে রেকর্ড

প্রকাশিত: ০৯:১০, ২৪ আগস্ট ২০১৯

খাদ্য মজুদে রেকর্ড

বর্তমান জনবান্ধব ও কৃষিবান্ধব সরকারের অন্যতম একটি সাফল্য, দেশের সর্বস্তরের মানুষের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এটি সরকারের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকারও বটে। এরই ধারাবাহিকতায় সরকারের লাগসই কৃষিনীতির বাস্তবায়নসহ যথাসময়ে কৃষকের হাতে উন্নতমানের বীজ ধান, ধানের চারা, সেচ সুবিধা, ডিজেল ও বিদ্যুত সর্বোপরি বালাইনাশক পৌঁছে দেয়ায় গত কয়েক বছর ধরে ধানের বাম্পার ফলন হচ্ছে। কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রমে দেশ আজ শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, বরং উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্যে ভরপুর। কিছু পরিমাণে চাল রফতানিও হচ্ছে বিদেশে। সর্বোপরি দেশের অভ্যন্তরে গড়ে উঠেছে বিপুল পরিমাণের খাদ্য মজুদ, যা অতিক্রম করেছে অতীতের সকল রেকর্ড। গত আমন মৌসুমের পর বোরো মৌসুমেও ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে সারাদেশে। দেশের কৃষক সমাজ তা সে ছোট-বড় যেই হোক না কেন, গোলা ভরা রাশি রাশি ভারা ভারা ধানের ম-ম গন্ধে এখন মাতোয়ারা। অবশ্য এর কারণও আছে বৈকি। প্রথমত, প্রকৃতি ও আবহাওয়ার আনুকূল্য ও দাক্ষিণ্য। দ্বিতীয়ত, আবাদী জমির পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি ফলন হয়েছে আশাতীত। কৃষক বীজ, সার-সেচসহ সবরকম সরকারী প্রণোদনা পেয়েছেন যথাসময়ে। এক কথায় কৃষকের বাড়ির আঙিনার গোলা থেকে শুরু করে মাঠ-ঘাট-হাট-চাতাল-মোকাম প্রায় সর্বত্র ধান-চালের ছড়াছড়ি। গত ১০ বছরের মধ্যে ধানের এত ভাল উৎপাদন আর হয়নি বলে খবর এসেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএ চলতি মাসে বিশ্বের দানাদার খাদ্যের বৈশ্বিক উৎপাদন পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, গত এক বছরে বাংলাদেশে চালের উৎপাদন বেড়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। এ বছর উৎপাদন হতে পারে ৩ কোটি ৫৩ লাখ টন চাল। অনুকূল আবহাওয়াসহ কৃষক সরকারী আনুকূল্যে ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় বেড়েছে উৎপাদন, যা বিশ্বের প্রধান ধান উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। এত বিপুল ধান-চালের উৎপাদনের কারণে মাঠ পর্যায়ের কৃষক থেকে শুরু করে চাতাল মালিক ও চালের ব্যবসায়ীদের মধ্যে ধান-চালের ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়েও একটি শঙ্কা রয়ে গেছে। সরকারও ভাবছে বিষয়টি নিয়ে। তবে সরকার তথা খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নানামুখী আন্তরিক উদ্যোগ সত্ত্বেও দেশের কৃষক প্রায়ই এর ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। কেননা সরকার ধান-চালের সংগ্রহ মূল্য বেঁধে দিলেও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের লোকজন কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান-চাল কেনে না। বরং তাদের সমধিক আগ্রহ মধ্যস্বত্বভোগী ও চাতাল মালিকদের কাছ থেকে ধান-চাল কেনায়। ক্ষুদ্র কৃষকদের ধানে নাকি আর্দ্রতা বেশি, যেটি থাকা স্বাভাবিক, শুকানোর জন্য তারা ধান সংগ্রহে রাখতে পারে না। দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে বাধ্য হয়ে বিক্রি করে মধ্যস্বত্বভোগী ও চাতালের মালিক এবং মোকামে। ফলে সরকার নির্ধারিত ধান-চালের নায্য সংগ্রহ মূল্যও তারা পান না কখনই। বাস্তবতা হলো, দেশে গত কয়েক বছরে ধান-পাট-ফল-মূল-শাক-সবজি, তরিতরকারি, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, চা, চামড়া ইত্যাদির উৎপাদন বাড়লেও ত্রুটিপূর্ণ মার্কেটিংয়ের কারণে কৃষক ও উৎপাদক শ্রেণী প্রায়ই বঞ্চিত হয় ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি থেকে। গত বছর রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে ‘ফুড এ্যান্ড এগ্রিকালচার ইকোসিস্টেম’ শীর্ষক এক সেমিনারে কৃষি বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যে উঠে এসেছে এই তথ্য। এটি সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক যে, স্বাধীনতার ৪৮ বছর হতে চললেও অদ্যাবধি আমরা একটি সমন্বিত ও আধুনিক কৃষিপণ্য বিপণন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারিনি। ফলে একদিকে উৎপাদিত ফসল ও পণ্যদ্রব্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয় কৃষক, অন্যদিকে সেসব পণ্য উচ্চমূল্যে কিনতে হয় ভোক্তা তথা ক্রেতাসাধারণকে। সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার হলো সব মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা। আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদেরও উচিত হবে, জনসাধারণ ও সরকারকে জিম্মি কিংবা কারসাজি করে নয়, বরং আস্থায় নিয়েই ব্যবসা করা। তদুপরি দেশে ধান-চাল পাটসহ কৃষিজাত পণ্যের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করার জন্য তৃণমূল থেকে রাজধানী পর্যন্ত একটি আধুনিক ও সমন্বিত মার্কেটিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরী ও অপরিহার্য।
×