ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার নেপথ্যে-

প্রকাশিত: ০৯:২৮, ২৩ আগস্ট ২০১৯

পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার নেপথ্যে-

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ হঠাৎ করে ঝাঁঝালো হয়ে উঠেছে পেঁয়াজ। পাইকারিতেই এক সপ্তাহে দাম বেড়েছে প্রায় ২০ টাকা। খুচরা পর্যায়ে আরও বেশি। ভোক্তারা বলছেন, সিন্ডিকেটের কারসাজি। অপরদিকে, পাইকারদের অভিমত, পচনশীল পেঁয়াজ মজুদ করে কৃত্রিম সঙ্কট করা যায় না। আমদানিকারকরা বলছেন, ভারতে বন্যা, লরির ধর্মঘট ও কোরবানির ঈদে কিছুদিন সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ থাকার প্রভাব পড়েছে পেঁয়াজের দামে। তবে যে যা-ই বলুন না কেন, পেঁয়াজের দাম বেড়ে চলেছে। মূলত উপরোক্ত তথ্যসমূহে দেশে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার নেপথ্যের কারণ হিসেবে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। ভোগ্য পণ্যের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে বৃহস্পতিবার পেঁয়াজের মূল্য প্রতিকেজি ৫০ টাকা ছুঁইছুঁই অবস্থা। আগের দিন বুধবার বিক্রি হয়েছে ৪৬ টাকায়। পাইকাররা বলছেন, হিলি স্থলবন্দরেই প্রতিকেজির দাম পড়ে যাচ্ছে প্রায় ৪৮ টাকা। এর সঙ্গে পরিবহন ব্যয় যুক্ত হলে দাম আরও না বেড়ে উপায় নেই। পাইকারি আর খুচরা পর্যায়ের ব্যবধান হয় দশ টাকা পর্যন্ত। প্রধানত পেঁয়াজের বাজার নিয়ে উৎকণ্ঠা থাকে রোজার মাসে। কিন্তু এবার রোজায় পাইকারিতে দাম নেমে এসেছিল প্রতিকেজি ১৭ থেকে ১৮ টাকায়। এরপর দাম কিছুটা বাড়লেও তা মানভেদে ২৭ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে সীমিত ছিল। খুচরাতে গত সপ্তাহেও বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৩৫ টাকায়। কিন্তু গত তিনদিনে লাফিয়ে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আসে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে। কোরবানির ঈদের আগেও প্রতিকেজি নাসিক পেঁয়াজ এসেছে ২২ থেকে ২৩ টাকায়। ঈদের জন্য প্রায় দশদিন বাণিজ্য বন্ধ থাকার পর আসতে থাকা পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করে, যার প্রভাব পড়েছে সারাদেশে। গত রবিবার পাইকারি মূল্য ছিল ৩০ টাকা। মাত্র তিনদিনে ১৬ টাকা বেড়ে বুধবার দাম হয় ৪৬ টাকা। বৃহস্পতিবার আরেকটু বেড়ে মূল্য ৫০ টাকার কাছাকাছি। পেঁয়াজের দাম আরও বাড়ার আভাস দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। খাতুনগঞ্জ ট্রেড এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহমদ জনকণ্ঠকে জানান, পেঁয়াজ নিয়ে কারসাজি করা যায় না। কারণ দ্রুত পচনশীল হওয়ায় এ পণ্য গুদামজাত করে রাখা অসম্ভব। তিনি বলেন, ভারতে বন্যায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সে দেশে লরি ধর্মঘট। এতে ভারতেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। ঈদে প্রায় দশদিন আমদানি বন্ধ থাকার প্রভাবও রয়েছে। দাম আরও বাড়তে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে এই ব্যবসায়ী নেতা জানান, তা নির্ভর করছে ভারতের বাজারমূল্যের ওপর। তবে সাপ্লাই চেন নির্বিঘœ থাকলে মূল্য অত্যাধিক বাড়ার কারণ নেই। ব্যবসায়ীরা জানান, গত সপ্তাহে সবচেয়ে ভাল পেঁয়াজের পাইকারি দর ছিল কেজি প্রতি ২৩ থেকে ২৪ টাকা। মাঝারি মানের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২২ টাকায়। আর ছোট পেঁয়াজের দাম ছিল ১৫ থেকে ১৬ টাকা। হঠাৎ দর বৃদ্ধির প্রধান কারণ সীমান্তেই দাম বেড়ে যাওয়া। ভারতীয় ট্রাক থেকে পেঁয়াজ কিনতেই দাম বেশি পড়ছে। তারা জানান, ভারত থেকে সাধারণত নাসিক, পাটনা এবং বেলেডাঙ্গা- এ তিন জাতের পেঁয়াজ আমদানি হয়ে থাকে। এখন শুধু নাসিক পেঁয়াজ আসছে। দেশী পেঁয়াজের মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ায় আমদানির পেঁয়াজের চাহিদা বেড়েছে। খুচরা ব্যবসায়ী দিদারুল আলম জানান, বৃহস্পতিবার প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৪৮ টাকায় বিক্রি করেছি। পাইকারিতে যে হারে দাম বাড়ার খবর পাচ্ছি তাতে করে এ দরেও হয়ত বিক্রি করা সম্ভব হবে না। খুচরাতেও দাম বাড়ারই কথা। তিনি বলেন, আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। একসঙ্গে বড়জোর কয়েক বস্তা পেঁয়াজ কিনি। এর মধ্যে কিছু পেঁয়াজ পচা পড়ে যায় বলে বাদ দিতে হয়। কেনা দামের চেয়ে সামান্য বেশিতে বিক্রি করে থাকি। মূল্য উঠানামা বিষয়টি নির্ভর করে পাইকারিতে কত দামে কিনতে পারছি তার ওপর। তবে হঠাৎ মূল্য বেড়ে যাওয়ায় পারিবারিক ব্যয় ঠিক রাখতে অনেক ভোক্তার পরিমাণে অপেক্ষাকৃত কম পেঁয়াজ কেনার প্রবণতা লক্ষ্য করছি।
×