ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অর্থনৈতিক বিকাশে প্রধান বাধা দুর্নীতি ॥ দুদক চেয়ারম্যান

প্রকাশিত: ০৮:১৫, ২১ আগস্ট ২০১৯

অর্থনৈতিক বিকাশে প্রধান বাধা দুর্নীতি ॥ দুদক চেয়ারম্যান

অনলাইন রিপোর্টার ॥ দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক বিকাশের প্রধান অন্তরায় দুর্নীতি, এমনটি মনে করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। তিনি বলেছেন, তাত্ত্বিকভাবে অনেকে বলেন অর্থনৈতিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতিও বিকশিত হয়। কমিশন এই দুর্নীতিকেই নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলে নিরলসভাবে কাজ করছে। বুধবার জাতিসংঘ উন্নয়ন তহবিলের (ইউএনডিপি) প্রতিনিধি ফিলিয়াট ম্যাটসেজার নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি একথা বলেন। বৈঠকে ফিলিয়াট ম্যাটসেজা দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপসহ সাবির্ক কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চান। এসময় দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুদক দুর্নীতি দমন, প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের সকল কার্যক্রম সমগুরুত্বে পরিচালনা করছে। প্রতিকারমূলক কার্যক্রমের ফলাফল স্বয়ংক্রিয়ভাবেই প্রতিরোধমূলক কার্যেই পরিগণিত হয় বলে অনেকেই মনে করেন। কারণ দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত এবং প্রসিকিউশনের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি হলে তা দুর্নীতি প্রতিরোধেও বিশেষ ভূমিকা রাখে। তিনি বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে কমিশন বহুমাত্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নৈতিক মূল্যবোধে জাগ্রত করার লক্ষ্যে দেশের স্কুল, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২৮ হাজার ‘সততা সংঘ’ গঠন। সততা সংঘের প্রতিটি কমিটিকে বছরে প্রায় ৪২০০ টাকা দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, সততা সংঘের সদস্যরা এই সামান্য অর্থ দিয়ে বছরব্যাপী দুর্নীতি প্রতিরোধ ও উত্তম চর্চার বিকাশে বিতর্ক প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতা , নাটকসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। তিনি আরও বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জেলা, উপজেলা, নগর/মহানগর পর্যায়ের স্বচ্ছ এবং সৎ মানুষদের নিয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটিও দুর্নীতি প্রতিরোধে স্ব স্ব উদ্যোগে উত্তম চর্চার বিকাশে বহুমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ইকবাল মাহমুদ বলেন, সরকারি সেবা প্রদানের প্রক্রিয়াকে পদ্ধতিগত সংস্কারের মাধ্যমে ঘুষ, দুর্নীতি, দীঘসূত্রী এবং জনহয়রানি লাঘবের লক্ষ্যে কমিশন ২৮টি প্রাতিষ্ঠানিক টিম গঠন করেছে। এসব টিম সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান আইন, বিধি, পরিচালনা পদ্ধতি, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ/অপচয়ের দিকসমূহ পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে এসব প্রতিষ্ঠানের জনসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সফলতা ও সীমাবদ্ধতা, আইনি জটিলতা, সেবা গ্রহীতাদের হয়রানি ও দুর্নীতির কারণসমূহ চিহ্নিত করে তা বন্ধে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করে প্রতিবেদনসমূহ সরকারের নিকট পেশ করা হচ্ছে। দুর্নীতি প্রতিরোধে কমিশন বিজনেস প্রসেস রিইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর অধিকতর গুরুত্বারোপ করছে। কমিশন কর্তৃক বাস্তবায়িত গণশুনানি সম্পর্কে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে সরকারের কল্যাণমূলক কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির একটি অন্যতম কৌশল হচ্ছে গণশুনানি। গণশুনানিকে সরকারি সেবাপ্রত্যাশী জনগণ এবং সেবা প্রদানে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের মধ্যে প্রত্যক্ষ সংযোগের একটি প্রক্রিয়াও বলা যেতে পারে। এতে স্থানীয় পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাদিহিতা নিশ্চিত হচ্ছে। এছাড়া সততা স্টোরসহ অন্যান্য প্রতিরোধমূলক কার্যক্রমও চলছে। তিনি বলেন, কমিশনের এনফোনর্সমেন্ট ইউনিট প্রায় প্রতিদিনই একাধিক স্থান বা সংস্থায় দুর্নীতি সংঘটিত হওয়ার আগেই তা প্রতিরোধে অভিযান চালাচ্ছে। কমিশনের প্রায় ৭০ ভাগ মামলায় অপরাধীদের শাস্তি হচ্ছে। কমিশন শতভাগ মামলায় শাস্তি প্রত্যাশা করে। তদন্তের ক্ষেত্রে কমিশনের সক্ষমতা এখনও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছায়নি উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এই সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিগত তিন বছরে প্রায় তিন হাজার কর্মকর্তাকে (একই কর্মকর্তাকে একাধিক বিষয়ে একাধিক বার) প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ইউএনডিপিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার টেকনিক্যাল সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে। ফিলিয়াট ম্যাটসেজা দুদকের কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, দুর্নীতি বৈশ্বিক সমস্যা। দুর্নীতি দমন কমিশনের সঙ্গে দুর্নীতি প্রতিরোধমূলক কাজে ইউএনডিপির সহযোগিতার ক্ষেত্র রয়েছে।
×