ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সাহসী নেতৃত্বে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা

প্রকাশিত: ০৯:০৪, ২৩ আগস্ট ২০১৯

সাহসী নেতৃত্বে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা

এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ২০১৯ দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে বাংলাদেশের মোট জাতীয় উৎপাদনের ফোরকাস্টে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। এদেশের মোট জাতীয় উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা তারা ৮% উল্লেখ করেছে। এর পরেই রয়েছে ভারতের অবস্থান, যার মোট জাতীয় উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৭.২%, মালদ্বীপে ৬.৫%, নেপালে ৬.২%, ভুটানে ৫.৭%, পাকিস্তানে ৩.৯%, শ্রীলঙ্কা ৩.৬%, আফগানিস্তানে ২.৫%। মোট জাতীয় উৎপাদনের এ প্রবৃদ্ধি বৈশ্বিক প্রক্ষাপটে বাংলাদেশের জন্য প্রশংসনীয়। কেননা সামগ্রিক অর্থে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্য দিয়ে জাতীয় উৎপাদনের যে প্রবৃদ্ধি ঘটেছে তা দেশকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাতে সাহায্য করেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বগুণে এ উন্নয়ন তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। দেশে আজ সামাজিক রীতি আদি উদ্ভাবন ঘটছে এবং মানুষের প্রয়োজনের নিরিখে তা সর্বত্র ব্যবহৃত হচ্ছে। যুগোপযোগী লাগসই প্রযুক্তির কলা-কৌশল মানুষকে সামনে এগিয়ে নিতে সহায়তা করছে। প্রতিটি দেশের নিজস্ব চাহিদা থাকে। সে অনুপাতে বাজার ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হয়। সরবরাহ তখনই সম্ভব হয়, যখন সাধারণ মানুষের মধ্যে চাহিদার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ, ইচ্ছা এবং প্রেষণা তিনটি একত্রে কাজ করে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষের মাঝে ভোগ প্রবণতা ও আয়ের উৎস সৃষ্টি করার জন্য নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন। বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশ ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ (নামমাত্র হিসাবে) এবং ক্রয় ক্ষমতার দিক দিয়ে ৩০তম অর্থনীতির দেশ। এ অবস্থায় দেশে যত বেশি শিল্প-কল-কারখানা গড়ে উঠবে, কৃষিনির্ভর ও অকৃষিজ কর্মকা-ও প্রসারিত হবে এবং মানুষকে আয়ের উৎসমূলে সংযুক্ত করা যাবে তত দারিদ্র্য দূরীকরণ করা সম্ভব হবে এবং মানুষ প্রকৃত অর্থে উন্নয়নের যে সুফল বর্তমানে প্রবাহিত হচ্ছে তাতে অংশ নিয়ে সুবিধা ভোগ করতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী বার বার দুর্নীতি বরদাশত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলেন, যাতে করে উন্নয়নের গতিধারা ব্যাহত না হয়। তার ভাষ্যমতে সবাইকে মনে রাখা উচিত উন্নয়নের নিরবচ্ছিন্ন গতি প্রকৃতি যেন দুর্নীতির কারণে বাধাগ্রস্ত না হয়। যারা ঘুষ প্রদান করেন, তারাও সমদোষে দোষী হিসেবে আখ্যায়িত করেন। দুর্নীতি আসলে একটি বৈশ্বিক সমস্যা- এ সমস্যা সব দেশেই কম-বেশি রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতি যে ধরনের শ্রেণীবিন্যাস