ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকীর আলোচনায় কাদের

১৫ ও ২১ আগস্টের হত্যাকান্ড একই ষড়যন্ত্রের অংশ

প্রকাশিত: ১১:০৯, ২৩ আগস্ট ২০১৯

 ১৫ ও ২১ আগস্টের হত্যাকান্ড একই ষড়যন্ত্রের অংশ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ১৫ ও ২১ আগস্টের হত্যাকান্ড একই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতা। ১৫ আগস্ট ষড়যন্ত্রের প্রাইম টার্গেট ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আর ২১ আগস্টের প্রাইম টার্গেট ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতেই ৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল স্বাধীনতাবিরোধীরা। একই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় শোক দিবস ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে মহিলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়া খাতুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মেরিনা জাহান কবিতা, পারভীন জামান কল্পনা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদক মাহমুদা বেগম ক্রিক, মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী শাহিদা তারেক দীপ্তি, আসমা জেরিন ঝুমু, শিরিন রোকসানা, শেখ আনার কলি পুতুল, সুরাইয়া বেগম ইভা প্রমুখ বক্তব্য দেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, ২১ আগস্ট যখন গ্রেনেড হামলা হয়েছে তখন ক্ষমতায় ছিল কারা? ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারী হরকাতুল জেহাদ নেতা মুফতি হান্নান জবানবন্দীতে বলেছে যে, হাওয়া ভবনের পরিকল্পনায় তারেক রহমানের নির্দেশে তারা হামলা করে। এ ঘটনার মাস্টারমাইন্ড তারেক রহমান একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। এটা প্রচলিত আদালতে প্রমাণিত হয়েছে, জনতার আদালতে প্রমাণিত, ইতিহাসের আদালতেও প্রমাণ হবে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াত জোট এই ঘটনায় যদি জড়িত না থাকে তাহলে এফবিআইকে তদন্ত করতে বাধা দিলেন কেন? স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডকে তদন্ত করতে আসতে বাধা দিলেন কেন? আপনারা যদি মাস্টারমাইন্ড না হন তাহলে জর্জ মিয়া চিত্র নাট্য সাজিয়েছিলেন কেন? ২২ আগস্ট সকালের আগে কেন সব আলামত নষ্ট করে দিলেন? হামলাকারীদের চোখের সামনে চলে যেতে দেয়া হলো কেন? এর জবাব কি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগীর দেবেন? ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানা হত্যাকান্ড নিয়ে বিএনপির অভিযোগ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানার ঘটনার দিন সূর্য ওঠার আগেই খালেদা জিয়া বাসা থেকে বের হয়ে ২৪ ঘণ্টা নিখোঁজ ছিলেন। ওই ২৪ ঘণ্টা তিনি কোথায় ছিলেন? যিনি (খালেদা জিয়া) দুপুরের আগে ঘুম থেকে ওঠেন না, তিনি সূর্য ওঠার আগে বাসা থেকে বেরি ২৪ ঘণ্টা নিখোঁজ থাকলেন! এতেই প্রমাণ হয় এ ঘটনার জন্য তারা দায়ী। পিলখানা হত্যাকা-ের সময় আপনার (মির্জা ফখরুল) নেত্রী কোথায় ছিলেন এর জবাব কি দেবেন? ওবায়দুল কাদের বলেন, নবাব সিরাজ উদ্দৌলার সঙ্গে মীরজাফর বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। মীরজাফররা সব জায়গায় থাকে। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মোস্তাক বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। সিরাজ উদ্দৌলার সঙ্গে সেনাপতি ইয়ার লতিফ বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সেনাপতি জিয়াউর রহমান বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জিয়াউর রহমান যদি জড়িতই না থাকবেন তাহলে খুনীদের বিদেশে নিরাপদে যেতে দিলেন কেন? তাদের দূতাবাসে চাকরি দিলেন কেন? পুরস্কৃত করলেন কেন? ফখরুল সাহেবকে এর জবাব দিতে হবে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার কে বন্ধ করেছিল, কে ইনডেমিনিটি দিয়েছিল, এটি সংবিধানে কে অন্তর্ভুক্ত করেছিল? এর জবাবও আপনাদের দিতে হবে ফখরুল সাহেব, কিন্তু আজও এর জবাব দেননি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, অনেকে বলেন আমরা সংলাপ করি না। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করে ইনডেমিনিটি দিয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের কর্মসম্পর্কের অলঙ্ঘিত দেয়াল তৈরি করা হয়। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর সেই দেয়াল আরও উঁচু হয়েছে। সেই দেয়াল আমরা ভুলি কীভাবে? তিনি বলেন, ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে আপনারা হত্যার পরিকল্পনা করে আওয়ামী লীগের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করেছেন। এর বিচার প্রচলিত আদালতে হয়েছে, জনতার আদালতে হয়েছে, ইতিহাসের আদালতেও হবে। এত কিছুর পরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে খালেদা জিয়াকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। খালেদা জিয়া কি অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেছিলেন তা সবাই জানে। এরপর পুত্রহারা মাকে সান্ত¦না দিতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু বিএনপি নেতারা মুখের সামনে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এটা করে বিএনপি কর্মসম্পর্কের রাজনীতির দরজা চিরতরে বন্ধ করে দিয়েছে। খুন করা ও খুনীকে সহায়তা করা একই অপরাধ- কাদের ॥ বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার জানান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্ট একই সূত্রে গাথা। খুন করা ও খুনীদের সহায়তা করা একই অপরাধ। জাতির পিতার খুনীদের পুরস্কৃত ও পুনর্বাসিত করে জিয়াউর রহমান রাজনীতিতে যে ‘অলঙ্ঘনীয় দেয়াল’ তৈরি করেন ২১ আগস্ট সে দেয়ালকে আরও উঁচু করা হয়। বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে ছাত্রলীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সঞ্চলনায় এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি. এম মোজাম্মেল হক। এতে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনসহ সংগঠনটির কেন্দ্রীয় ও বিশ^বিদ্যালয় শাখার বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
×