ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি জামায়াতের পৃষ্টপোষকতা ছাড়া ২১ আগস্টের মত ঘটনা ঘটানো সম্ভব না

প্রকাশিত: ০৮:২০, ২১ আগস্ট ২০১৯

বিএনপি জামায়াতের পৃষ্টপোষকতা ছাড়া ২১ আগস্টের মত ঘটনা ঘটানো সম্ভব না

অনলাইন রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি জামায়াতের পৃষ্টপোষকতা ছাড়া ২১ আগস্টের মত ঘটনা ঘটানো সম্ভব না-এটা আজকে প্রমাণিত সত্য। এটা নিয়ে আমরা একটা রায়ও পেয়েছি। বুধবার বিকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশনে ২১ আগস্টের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনা সে সময়ের সরকারের পক্ষ থেকেই করা হয়েছিল। সেদিন আমি ওই এলাকা ছেড়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় লাঠিচার্জ। সিটি করপোরেশনের গাড়ি এনে পানি দিয়ে আলামত মুছে ফেলা হয়। আমি জানতে পেরে নানককে বলি, আলামত নষ্ট করছে, তোমরা ওখানে যাও। আমাদের নেতাকর্মীরা সেখানে গিয়ে গ্রেনেড হামলার স্থলগুলোতে লাল পতাকা পুঁতে আলামত রক্ষার চেষ্টা করে। অবিস্ফোরিত গ্রেনেড পাওয়া গিয়েছিল। সেটি সেনা অফিসার নিয়ে যায়, সে সেটা রাখতে চেয়েছিল বলে চাকরি হারায়। কোনও আলামত না রাখার চেষ্টা তারা করেছিল। এ হামলা সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়েছিল। শেখ হাসিনা বলেন, ২১ আগস্টের আগে খালেদা জিয়ার বক্তব্য ছিল- ‘আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা জীবনেও বিরোধীদলীয় নেতাও হতে পারবে না।’ কিন্তু আল্লাহর মাইর দুনিয়ার বাইর বলে একটা কথা আছে। মানুষ বোঝে না আল্লাহর শক্তি কত? যে অভিশাপ খালেদা জিয়া আমার জন্য দিয়েছিল এখন তা তার কপালেই জুটে গেছে।এটা হলো বাস্তবতা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তদন্ত করা হয়েছে। যারা আসামি তারা শাস্তি পেয়েছে। ২১ আগস্টের ঘটনায় খালেদা জিয়ার সহযোগিতা থাকলেও তাকে আসামি করা হয়নি। সে তো প্রধানমন্ত্রী ছিল-তার সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব ছিল। এটা অস্বীকার করা যায় না। কারণ খালেদা জিয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিল। আর বাবর কিন্তু স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিল। সে ক্ষেত্রের তার দায়িত্ব তো অস্বীকার কেউ করতে পারে না। শেখ হাসিনা বলেন, ২১ আগস্টের ঘটনার পরে খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে সব নেতা কর্মীদের একই সুর যে আওয়ামী লীগ নিজেরাই গ্রেনেড মেরেছে। আমরা নিজেরা মেরেছি বলতে আমরা নিজেরাই আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলাম। কবে গ্রেনেড মারায় এক্সপার্ট হলাম?- সেটা তো জানি না। এতগুলো গ্রেনেড হাতে করে নিয়ে যাওয়া তো সহজ কথা নয়। সেখানে অনেক টেলিভিশন ছিল রেকর্ড করার সরঞ্জামাদি ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গ্রেনেড হামলার বিরুদ্ধে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, আওয়ামী নেতা কর্মীদের নিয়ে আমরা শান্তির মিছিল করতে চেয়েছিলাম। ওই সময় বিএনপি ও জামায়াত সরকার ক্ষমতায়-তাদের মদত ছাড়া এটা হতে পারে না। ২১ আগস্টের দুঃসহ ঘটনার স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ ঘটনার পর তাদের ধারণা ছিল, আমি মারা গেছি। গ্রেনেড হামলার পর নিচে নেমে আমি যখন গাড়িতে উঠতে যাবো তখন আবার গুলি করা হলো। আগস্ট মাস এলেই যেন অশনি সংকেত বয়ে নিয়ে আসে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগস্ট মাস এলেই যেন অশনি সংকেত নিয়ে আসে।বারবার হামলা হয়েছে। বারবার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাকে ঢাল হিসেবে রক্ষা করেছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। আশা করি এর বিচার হবে। প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের আয়োজনে অনুষ্ঠিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। এতে আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন; আহত হন কয়েকশ’ নেতাকর্মী। সেদিন অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে শ্রবণশক্তির ক্ষতি হয় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। পরে ওই ঘটনায় হত্যা, হত্যাচেষ্টা, ষড়যন্ত্র ও সহায়তাসহ বিভিন্ন অভিযোগে একটি এবং বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইনে আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়। দীর্ঘ নাটকীয়তার পর ওই দুই মামলার ওপর ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর রায় দেন ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূরউদ্দিন। রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া রায়ে তিন সাবেক আইজিপিসহ ১১ সরকারি কর্মকর্তার বিভিন্ন মেয়াদে লঘুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। রায় ঘোষণার পর ২০১৮ সালের ২৭ নবেম্বর এ মামলায় আসামিদের জেল আপিল ও ডেথ রেফারেন্স সংবলিত প্রায় ৩৭ হাজার ৩৮৫ পৃষ্ঠার নথি অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে আসে। পরে গত ১৩ জানুয়ারি এ মামলা শুনানির জন্য গ্রহণ করে পেপারবুক তৈরির নির্দেশ দেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।
×