ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি

প্রকাশিত: ১১:০৭, ২১ আগস্ট ২০১৯

ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি

নিখিল মানখিন ॥ ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। আর ডেঙ্গু রোগীর মৃতের সংখ্যা নিয়েও শুরু হয়েছে নানা বিতর্ক। সরকারী পরিসংখ্যানে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ৪০। আর এই সংখ্যা ১শ’ ছাড়িয়ে গেছে বলে দাবি বেসরকারী সূত্রসমূহের। ‘ডেঙ্গুজনিত মৃত্যু পর্যালোচনা কমিটি’ মৃত্যুর পূর্ণাঙ্গ কারণসমূহ পর্যালোচনা করার পরই ডেঙ্গুতে মৃত্যু হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে থাকে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। অন্যদিকে মৃত রোগীর ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়া এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসকসহ কর্তৃপক্ষ ডেঙ্গুতে মৃত্যু হওয়ার ঘোষণা দেয়ার পরও তা সরকারী তালিকাভুক্ত হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার পরে কেউ স্ট্রোক বা ব্রেইন এ্যাটাকে মারা গেলেও এই মৃত্যুর হিসাব ডেঙ্গুতেই করতে হবে। আরও কিছু সমস্যা একটি মৃত্যুর প্রভাবক হতে পারে- কিন্তু কেউ কোন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হলে সেটিকেই তার মৃত্যুর মূল কারণ হিসেবে গণনা করতে হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এটিই নিয়ম। দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা উঠানামা করলেও দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি আশঙ্কামুক্ত হয়নি। সরকারী-বেসরকারী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিনই গড়ে তিনজন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু ঘটছে। ডেঙ্গু টেস্টের মাধ্যমে পজিটিভ হওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলেও বক্তব্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসকসহ কর্তা ব্যক্তিরা। কিন্তু ডেঙ্গু রোগীর মৃতের সংখ্যা নিয়ে সরকারী ও বেসরকারী পরিসংখ্যানে ব্যাপক অমিল দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানা বির্তক ও সমালোচনা। ডেঙ্গুজনিত মৃত্যু পর্যালোচনায় গঠিত আট সদস্যের কমিটির প্রধান হলেন আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন, একটি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত না হয়ে কোন তথ্য প্রকাশ করা যায় না। মৃত্যু পর্যালোচনার প্রক্রিয়ার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার জন্য তিনটি ধাপে কাজ করা হয়। হাসপাতাল থেকে তথ্য পাওয়ার পর মৃত ব্যক্তির সমস্ত ক্লিনিক্যাল তথ্য নেয়া হয়। এরপর মৃত্যুর কারণ জানার জন্য উপসর্গ ও শারীরিক অবস্থার তথ্য বিচার এবং নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তৃতীয় ধাপে ল্যাব পরীক্ষায় দায়ী ভাইরাস পেলে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর বিষয়টি হিসাব করা হয়। তাই হাসপাতাল থেকে বলা হলেও তারা সঙ্গে সঙ্গে তা ঘোষণা করেন না। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ডেঙ্গুজনিত মৃত্যু পর্যালোচনা কমিটি রয়েছে। কমিটিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা আছেন। মৃত ব্যক্তির নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরই মৃত্যুর মূল কারণসমূহ বের করা সম্ভব। এভাবে এখন পর্যন্ত ৭০টি সম্ভাব্য মৃত্যু পর্যালোচনা করে ৪০ জনের ডেঙ্গুতে মৃত্যু হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে কমিটি। এটা নিয়ে বিতর্ক করা ঠিক না বলে মনে করেন মহাপরিচালক। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক বৈজ্ঞানিক ডাঃ মুস্তাক হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, ডেঙ্গু রোগীর মৃতের সংখ্যা তৈরি করা এবং ঘোষণা করার দায়িত্ব আইইডিসিআর’র নয়। এটি স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএস’র দায়িত্ব। ক্লিনিক্যালি কনফার্ম, উপসর্গ ও শারীরিক অবস্থার তথ্য বিচার বিচেনায় নিশ্চিত হয়ে চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুকে ডেঙ্গুজনিত মৃত্যু বলে ঘোষণা দিতে পারেন। তাছাড়া ডেঙ্গু শনাক্ত হয়ে চিকিৎসাধী ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুকে ডেঙ্গুজনিত মৃত্যু বলা যেতেই পারে। একই সুরে কথা বললেন আইইডিসিআর’র সাবেক পরিচালক ডাঃ মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, কোন দেশই মৃতুর এ ধরনের পর্যালোচনা করে না। পর্যালোচনা তখনই প্রয়োজন হয়, যখন কাউকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রশ্ন আসে। হাসপাতালে পরীক্ষা করে ডেঙ্গু নিশ্চিত করার পর রোগী মারা গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাওয়া এই তথ্যই তো যথেষ্ট। কিন্তু সে ঘোষণা মেনে না নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি করা হচ্ছে। ডেঙ্গুর জীবাণু নীরবে আঘাত হানে হার্ট, কিডনি ও ব্রেনে ॥ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাল্টে যাচ্ছে ডেঙ্গুর ধরন। ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পরও রোগীর শরীরে থাকা ডেঙ্গু জীবাণুর ধরন বুঝতে সময় লাগছে চিকিৎসকদের। ততক্ষণে রোগীর শরীরে থাকা ডেঙ্গুর জীবাণু দ্রুত আরেক রূপ ধারণ করছে। কিছু বুঝে উঠার আগেই আঘাত হানছে রোগীর ব্রেন, কিডনি, হার্ট ও লিভারে। তাই কোন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু ব্রেন, হার্ট, কিডনি ও লিভার সমস্যায় মৃত্যু হলে তার দায় ডেঙ্গুর জীবাণুর ওপরই গিয়ে পড়বে। ভক্টর বর্ন ডিজিজ নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা এসেন্ডের কান্ট্রি হেড অধ্যাপক ডাঃ বে-নজীর আহম্মেদ জনকণ্ঠকে বলেন, ডেঙ্গু বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। সব ডেঙ্গুই প্রাণঘাতী হয় না। চার ধরনের ডেঙ্গু (ডিইএনভি-১, ডিইএনভি-২, ডিইএনভি-৩ ও ডিইএনভি-৪) মধ্যে ঠিক কোন ধরনের ডেঙ্গুর প্রকোপ বাংলাদেশে বেশি, তা খতিয়ে দেখা জরুরী।
×