ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনীতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ॥ নামফলকও নেই অফিসের

অস্তিত্ব সঙ্কটে ড. কামালের ঐক্যফ্রন্ট

প্রকাশিত: ১২:৫৬, ২৩ আগস্ট ২০১৯

অস্তিত্ব সঙ্কটে ড. কামালের ঐক্যফ্রন্ট

রাজন ভট্টাচার্য ॥ অস্তিত্ব সঙ্কটে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। জোটের শরিক নেতাদের অনেকে বলছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির সঙ্গে ড. কামালের ঐক্যের মধ্য দিয়ে জোটের যাত্রা। এখন তা কার্যত নামমাত্র। আরেকধাপ এগিয়ে বললে রাজনীতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট। বিএনপির সঙ্গে গণফোরামের টানাপোড়েন চলছে। শরিকদের সঙ্গে সমন্বয় নেই। নেই বৈঠক বা কর্মসূচী। এমনকি ঐক্যফ্রন্টের জন্য যে রাজনৈতিক কার্যালয়টি নেয়া হয়েছিল তাও ভাড়া দেয়া হয়েছে অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে। সব মিলিয়ে এই রাজনৈতিক মোর্চার শেষ ঠিকানা কামাল হোসেনের মতিঝিলের চেম্বার! ফ্রন্টের শরিক নেতারা বলছেন, বিএনপির একাংশের মতামতের ভিত্তিতে ফ্রন্ট গঠন করা হয়েছিল। নির্বাচনের পর ফল বিপর্যয়ের কারণে যারা জোট রাজনীতির পক্ষে ছিলেন তারা বেঁকে বসেছেন। এখন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ফ্রন্টের কর্মকা- এগিয়ে নেয়ার জন্য খুব একটা তৎপর নন। কামাল হোসেনও ঢিলেঢালা চলছেন। ঘোষণা দিয়েই এই জোট থেকে বেরিয়ে গেছে কাদের সিদ্দীকির দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। অন্য কয়েকটি খুচরা দল যাও আছে তারা বিএনপি ও কামাল হোসেনের দিকে তাকিয়ে ছিলেন এত সময়। এখন তাদের মধ্যেও আছে হতাশা আর বঞ্চনার সুর। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর থেকেই এর আয়ু ও স্থায়িত্ব নিয়ে নানা মহল থেকে সংশয় প্রকাশ করা হচ্ছিল। তবে সব সংশয় উড়িয়ে দিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের উদ্যোক্তরা বলার চেষ্টা করেছেন, এটি নির্বাচনী জোট নয়। এটি জনতার জোট। ভোটের পরও এই জোটের অস্তিত্ব এবং ঐক্য আরও দৃঢ় হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে প্রত্যাখ্যান করা হলেও আশ্চর্যজনকভাবে দুই দলের নির্বাচিত সাংসদরা শপথ নিয়েছেন। শপথ নেয়ার বিরোধিতা করে যাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছিলেন ড. কামাল হোসেন তাকে দলে ফিরিয়ে এনে বরং আরও ভাল পদে পুরস্কৃত করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, সর্বশেষ (১০ জুন) ফ্রন্টের শরিক নেতা আ স ম আব্দুর রবের বাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠক-ই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সব শেষ বৈঠক। এরপর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের আর কোন সভা কোথাও অনুষ্ঠিত হয়নি। ৩০ ডিসেম্বরের পর থেকে ১০ জুনের আগ পর্যন্ত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বেশিরভাগ বৈঠক ড. কামাল হোসেনের বাসা, তার মতিঝিল চেম্বার অথবা আ স ম আব্দুর রবের বাসায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। জোটের প্রধান কার্যালয়ে কেউ আসেননি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দফতর প্রধান জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু বলেন, ‘নির্বাচনের আগে গড়ে ওঠা সরকারবিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের তেমন কোন কর্মকা- এখন নেই। যেটুকু আছে, সেটা ড. কামাল হোসেনের চেম্বার অথবা শীর্ষ নেতাদের বাসায় সেরে ফেলা যায়। সে জন্য অত বড় অফিস আর প্রয়োজন নেই। আবার যখন প্রয়োজন হবে, তখন হয়তো বড় অফিস খুঁজে নেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যুতে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশে ঘোষণা দেয়া হলেও বন্যার কারণে একটি কর্মসূচী হয়েছে মাত্র। পরবর্তী এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেই। গণফোরামের কোন কর্মসূচীতে বিএনপি অথবা শরিক নেতাদের দেখা যাচ্ছে না। তেমনি বিএনপির কোন রাজনৈতিক কর্মসূচীতে ফ্রন্টের আহ্বায়ক কামাল হোসেনকেও আমন্ত্রণ জানাতে দেখা যায় না। সব মিলিয়ে জোটে যে অস্তিত্ব সঙ্কটে আছে তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে নতুন করে দেখানোর কিছু নেই। জোটের নেতারা জানিয়েছেন, ভোটের পরপরই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান কার্যালয়ের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়। কার্যালয়ের সামনে থেকে উধাও হয়ে যায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নামফলক। ঐক্যফ্রন্টের সদর দফতর হিসেবে যে কক্ষ তিনটি ব্যবহার করা হতো, সেগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দিয়েছেন ভবন মালিক। রাজধানীর পুরানা পল্টনের, ৩৭/২ বীর উত্তম গাজী দস্তগীর সড়ক, চতুর্থ তলা, প্রীতম-জামান টাওয়ার, ঢাকা-১০০০। এই ঠিকানাটি নির্বাচনের ঠিক আগে আগে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
×