ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রক্ষা পেল শিক্ষার্থীরা

বাউফলে ধসে পড়ল স্কুল ভবনের বিম

প্রকাশিত: ০৯:২০, ২৩ আগস্ট ২০১৯

বাউফলে ধসে পড়ল স্কুল ভবনের বিম

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল, ২২ আগস্ট ॥ সকাল সোয়া নয়টা। সহকারী শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষকের কক্ষে অবস্থান করছেন। শিক্ষার্থীরা শ্রেণীকক্ষে বই রেখে বাইরে ছুটোছুটি করছে। ঠিক ওই সময় বিদ্যালয় ভবনের প্রথম শ্রেণীর কক্ষের বিমের বিশাল অংশ ভেঙ্গে পড়ে বিকট শব্দ হয়। ভয়ে চিৎকার শুরু করে ২৫-৩০ শিশু শিক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার এ ঘটনা ঘটে বাউফল উপজেলার পশ্চিম বাউফল নূরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এ রকম ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান চলছে আরাইনাও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়েও। এ দুটি বিদ্যালয়ে রয়েছে চার কক্ষ বিশিষ্ট এক তলা ভবন, যা পাঠদানের অনুপযোগী। সরেজমিনে পশ্চিম বাউফল নূরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা যায়, চার কক্ষ বিশিষ্ট একতলা ভবনটির সবচেয়ে ছোট কক্ষটি প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাকি তিনটি কক্ষ শ্রেণী কক্ষ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ভবনটির অধিকাংশ বিমে ও পিলারে বড় আকারের ফাটল ধরেছে। বিম, পিলার ও ছাদের সুড়কি-পলেস্তরা খসে পড়ে রড বেরিয়ে রয়েছে। তখনও মেঝেতে বৃষ্টির পানি জমে আছে। এরপরেও ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান চলছে ভবনটিতে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃষ্টি হলেই ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মোসাঃ মানসুরা বলে,‘বৃষ্টির সময় ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। এখন আবার ছাদ ভেঙ্গে পড়ছে। এই ভবনে ক্লাস করতে আমাদের ভয় লাগে। আমাদের নতুন ভবন চাই।’ একই কথা বলে দ্বিতীয় শ্রেণীর মোঃ মুসা, পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মোঃ বান্না ও কারিমা সুলতানা। মোঃ জহির নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘যে কোন সময় ভবনটির ছাদ ধসে পড়তে পারে। এমন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে তাদের সন্তানদের ক্লাস করতে পাঠিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়।’ তিনি খুব শীঘ্রই নতুন নির্মাণের দাবি করেন। ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাধবী রানী বলেন, ‘আজকে (বৃহস্পতিবার) অল্পের জন্য শিশু শিক্ষার্থীরা দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। যদি ক্লাস চলাকালীন বিমের ওই বিশাল অংশ ভেঙ্গে পড়ত তাহলে শিশুদের কি অবস্থা হতো তা সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কারও পক্ষে বলা সম্ভব না।’ প্রধান শিক্ষক সারমিন সুলতানা শামিমা বলেন, ‘বিদ্যালয়টিতে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আছে। পুরো বর্ষা মৌসুমেই ছাদ চুইয়ে পানি পড়েছে। অন্য কোন ভবন না থাকায় বৃষ্টি হলেই পাঠদান বিঘিœত হয়। এখন আবার ভবনের বিম ও ছাদের সুড়কি ভেঙ্গে পড়ছে ও পলেস্তরা খসে পড়ছে। ভয়ে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে চাচ্ছে না। আর অভিভাবকরাও তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। এ কারণে দিন দিন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে যাচ্ছে।’ আড়াইনাও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসাঃ হাসিনা বেগম বলেন, ‘তার বিদ্যালয়েও বৃষ্টির সময় ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। পিলার ও বিমের সুড়কি এ পলেস্তরা খসে পড়ে রড বেরিয়ে রয়েছে। ওই ভবনে ক্লাস করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে বিকল্প টিনশেড ভবন তৈরি করে পাঠদানের ব্যবস্থা করা জরুরী।’ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ রিয়াজুল হক বলেন, ‘সরেজমিনে দেখেছি বিদ্যালয় দুটির ভবন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই বিকল্প টিনশেড তৈরি করে পাঠদানের ব্যবস্থা করা হবে।’
×