ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আইনজীবী পলাশকে পঞ্চগড় কারাগারে হত্যার প্রমাণ পাওয়া যায়নি

প্রকাশিত: ১০:৫৭, ২২ আগস্ট ২০১৯

আইনজীবী পলাশকে পঞ্চগড় কারাগারে হত্যার প্রমাণ পাওয়া যায়নি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পঞ্চগড় কারাগারে আইনজীবী পলাশ কুমার রায়কে হত্যার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পলাশের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনটি বুধবার আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। এদিকে শুনানি শেষে আদালত ওই বিচারিক তদন্ত প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব ও আইজি প্রিজন বরাবর পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে পঞ্চগড় কারাগারে নিরাপত্তা ও কারা হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিয়ে প্রতিবেদনে উঠে আসা অভিযোগের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র সচিব ও আইজি প্রিজনকে ১৫ অক্টোবরের মধ্যে জবাব দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মোঃ বদরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ বুধবার এ আদেশ প্রদান করেছে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেছেন, পঞ্চগড়ে কারাগারে আইনজীবী পলাশ কুমার রায়কে হত্যা করা হয়েছে এ ধরনের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পলাশের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। তবে তদন্ত প্রতিবেদনে অনিয়মের কারণে স্বরাষ্ট্র সচিব ও আইজি প্রিজনকে জবাব দিতে বলা হয়েছে। শুনানিকালে বিচারিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে আদালত বলে, আপাত এটি আত্মহত্যার ঘটনা বলেই ধারণা করা হচ্ছে। রিটকারী আইনজীবী প্রতিবেদনের ওপর শুনানি করে আদালতকে বলেন, আইনজীবী পলাশের গায়ে আগুন লাগার ২৪ ঘণ্টা পর তার চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করা হয়। দাফতরিক ও আনুষঙ্গিক কাজের জন্য অনেকটা সময় গিয়েছে। সুচিকিৎসা পেলে অগ্নিদগ্ধ পলাশ কুমারকে বাঁচানো যেত। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষের গড়িমসি ও সিদ্ধান্তহীনতার কারণে সময়মতো চিকিৎসা না করায় তার মৃত্যু হয়। এরপর আদালত ওই বিচারিক প্রতিবেদনে পঞ্চগড় কারাগারে গ্যাস লাইটারের অবাধ ব্যবহার, অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা না থাকা, কারাগারের ভেতরে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা না থাকা, কারাগারে জেল সুপার না থাকা, কারা হাসপাতালে ডিপ্লোমা নার্সের দায়িত্ব পালন ও একটি খুনের মামলার আসামিকে দিয়ে সার্জিক্যাল বিভাগের দায়িত্ব পালন করানোর মতো বেশ কিছু অভিযোগ দেখতে পান। গত ৮ মে পঞ্চগড় কারাগারে অগ্নিদগ্ধের পর হাসপাতালে আইনজীবী পলাশ কুমার রায়ের (৩৬) মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। পাশাপাশি কারাগারের ভেতর মৃত্যুর ঘটনায় কারা কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছিল। প্রসঙ্গত গত ২৫ মার্চ দুপুরে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে কোহিনুর কেমিক্যাল কোম্পানির দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনশন শুরু করেন আইনজীবী পলাশ কুমার রায়। রাস্তা বন্ধ করে হ্যান্ডমাইকে মানববন্ধন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তি, প্রশাসন ও পুলিশ সম্পর্কে অশালীন বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে স্থানীয়রা তাকে পুলিশে সোপর্দ করেন। ওইদিন বিকেলে প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করার অভিযোগে রাজিব রানা নামের একজন তার বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেন। এরপর সেদিনই তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। গত ২৬ এপ্রিল বিকেলে ঢাকা পাঠানোর কথা ছিল আইনজীবী পলাশকে। কিন্তু ওইদিন সকালে হঠাৎ হাসপাতালের বাইরে থাকা একটি টয়লেট থেকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় দৌড়ে বের হন তিনি। এ সময় কারারক্ষীরা তাকে উদ্ধার করে এবং শরীরের আগুন নেভান। আগুনে তার শরীরের ৪৭ শতাংশ পুড়ে যায়। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ (রমেক) হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরদিনই তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। পরে গত ৩০ এপ্রিল দুপুরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
×