ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সুন্দরবন থেকে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশিত: ১১:০৫, ২২ আগস্ট ২০১৯

সুন্দরবন থেকে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মরদেহ উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ সুন্দরবন থেকে একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মরদেহ উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের ছাপড়াখালী এলাকায় বনের মধ্য থেকে বাঘের মরদেহটি উদ্ধার করে বন বিভাগ। সাত ফুট লম্বা উদ্ধার হওয়া মরদেহটি পূর্ণবয়স্ক বাঘিনীর বলে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান নিশ্চিত করেছেন। বুধবার দুপুরে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ কার্যালয়ে বাঘের মরদেহটি আনা হয়েছে। মরদেহের ময়নাতদন্ত করে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে সুন্দরবন থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে বিষয়টি বুধবার দুপুরেই গণমাধ্যমকর্মীদের অবহিত করা হয়। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়ে মৃত বাঘ দেখার জন্য বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ খুলনার ডিএফও মদিনুল আহসান ও সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের ডিএফও মাহমুদুল হাসানসহ উর্ধতন বন কর্মকর্তারা শরণখোলা রেঞ্জে যান। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, চাপড়াখালী এলাকায় টহলের সময় বনরক্ষীরা বাঘিনীটির মরদেহটি দেখতে পায়। পরে তা উদ্ধার করে শরণখোলা রেঞ্জ কার্যালয়ে নিয়ে যায়। বন বিভাগের তত্ত্বাধানে শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার দু’জন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সমন্বয়ে বাঘটির ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মোঃ মঈনুদ্দিন খান জানান, মঙ্গলবার রাতে নিয়মিত টহলের সময় বনরক্ষীরা মৃত বাঘিনীকে ছাপড়াখালী খালের কাছ পড়ে থাকতে দেখেন। তারা মৃতদেহটি উদ্ধার করে শরণখোলা রেঞ্জ কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। পূর্ণবয়স্ক এই বাঘিনীর দৈর্ঘ্য প্রায় সাত ফুট। তার দেহে কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। বাহ্যিক আঘাতের চিহ্ন না থাকায় প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বার্ধক্যজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। সাধারণত, শিকারীরা হত্যা করলে বা অন্য কোনভাবে হত্যা করা হলে কোন আঘাতের চিহ্ন থাকার কথা। তেমনটা নেই। এর বাইরে অনেক সময় বনের মঝে টেরিটোরিয়াল বা এলাকা সংরক্ষণের সংঘাতেও বাঘের মৃত্যু হতে পারে। বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ খুলনার ডিএফও মদিনুল বলেন, ময়নাতদন্ত ছাড়াও মৃত্যুর কারণ জানতে বাঘটির শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কিছু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঢাকায় বন বিভাগের ফরেন্সিক ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। ময়নাতদন্ত ও ফরেন্সিক পরীক্ষার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সবচেয়ে বেশি ঘনত্ব শরণখোলা রেঞ্জে। এ রেঞ্জের মধ্যে আবার কটকা ও কচিখালীতে বাঘের বিচরণ সবচেয়ে বেশি। গোটা বিশ্বে বাঘের সংখ্য হাতেগোনা। একটি বাঘের মৃত্যু আমাদের সবার জন্য অত্যন্ত দুঃখের। সুন্দরবন এলাকায় বাঘের গড় আয়ু ১৪ থেকে ১৬ বছর। এদিকে সুন্দরবনে মৃত বাঘ পাওয়ায় শঙ্কা প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদীরা। সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. ফরিদুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে বিষ প্রয়োগ করে মাছ ধরা বন্ধ করতে হবে। বিষক্রিয়ার ফলে নদী ও খালের পানি বিষযুক্ত থাকে। ফলে শুধু মাছ নয় অন্যান্য প্রাণীও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাঘটি এর প্রভাবেও মারা যেতে পারে। তবে বাঘটির মারা যাওয়ার সঠিক কারণ উদঘাটন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি। পরিবেশবাদী গবেষক ও উন্নয়নকর্মী মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুল জলিল বলেন, সুন্দরবনের যে জীববৈচিত্র্য রয়েছে তা টিকিয়ে রাখতে হবে। কোন একটি প্রাণী সুন্দরবন থেকে বিলুপ্ত হলে জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে। আর সুন্দরবন না থাকলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে। তাই সুন্দরবনের সুরক্ষা এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে তিনি সবাইকে আরও যতœবান হওয়ার আহ্বান জানান।
×