রশিদ মামুন ॥ আর্থিক খাতে অটোমেশনের পর এবার জ্বালানি তেল খালাস, পরিবহন এবং বিপণন এই তিন খাতেই অটোমেশন করতে চায় বাংলাদেশে পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। এখন তেলের সব হিসাব খাতা-কলমে রাখা হয়। অটোমেশন হলে কম্পিউটারাইজড স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে সব হিসাব রাখা হবে।
বিপিসি সূত্র বলছে, পতেঙ্গায় মেন ডিপোতে অটোমেশনের সম্ভাব্যতা জরিপ করছে ফরাসী কোম্পানি টেকনিফ। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এই কাজ শেষ হবে। এরপরই অটোমেশন করার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হবে। বলা হচ্ছে পতেঙ্গার পর দেশের অন্যসব ডিপোতে অটোমেশন করা হবে। সব মিলিয়ে অটোমেশনের কাজ শেষ হতে সময় লাগবে আরও তিন বছর। অর্থাৎ ২০২২ নাগাদ দেশের সব ডিপোতে অটোমেশন চালু হবে।
জ্বালানি নিরাপত্তা দিবসের সেমিনারে বিপিসি অটোমেশনের বিস্তারিত তুলে ধরে। বিপিসি এক প্রতিবেদনের বলছে ক্রমান্বয়ে দেশের জ্বালানি তেলের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বহুমুখী ব্যবহারের ক্ষেত্র তৈরি হওয়াতে বিপিসি মনে করছে ২০২০-২১ সালে দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা তৈরি হবে ৯৩ লাখ ৮৮ হাজার মেট্রিকটন। ক্রমান্বয়ে এই জ্বালানির চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। যার প্রায় পুরোটাই আমদানি করে চাহিদা পূরণ করা হবে। দেশের অভ্যন্তরে কোন তেল ক্ষেত্র নেই। গ্যাস ক্ষেত্র থেকে যে কনডেনসেট উৎপাদন হয় সেখান থেকে পেট্রোল এবং অকটেন তৈরি হয়। এছাড়া দেশের অন্যসব জ্বালানি তেল আমদানি করতে হয়। এখন দেশে প্রতিবছর প্রায় ৬০ লাখ মেট্রিকটন জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়।
বিপিসি সূত্র বলছে এখন জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে হিসেব সংরক্ষণ এবং অন্যসব কাজই মানুষের মাধ্যমে করা হয়। সঙ্গত কারণে একদিকে চুরির অভিযোগ ওঠে। এতে করে সিস্টেম লস বৃদ্ধি পায়। আর লোকসানে পড়তে হয় বিপিসিকে। যে কারণে তেল খাতে সরকারের ভর্তুকিও বেড়ে যায়।
অটোমেশন সম্পর্কে পদ্মা অয়েল কোম্পানির জেনারেল (জিএম) ম্যানেজার আমিনুল হক বলেন, অটোমেশন একটি যান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এখানে মানুষের কমান্ডের মাধ্যমে ইলেক্ট্রিনিক্স ডিভাইস সব ধরনের অপারেশন পরিচালনা করে। এই প্রক্রিয়াতে পেট্রোলিয়াম পণ্যের আগমন, সংরক্ষণ এবং বিপণন সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
বিপিসির কর্মকর্তারা বলেন, এর আগেও বিপিসিতে অটোমেশন চালুর চিন্তা করা হয়। কিন্তু সেটি ছিল আংশিক। এখন এটি পূর্ণাঙ্গ আকারে করার কথা বলছে বিপিসি। যদিও প্রথম ধাপে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রধান ডিপোতে অটোমেশন করার কথা বলা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সারাদেশে এই অটোমেশন পদ্ধতি কার্যকরের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এজন্য বিপিসি তেল বিপণন কোম্পানিগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে।
বিপিসি বলছে অটোমেশন হলে একদিকে দায়বদ্ধতা বাড়বে অন্যদিকে পরিচালন ব্যয় কমে আসবে। এর মধ্য দিয়ে সিস্টেম লস কমানো যাবে। বলা হচ্ছে অটোমেশন হলে একটি সফটওয়্যার দিয়ে সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হবে এতে মানুষের হস্তক্ষেপ থাকবে না। অটোমেশনে অনলাইন ট্র্যাকিং করা যাবে। সঙ্গত কারণে এক জায়গায় বসে সিস্টেমে কোথায় কি হচ্ছে তা দেখা যাবে।
বিপিসি জ্বালানি তেলের যে চাহিদা নির্ধারণ করেছে তাতে দেখা যায় ২০২৫-২৬ এ জ্বালানি দেশে তেলের চাহিদা হবে এক কোটি ১৯ লাখ ৭৯ হাজার মেট্রিকটন। যা ২০৩০-৩১ এ বেড়ে দাঁড়াবে এক কোটি ৪৮ লাখ ৭২ হাজার মেট্রিকটন, ২০৩০-৩৫ এ এই চাহিদা দাঁড়াবে এক কোটি ৮৬ লাখ ৯৯ হাজার মেট্রিকটন আর ২০৪০-৪১ সালে যা বেড়ে দাঁড়াবে ২ কোটি ৪১ লাখ ৯১ হাজার মেট্রিকটন।
ক্রমান্বয়ে চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে বিপিসি তেল পরিবহনে পাইপ লাইন নির্মাণ করছে। এসব পাইপ লাইনে অটোমেশন খুব জরুরী বলে মনে করা হচ্ছে। তেল পরিবহনের ক্ষেত্রে পাইপ লাইনে কোথায় কি অবস্থায় রয়েছে তা অটোমেশনের মাধ্যমে দেখা সম্ভব।
বিপিসি বলছে, প্রথমে দেশের সব জ্বালানি তেলই পতেঙ্গায় আনা হয় এরপর জাহাজ, রেলওয়ে এবং ট্রাকে করে তা দেশের বিভিন্ন প্রাপ্তের ডিপোতে পৌঁছে দেয়া হয়। পতেঙ্গাতে অটোমেশন শুরুর পর জাহাজে করে যেসব জায়গাতে তেল পরিবহন করা যায় সেখানে অটোমেশন করা হবে। ডিপোগুলো হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল, ফতুল্লা, খুলনার দৌলতপুর, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ, ভৈরব, পাবনার বাঘাবাড়ি, বরিশাল, ঝালকাঠি, চিলমারি এবং সুনামগঞ্জ। এরপর রেলওয়ে ডিপো পার্বতীপুর, রাজশাহী, নাটোর, রংপুর, সিলেট এবং শ্রীমঙ্গল আসবে অটোমেশনের আওতায়। এছাড়া বিপিসির অন্য ডিপোগুলোও অটোমেশনের আওতায় আনার পাশাপাশি দেশের ৭০০ পেট্রোলপাম্পকে অটোমেশনের আওতায় আনা হবে।
প্রসঙ্গত বিপিসি সম্প্রতি তেল বিক্রির অর্থ অটোমেশনের মাধ্যমে তোলার জন্য দেশীয় একটি কোম্পানিকে কাজ দিয়েছে।