হয়েছে, তাতে সমাজের সর্বস্তরে দুর্বৃত্তায়ন ঢুকে গেছে। দেশের অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে সব দেশেই ঋণ ও আয় বৈষম্য সৃষ্টি হতে পারে। কারণ, পুঁজি সব সময়েই যারা দখল করতে পারে তাদের হাতে থাকে। এক্ষণে দেখার বিষয় সে পুঁজি দেশে বিনিয়োগ হয়েছে কি-না। যদি পুঁজি দেশে বিনিয়োগ হয় তবে তা কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ তৈরি করতে হবে। পুঁজির স্বাভাবিক ধর্ম হচ্ছে তৃণমূূল পর্যায় থেকে গ্রাম হয়ে শহরে, শহর থেকে রাজধানীতে এবং রাজধানী বুর্জোয়া লাভজনক স্থানে গমন করে। সচরাচর পুঁজি দেশে ফেরত আসে না। এমতাবস্থায় সেবা খাতের সঙ্কোচন করে শিল্পখাত উন্নয়ন এবং কৃষি খাত উন্নয়ন প্রয়োজন। দেশের অভ্যন্তরে তৃণমূল পর্যায়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে যাতে করে গ্রামীণ এলাকার মানুষ শহরে না আসে। আওয়ামী লীগের ২০১৮-এর নির্বাচনী ইশতেহারে গ্রামীণ এলাকায় শহরাঞ্চলের সুযোগ-সুবিধা দেয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। সে মোতাবেক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। তবে যাদের ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারা যেন নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন এবং গ্রামীণ এলাকায় অপ্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় রূপান্তরের ব্যবস্থা করেনÑ সেদিকে বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নে উদ্যোগী হোন। লেবার ফোর্স সার্ভে অনুসারে, বাংলাদেশে বেকারের হার হচ্ছে ৪.২% যার মধ্যে ছেলেদের শতকরা হিসাবে ৩.১% এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ৬.৭%। এদিকে ১৫-২৪ বছরের যুবক-যুবতীদের বেকারত্ব হচ্ছে ১২.৩% যা ছেলেদের হিসাবে ১০.১% এবং মেয়েদের হিসাবে ১৬.৮%। অন্যদিকে দীর্ঘ মেয়াদী বেকারত্বের হার হচ্ছে ১৫.২% যা ছেলেদের ক্ষেত্রে ১৩.৭% এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৬.৭%। শ্রমশক্তির যে অংশ নিষ্ক্রিয় রয়েছে তাদের হার হচ্ছে ৪১.৮% যার মধ্যে ছেলেদের হার হচ্ছে ১৯.৫% এবং মেয়েদের মধ্যে হার হচ্ছে ৬৩.৭%। আসলে আমাদের গণনা পদ্ধতিতেও ও সংস্কার প্রয়োজন। একজন মা, যিনি সন্তান-লালন পালন করেন, পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ সন্তানের মধ্যে ঢুকিয়ে দেন তাকে নিষ্ক্রিয় বলাটা কি ঠিক? আবার যে কৃষক সেচে পানি দিচ্ছেন তাকে মোট জাতীয় উৎপাদন ব্যবস্থাতে আনয়ন করা দরকার। তারপরও প্রতিটি গ্রামীণ এলাকায় খাস জমিতে সেখানকার যে সমস্ত মৌসুমী ফল-মূল আছে, সেগুলো সংরক্ষণ করে সারা বছর ব্যবহারোপযোগী করার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এ ব্যাপারে একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে। ধরুন, আম সেটি যদি স্থানীয় পর্যায়ে সংরক্ষণ করা যায় এবং সারা বছর ধরে সরবরাহের ব্যবস্থা করা যায় তবে তা দেশের উন্নয়ন কর্মকা-কে সমৃদ্ধ করবে। দেশে অনেকে বিদেশ থেকে অর্থ প্রেরণ করে সামাজিক কল্যাণের অংশ নিতে চায়। দুর্ভাগ্যজনক যে, যারা প্রবাসী তারা যাতে ঙহব ংঃড়ঢ় ংবৎারপব-এর আওতায় কোন ফাউন্ডেশন, ক্লাব বা কমিউনিটি সার্ভিসের জন্য অর্থ প্রেরণ করবেন সে জন্য কোন সহজ পদ্ধতি নেই। হয়ত পনেরো দিনের ছুটিতে আসলেনÑ বিভিন্ন ধাপে তাদের এত হয়রানি হয় যে, বিদেশে ফেরত চলে যান। এ জন্য একটি ঙহব ংঃড়ঢ় ংবৎারপব গড়ে তোলা দরকার যেখানে ঙভভরপরধষ ঈযধহহবষ-এ মানব কল্যাণে প্রবাসীরা দেশে অর্থ প্রেরণ করতে পারেন। কেবল জঙ্গীরা যাতে অর্থ প্রেরণ করতে না পারে, কিংবা সন্ত্রাসীরা সে জন্য অবশ্যই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থ্য থাকতে হবে। ঘুষ ব্যতীত এবং কর কাঠামোয় কল্যাণমূলক কাজে প্রেরিত অর্থকে উৎস সহকারে রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে সহযোগিতার সঙ্গে বরণ করতে হবে। বাংলাদেশে মৎস্য এবং গবাদিপশু দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কৃষি খাতে মৎস্য এবং গবাদিপশুর অবদান হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ, যা মোট জাতীয় উৎপাদনের ৭ থেকে ৮ শতাংশ। মৎস্য ও গবাদিপশু পালন বাংলাদেশের এ সাফল্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বিভিন্ন স্থানে বিজনেস ক্লাস্টারও করা হচ্ছে। গবাদিপশু মোটা তাজাকরণের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। তবে গবাদিপশু যারা পালন করেন বিশেষত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক খামারিরা তারা যেন পালনের পূর্বে প্রাণীটি পালনে কত খরচ হবে এবং প্রাণীটি পালন করলে কি দামে বিক্রি করা যাবে- সে সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট আনুমানিক ধারণা পোষণ করতে পারেন। নচেৎ প্রাণী পালন করে এক দল লাভবান হবেন আরেক দল ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সেটি ঠিক দেখায় না। কেননা যারা মাঝারি মানের খামারি তার হয়ত ১৫-২০টি গবাদিপশু থাকে, একটি/দুটিতে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ও অন্যগুলো দিয়ে পুষিয়ে নেন। প্রান্তিক এবং ক্ষুদ্র খামারিদের তো এ সুযোগ নেই। আয়বর্ধক কার্যক্রমের আওতায় গবাদিপশু, মাছ, মুরগি, তিতির, টার্কি, শাক-সবজি উৎপাদন করে অনেকেই গ্রামীণ এলাকায় বিশেষত মহিলারা স্বাবলম্বী হচ্ছেন’ সেখানে সামাজিক অভিনবত্ব বিকাশমান। এ পর্যায়ে ধান কাটার ক্ষেত্রে যদি সামষ্টিকভাবে যৌথ ব্যবস্থাপনায় উদ্যোগ নেয়া যায় তবে সকলের সুবিধা হবে। কেননা এখন গ্রামীণ এলাকায় নানা উপকরণ ও সুযোগ-সুবিধার বিকিরণ ও গ্রহণযোগ্যতা কাজ করছে। আসলে দেশের উন্নয়নে সরকার যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, সেটিকে আমাদের নিজেদের স্বার্থেই ভাল ও দক্ষভাবে এবং কার্যকরীভাবে ব্যবহার করতে হবে। একটি সুন্দর, মানবিক ও গঠনমূলক সমাজ ব্যবস্থা প্রয়োজন। যে সমাজ ব্যবস্থায় ধীরে ধীরে দীর্ঘদিনের ত্রুটিবিচ্যুতি আস্তে আস্তে সংশোধিত হবে। সরকার যে দ্রুততার সঙ্গে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে, তা যেন সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত হয়। বর্তমান সরকারপ্রধান জনগণের কল্যাণের কথা ভাবেন এটাই তার মহত্ত্বের এবং নেতৃত্বের প্রধান বৈশিষ্ট্য। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে মানুষকে ঘিরে উন্নয়ন পরিকল্পনা হচ্ছে। লেখক : শিক্ষাবিদ এবং অর্থনীতিবিদ [email protected]
×