ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইমরান আমেরিকায় গিয়ে কি পেলেন

প্রকাশিত: ১২:৩০, ২১ আগস্ট ২০১৯

ইমরান আমেরিকায় গিয়ে কি পেলেন

পাকিস্তানের প্রতি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মনোভাবের পরিবর্তন ঘটেছে। বেশি দিন আগের কথা নয়। এই তো গত নবেম্বরে ট্রাম্প পাকিস্তানের প্রতি বিষোদগার করেছিলেন। দেশটির বিরুদ্ধে কপটতা, দু’মুখো নীতি ও অসাধুতার অভিযোগ এনেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে আমেরিকার অবিশ্বস্ত মিত্র শত শত কোটি ডলার সাহায্য পেয়েছিল অথচ বিনিময়ে কিছুই করেনি। দেশটিকে সামরিক সাহায্য বন্ধের যৌক্তিকতা দেখাতে গিয়ে তিনি ওকথা উল্লেখ করেছিলেন। সেসময় পাকিস্তানের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পাল্টা বলেছিলেন যে তাঁর দেশ আফগানিস্তানে মার্কিন ব্যর্থতার বলির পাঁঠা হতে হতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। ইমরান আরও বলেছিলেন পাকিস্তান আর কারোর যুদ্ধে লড়তে যাবে না। কিন্তু সেই প্রেক্ষাপট এখন বদলে গেছে। গত ২২ জুলাই প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আমেরিকা সফরে যান। হোয়াইট হাউজে তিনি ও ট্রাম্প প্রথম মুখোমুখি বৈঠকে মিলিত হন। আমেরিকার ক্রোধের জায়গায় স্থান পায় নরম সুর। ট্রাম্প ইমরানের সুখ্যাতি করেন। দু’দেশের ভবিষ্যত সম্পর্ক উজ্জ্বল বলে মনে হয়। বাণিজ্য চুক্তির কথা শোনা যায় এবং পাকিস্তানে মার্কিন সাহায্য প্রবাহ আবার শুরু হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে ট্রাম্প রূঢ় ভাষায় সদম্ভে বলেন যে তিনি আফগানিস্তানকে পৃথিবীর বুক থেকে মুছে দিতে পারেন। কিন্তু কথাগুলো ইমরান খানের চেহারায় উদ্বেগের কোন ছাপ ফেলেনি। ট্রাম্পের দল কাশ্মীর বিরোধ মীমাংসায় মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দেন। তাতে ইমরানের চাঙ্গাবোধ হওয়ার কথা যদিও সেই মধ্যস্থতা যে কিছুই বয়ে আনবে না সে ব্যাপারে সবাই নিশ্চিত। ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিল্লীতে ক্রোধের ভাব সঞ্চার করেছে যা স্বাভাবিক। পাকিস্তানের প্রতি আমেরিকার মনোভাব পরিবর্তনের কারণ কি? কারণটা আফগান পরিস্থিতি। আফগানিস্তানের যুদ্ধে আমেরিকার ১৮ বছর জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করে ইয়ং ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি মনে করি সেখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসার ব্যাপারে পাকিস্তান আমাদের সাহায্য করতে পারে।’ কথাটার পুনরুল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান একটা বড় ধরনের পার্থক্য ঘটাতে যাচ্ছে।’ মার্কিন প্রশাসন আশা করে যে আমেরিকার জন্য একটা মুখ রক্ষার রাজনৈতিক সমাধানে তালেবানদের রাজি করাতে পাকিস্তান তার প্রভাব খাটাবে। সমাধানে পৌঁছানো গেলে মার্কিন সৈন্যরা দেশে ফিরে আসতে পারবে। আফগানিস্তানের ব্যাপারে ট্রাম্পের মুখপাত্র জালাম খালিদজাদের নেতৃত্বে আলোচনা মন্থরগতিতে এগোচ্ছে। সৈন্য প্রত্যাহার নিয়ে তালেবানরা আমেরিকার সঙ্গে কথা বলতে চায়। কিন্তু মার্কিন সৈন্য সরে যাওয়ার পর দেশ কিভাবে পরিচালিত হবে তা নির্ধারণের বিষয়ে তারা আফগান কর্মকর্তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় লিপ্ত হতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে। গত মাসে তারা আফগান সরকারের সদস্যদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে বসেছিল। কিন্তু আলোচনা অচলাবস্থার মধ্য দিয়ে শেষ হয়। ইমরান খান বলেন, সঠিক ব্যাপারটা হচ্ছে আমেরিকাকে পাকিস্তানের অভিপ্রায় সম্পর্কে আশ্বস্ত করা। তিনি জোর দিয়ে বলেন, তাঁর দেশ ভারতের বিরুদ্ধে স্ট্র্যাটেজিক সুবিধা পাওয়ার লক্ষ্যে আফগানিস্তানে নাক গলানোর যে নীতি নিয়েছিল তা পরিত্যাগ করেছে। সেনাবাহিনী তার নিজস্ব নীতি অনুসরণের জন্য সিভিলিয়ান সরকারের আড়াল থেকে কিছু করবে না। তিনি জানান, তিনি তালেবানদের সঙ্গে বসবেন এবং আফগানদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনার জন্য তাদের রাজি করানোর চেষ্টা করবেন। তবে আমেরিকা ও তার মিত্ররা এ ধরনের প্রতিশ্রুতি আগেও শুনেছে এবং হতাশ হয়েছে। জঙ্গীরা এখনো পাকিস্তানের ভিতরকার ঘাঁটি থেকে তৎরতা চালাচ্ছে। তবে আলোচনায় কতটুকু কি অগ্রগতি হয়েছে সে সম্পর্কে ওয়াকিফহাল কর্মকর্তারা বলেন, পাকিস্তান এখনও এ ব্যাপারে পূর্ণ উদ্যোগ নেয়নি। পাকিস্তানী জেনারেলা দরকষাকষি করে চলেছে। কেউ কেউ মনে করেন তালেবানরা এখনও জয়লাভ করতে পারে। তাই তাদের ওপর খুব বেশি চাপ সৃষ্টি করতে রাজি নয়। তবে আলোচনায় সাফল্য অর্জনে ওয়াশিংটনের সঙ্কল্প বেশ তীব্র। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পন্দিও বলেন, তিনি ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে একটা চুক্তিতে উপনীত হতে চান। তার জন্য আমেরিকা পাকিস্তানের ব্যাপারে তার আগের হতাশা কাটিয়ে উঠতে এবং এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি অবলম্বন করতে আগ্রহী। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×