ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যোগাযোগ সম্প্রসারণের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ১০:৫১, ২৩ আগস্ট ২০১৯

যোগাযোগ সম্প্রসারণের উদ্যোগ

ওয়াজেদ হীরা ॥ গ্রামীণ জনপদে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। দেশের বিভিন্ন স্থানে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের আঞ্চলিক যোগাযোগে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে রাজধানী ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো সড়ক উন্নয়নে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ‘ঢাকা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। এতে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা। ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলার ৮৮ উপজেলার মধ্যে ৬৭ উপজেলাকে প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়াও আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে বর্ষা মৌসুমে সড়ক যোগাযোগ সচল রাখতে রাঙ্গামাটির ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর বিভিন্ন অংশে আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সম্প্রতি একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। চলতি জুলাই থেকে ২০২৪ সালে জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে শক্তিশালী পল্লীসড়ক নেটওর্য়াক তৈরি হবে এবং সড়কের ধারণক্ষমতা ও নিরাপত্তা বাড়ানোর মাধ্যমে কৃষি-অকৃষি পণ্যের বিপণন সুবিধা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, আমাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থাটা ভাল হলেই অনেক উন্নয়নের সুফল মিলবে। ইউনিয়ন পর্যায়ের মানুষ তাদের উৎপাদিত পণ্য দ্রুত বাজারজাত করতে পারে। পর্যায়ক্রমে সব জায়গায় যোগাযোগে শক্তিশালী করে তোলা হবে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের অর্থনীতিতে ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোর অবদান অন্য জেলার চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি। এ বিভাগের অর্থনীতিকে আরও বেগবান ও ত্বরান্বিত করার জন্য প্রয়োজন গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো। বর্তমানে পল্লী অঞ্চলে যাতায়াত সুবিধা বাড়ানোর ফলে রাজধানীসহ বড় বড় শহরের পাশে গ্রামীণ এলাকায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এজন্য পল্লীসড়ক নেটওয়ার্কে যান চলাচলের সংখ্যা বেড়েছে এবং নিয়মিত ভারি যানবাহন চলাচল করছে। কাজেই এই সড়কগুলোর প্রশস্ততা ও অন্যান্য জ্যামিতিক মানে এগুলোর উন্নয়ন প্রয়োজন। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে গ্রামীণ অবকাঠামোর দ্রুত উন্নয়ন সামনে রেখে ১৯৯০ থেকে ’১০ সালের মধ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) উপজেলা ও ইউনিয়নের বেশিরভাগ সড়ক নির্মাণ করে। বর্তমানে এর আরও উন্নয়ন প্রয়োজন বলেই প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পটির প্রস্তাব পাওয়ার পর এ বছরের ২ ফেব্রুয়ারি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়। সভায় দেয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। গত ১৬ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ডিপিপি উপস্থাপন করা হয়। ওদিনই এটি অনুমোদন দেন একনেক সভা। এটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছে ১ হাজার এক দশমিক ৫১ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন, ৫ হাজার ৮৫৭ মিটার ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ, ৩০ কিলোমিটার ড্রেন, ২৪০টি ইন্টারসেকশন, ১২ হাজার স্লোপ প্রোটেকশন, ৩ হাজার ট্রাফিক সাইন ও ১২ হাজার গাইড পোস্ট তৈরি। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার উদ্দেশে ও লক্ষ্যের সঙ্গে প্রকল্পটি সঙ্গতিপূর্ণ উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ৫ হাজার কি.মি. উপজেলা সড়ক, ৮ হাজার কি.মি. ইউনিয়ন সড়ক, ১২ হাজার কি.