ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফিলিপিন্সে শীঘ্রই এক লাখ টন চাল রফতানি ॥ কৃষিমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১০:৪৯, ২৩ আগস্ট ২০১৯

 ফিলিপিন্সে শীঘ্রই এক লাখ টন চাল রফতানি ॥ কৃষিমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এ বছর দেশে ধান গম ও ভুট্টা মিলিয়ে ৪ কোটি ১৩ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ধানের পাশাপাশি ভুট্টার উৎপাদনও এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ধানে কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে চাল রফতানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই ফিলিপিন্সে এক লাখ টন চাল রফতানির প্রক্রিয়া শুরু হবে। বৃহস্পতিবার খামারবাড়িতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় কৃষিমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ধান গম ও ভুট্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করায় কৃষক ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। আগামী বোরো মৌসুমেই সরকার কৃষকের ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, কৃষকের কাছ থেকে সরকার চার লাখ টন ধান কেনার সিদ্ধান্ত নেয়ার পরই অনেক প্রভাবশালী তৎপর হয়েছে। তাদের কাছ থেকে ধান কেনার জন্য তারা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। বিষয়টি জানতে পেরে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে মাঠ পর্যায়ে চিঠি দেয়া হয়েছে কোন কোন কৃষকের কাছ থেকে কি পরিমাণ ধান এবং কত দামে ধান কেনা হচ্ছে তার তালিকা পাঠাতে। পরে এটি যাচাই বাছাই করে দেখা হবে। এই প্রক্রিয়ায় কৃষকের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে ধান কেনার বিষয়টি নিশ্চিত করা হচ্ছে। কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দেশে খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জনের পর সরকার এখন মানুষের পুষ্টি ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করছে। এ লক্ষ্যে সরকার কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণ, আধুনিকীকরণ এবং যান্ত্রিকীকরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই প্রক্রিয়া কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং কৃষিকে টেকসই করতে কৃষিভিত্তিক আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, কৃষকমুখী নেয়া নানা পদক্ষেপের কারণেই বর্তমান সরকারের তিন মেয়াদে খাদ্যে আজ স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। অন্যান্য সেক্টরের পাশাপাশি কৃষিতে অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে। সারাবিশ্বেও বাংলাদেশের এই উন্নয়ন প্রশংসিত হচ্ছে। এ বছর ভুট্টার উৎপাদন ৬ গুণ বেড়ে ৪৬ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে। দেশে আলুর চাহিদা ৬০ লাখ টন হলেও এবার উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৩ লাখ টন। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৩ লাখ টন আলু বেশি উৎপাদন হয়েছে। কৃষি উৎপাদনে স্বয়সম্পূর্ণ হলেও বাজারজাত প্রক্রিয়ায় যে উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। ফলে কৃষক তার ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। এই সমস্যা সমাধানে সরকার কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণ, আধুনিকীকরণ এবং যান্ত্রিকীকরণ করার পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি বলেন, দেশের ১৬ লাখ মানুষের আয় ২ হাজার ডলার। কিন্তু গরিব এবং কৃষকের আয় এখনও কম। ফলে তারা পুষ্টি এবং নিরাপদ খাদ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরকার এখন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এটি নিশ্চিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এটি নিশ্চিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, দেশে পার্বত্য এলাকায় কেশর আলু (ক্যাশিওনাট) এবং কফি চাষের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। থাইল্যান্ড থেকে উন্নতমানের চারা এনে তা কৃষকের কাছে বিতরণ করা হবে। সিলেটের পতিত জমি আবাদের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনি জানান, দেশে ডালের উৎপাদন অনেক বেড়েছে। প্রতিবছর ডাল উৎপাদন যেখানে ৩ লাখ টন হয় সেখানে এবার ডাল উৎপাদন হয়েছে ৮ লাখ টন। এক পটুয়াখালীতেই মুগডাল উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ টন। ফলে দামও কমেছে। তিনি বলেন, খাদ্যের মান নিশ্চিত না করে সেটি রফতানি করা হলে বিদেশীদের কাছ থেকে এর মানের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠে। কৃষিপণ্য রফতানি করার আগে মান যাচাইয়ে দেশে আন্তর্জাতিকমানের ল্যাব নেই। বিষয়টি চিন্তা করেই সরকার পূর্বাচলে কৃষিপণ্যের মান নিশ্চিতের জন্য একটি আন্তর্জাতিকমানের ল্যাব প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ ল্যাব প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব পাঠালে তিনি পূর্বাচলে দুই একর জমি বরাদ্দ করেছেন। দুধের মান নিয়েই দেশে হঠাৎ করেই নানা প্রশ্ন উঠেছে। দুধের মান নিশ্চিত করতে সাভারে একটি ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নর জবাবে মন্ত্রী বলেন, স্বর্ণা, বিআর ২৯ সহ মোটা চালের দাম এখন অনেক কম। কিন্তু মিলাররা যে চাল চিকন করে মিনিকেট নামে বাজারে বিক্রি করছে সেটার দাম এখনও বেশি। কারণ তারা এটির প্রক্রিয়াজাত করে বাজারজাত করছে। এর বাইরে দেশের কোন কোন অঞ্চলে মিনিকেট নামের ধানেরও চাষ হচ্ছে। যদি তা স্বল্প মাত্রায় উৎপাদন করা হচ্ছে। সেই মিনিকেট ধানের চালের দামও বেশি। সরকার কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের জন্য বিদেশে চাল রফতানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে ফিলিপিন্সে এক লাখ টন চাল রফতানির এলসি পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, কৃষক তার ফলন বিক্রি করে যাতে লাভবান হয় সেই চেষ্টাই সরকার করছে। কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের জন্য ধান কাটা এবং লাগানোর ক্ষেত্রে প্রণোদনা দেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে কৃষকের প্রদত্ত প্রণোদনা বাড়ানো হবে। এর আগে তিনি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে কৃষিক্ষেত্রে অবদানের জন্য কৃষকদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরষ্কার বিতরণ করেন। এ সময় তিনি বলেন, আগে কৃষি পেশাতে অভিজাত শ্রেণীর লোকেরা অসম্মানজনক-ভাবে অবিহিত করত। কৃষককে চাষার ছেলে বলেও গালি দিতে পিছপা হতো না। কিন্তু দিন বদলেছে। কৃষি এখন সম্মানজনক পেশায় উন্নিত হয়েছে। অনেক অভিজাত শ্রেণীর লোকেরা এখন এই পেশায় নিয়োজিত হচ্ছে নানাভাবে। এক সময় দেশে প্রতিবছর বন্যা হতো। বন্যার পরে খাদ্যের অভাব দেখা দিতো। সাধারণ মানুষ কচু ঘেচু খেয়ে থাকত। কিন্তু সেইদিন এখন নেই। সরকার কৃষিকে অনেক গুরুত্ব দেয়ায় কৃষি ব্যবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। সারাবছর শাকসবজি এবং ফসল উৎপাদন হচ্ছে। এখন এক বিঘায় আলু উৎপাদন হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ মণ। একদিকে কৃষিতে উৎপাদন বেড়েছে। অন্যদিকে মানুষের কষ্ট অনেক কমেছে। তিনি বলেন, কৃষিতে নানাভাবে যারা অবদান রেখে চলেছে তাদের নিয়ে সরকারের একটি সেমিনার করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই সেমিনারের মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা বিনিময় করা হবে। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে সরকার একুশটি বিশেষ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর মধ্যে ‘আমার গ্রাম আমার শহর নামের’ একটি প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জীবন মান উন্নত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সরকারের পদক্ষেপের কারণেই সব গ্রামেই বিদ্যুত পৌঁছে গেছে। গরিব মানুষ এখন প্রেসার কুকার ও ফ্রিজ ব্যবহার করছে। এই পরিবর্তনের সঙ্গে সরকার মানুষের জীবন মান উন্নয়নে পুষ্টিসম্মত ও নিরাপদ খাবারের নিশ্চয়তা দিতে চায়। অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ নাসিরউজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধু কৃষকের কথা চিন্তা করেই এই পুরষ্কারের ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু তার মৃত্যুর পর এই কৃষিপদকের নাম পরিবর্তন করে প্রেসিডেন্ট পদক রাখা হয়। পরে তা জাতীয় কৃষি পুরষ্কার করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে এটি এখন বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরষ্কার নাম দিয়েছে। তিনি বলেন, কৃষকের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য কৃষি পুরষ্কারের পাশাপাশি আগামীতে কৃষিতে ‘এগ্রিকালচারাল ইমপোর্টেন্ট পারসন’ বা এআইপি ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। কৃষিতে যারা ভূমিকা রেখে চলেছেন তাদের এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। অনুষ্ঠানে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক ড. নুরুল ইসলাম। পরে কৃষিমন্ত্রী কৃষিক্ষেত্রে অবদানের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার লোকদের মধ্যে স্বর্ণপদক তুলে দেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরাই ছিল গ্রেনেড হামলার নেপথ্যে ॥ আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে তারাই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার নেপথ্যে ছিল। প্রকাশ্য দিবালোকে ১৩টি গ্রেনেড মেরে মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। ২১ আগস্টের পরিকল্পনা হয়েছে হাওয়া ভবন থেকে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের পরিচালনায়। এ রকম নৃশংস হত্যাকারীর মদদদাতা খালেদা জিয়াকে আন্দোলন করে জেল থেকে বের করা যাবে না। বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে বাংলাদেশ কৃষক লীগ আয়োজিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন। আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পাকিস্তানের দালালেরা কোনদিন বাংলাদেশকে মেনে নিতে পারেনি। আর ২১ আগস্টে ব্যবহৃত গ্রেনেডগুলো ছিল পাকিস্তানের তৈরি। এতেই বোঝা যায় মা ও ছেলের রচনা। ’৭৫ এর পরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ ধ্বংস করতে গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা নষ্ট করতে ২১ আগস্টের হামলা। পৃথিবীর এই নজির আর কোথাও নেই। তারেক রহমান ও তার মা তখনকার প্রশাসন, রাষ্ট্রযন্ত্র ও গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে এই পৈশাচিক হত্যাকান্ড চালান। কৃষিমন্ত্রী বলেন, নানা প্রতিকূলতা, জীবন মৃত্যুর মাঝখানে থেকেও শেখ হাসিনা আজ দেশকে বিশ্বের কাছে এক উদাহরণ হিসেবে গড়ে তুলেছেন। বিদেশীরা আসে বাংলাদেশের উন্নয়নের গল্প শুনতে। কৃষক লীগকে আরও শক্তিশালী ও সুসংগঠিত হতে হবে। কৃষকের পাশে থেকে কাজ করতে হবে। তাই মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কৃষক লীগকে সম্পৃক্ত করা হবে। মন্ত্রী আরও বলেন, যতই ষড়যন্ত্র করা হোক না কেন, দেশবিরোধী, মানবতাবিরোধী তারেক জিয়াদের ক্ষমতায় যেতে দেয়া হবে না। সে জন্য প্রত্যন্ত গ্রামেও প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের মূলমন্ত্র পৌঁছে দিতে হবে। আমার গ্রাম আমার শহর তখনই বাস্তবায়ন হবে যখন কৃষক লীগ শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে। এ সময় মন্ত্রী কৃষক লীগের কাছে সহায়তা চান। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মোঃ মোতাহার হোসেন মোল্লার সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমন্বয় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী প্রমুখ।
×