মি. গ্রাম সড়ক, উপজেলা ইউনিয়ন সড়কে ১ লাখ ৪০ হাজার মিটার ব্রিজ/কালভার্ট এবং গ্রাম সড়কে ৫০ হাজার মিটার ব্রিজ/কালভাট নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে এই প্রকল্পটি সামঞ্জস্যপূর্ণ। ঢাকা বিভাগের তেরোটি জেলার ৮৮ উপজেলার মধ্যে ৬৭ উপজেলাকে প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। উপজেলাগুলো হচ্ছে ঢাকার নবাবগঞ্জ, ধামরাই, কেরানীগঞ্জ ও সাভার। গাজীপুরের কালিয়াকৈর, কাপাসিয়া, গাজীপুর সদর ও শ্রীপুর, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া, লৌহজং, সিরাজদিখান, টঙ্গীবাড়ি ও শ্রীনগর, মানিকগঞ্জের সদর, সাটুরিয়া, দৌলতপুর ও সিংগাইর। নারায়ণগঞ্জের সদর, আড়াইহাজার, বন্দর ও সোনারগাঁও, নরসিংদীর সদর, মনোহরদী, বেলাব, পলাশ, রায়পুরা ও শিবপুর, টাঙ্গাইলের সদর, মধুপুর, মির্জাপুর, কালিহাতি, ঘাটাইল, সখীপুর, বাসাইল, ধনবাড়ী ও গোপালপুর, কিশোরগঞ্জের ভৈরব, হোসেনপুর, কটিয়াদি ও পাকুন্দিয়া, ফরিদপুরের সদর, বোয়ালমারী, নগরকান্দা, সালিথা, সদরপুর, ভাঙ্গা ও মধুখালী, মাদারীপুরের সদর, শিবচর, কালকিনি, রাজৈর, শরিয়তপুরের সদর, জাজিরা, ভেদরগঞ্জ, ডামুড্যা, নড়িয়া, গোসাইরহাট ও সদর উপজেলা। রাজবাড়ী সদর, গোয়ালন্দ, পাংশা, বালিয়াকান্দি ও কালুখালী, গোপালগঞ্জের সদর, টুঙ্গিপাড়া, মুকসুদপুর, কোটালিপাড়া ও কাশিয়ানী । এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সদস্য জাকির হোসেন আকন্দ বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো অধিক প্রশস্ত ও জ্যামিতিক মানে উন্নীত হবে। এতে যানবাহন চলাচল নির্বিঘœ হবে এবং কৃষিপণ্য পরিবহন ও বিপণন সহজ হবে। এদিকে, পার্বত্য এলাকা রাঙ্গামাটির দিকেও দৃষ্টি দিয়েছে সরকার। রাঙ্গামাটি সড়ক বিভাগের অধীন ‘পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের বিভিন্ন জায়গায় ড্রেনসহ স্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। এতে খরচ ধরা হয়েছে ২৪৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা। প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছে- ৩ লাখ ২৯ হাজার ৮০৬ ঘনমিটার সড়কে মাটির কাজ, ৬ হাজার ২২৫ মিটার আরসিসি সসার, ড্রেন নির্মাণ, এক হাজার ৫১০ মিটার আরসিসিইউ ড্রেন নির্মাণ, ৭২ হাজার ১৫০ বর্গমিটার কংক্রিট স্লোপ প্রোটেকশন উইথ জিও টেক্সটাইল এবং ২ হাজার ৬৪৮ মিটার আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ। ২০ আগস্ট অনুমোদন হওয়া প্রকল্পটি চলতি বছর থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত ছয়টি সড়ক রাঙ্গামাটি সড়ক বিভাগের অধীন সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা মহাসড়ক। এ ছয়টি মহাসড়কের মধ্যে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি জাতীয় মহাসড়ক চট্টগ্রামসহ সারাদেশের সঙ্গে রাঙ্গামাটিকে যুক্ত করেছে। এছাড়া রাঙ্গামাটি-মানিকছড়ি-মহালছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়ক খাগড়াছড়ির সঙ্গে এবং ঘাগড়া-চন্দ্রঘোনা-বান্দরবান সড়ক বান্দরবানের সঙ্গে রাঙ্গামাটি যুক্ত হয়েছে। এর বাইরে বগাছড়ি-নানিয়ারচর-লংগদু ও বাঙ্গালহালিয়া-রাজস্থলী সড়ক যথাক্রমে নানিয়ারচর ও লংগদু এবং রাজস্থলী উপজেলাকে রাঙ্গামাটি শহরের সঙ্গে যুক্ত করেছে। রাঙ্গামাটি শহরের সংযোগ সড়কগুলো শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোকে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি জাতীয় মহাসড়ক এর সঙ্গে যুক্ত করেছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ’১৭ সালের প্রবল বর্ষণে রাঙ্গামাটির ১২৮ স্পটে মহাসড়ক মারাত্মক বিধ্বস্ত হয়। এতে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এছাড়া ২০১৮ সালের জুনে আরও ২৩ স্পট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি জাতীয় মহাসড়কের ৬১ কিলোমিটারে সাপছড়ি নামক স্থানে ৫০ মিটার সড়ক এবং রাঙ্গামাটি-মানিকছড়ি-মহালছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়কের ষষ্ঠ ও সপ্তম কিলোমিটারে যথাক্রমে ২৫ মিটার ও ৩৫ মিটার সড়ক সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়। আপাতত অস্থায়ী কাজ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছে। তবে সব সড়কে স্থায়ী কাজ করা না হলে স্পটগুলো মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস পরিকল্পনা কমিশনের অভিমতে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে রাঙ্গামাটি জেলার উন্নয়নে নিরাপদ, টেকসই ও ব্যয় সাশ্রয়ী সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে এবং এলাকার জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে।
×