ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

একনেকে ৩ হাজার ৪৭০ কোটি টাকার ১২ প্রকল্প অনুমোদন

বিদ্যুতের লাইন মাটির নিচে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ১১:০১, ২১ আগস্ট ২০১৯

বিদ্যুতের লাইন মাটির নিচে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বর্তমানে বিদ্যুতের লাইন দৃশ্যমান হলেও ভবিষ্যতে এধরনের লাইন নিচে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়াও হাওড় এলাকায় সড়ক নির্মাণের সময় বর্ষার পানির প্রবাহ যেন আটকে না যায় সে বিষয়টির প্রতিও খেয়াল রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী কমিটি (একনেক) বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা এসব নির্দেশনা দেন। এ সময় তিনি আগামী দিনে পণ্য রফতানির জন্য দুটি কার্গো প্লেন কেনার কথাও বলেন। একনেক বৈঠকে ১২টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। ১২ প্রকল্পে মোট খরচ ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৪৭০ কোটি ২০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারী তহবিল থেকে ৩ হাজার ১৬৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৩০৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা খরচ করা হবে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব নূরুল আমিন, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম এবং ভৌত অবকাঠামো বিভাগের শামীমা নার্গিস। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমরা পরিকল্পনামাফিক কাজ করে দেশকে এগিয়ে নিতে চাই। এর আগেও বিদ্যুতের লাইন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন এই সভাতেও সেটি আবার জোর দিয়ে বলেছেন, যেন ভবিষ্যতে সব বিদ্যুতলাইন মাটির নিচে স্থাপন করা হয়। এ ছাড়াও নতুন করে স্লুইস গেট নির্মাণ না করারও নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কেননা এসব গেট মরিচা পড়ে কয়েক দিনের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায়। আর কাজ করে না। তাই একেবারেই অপরিহার্য না করে এসব গেট নির্মাণ করা যাবে না। এদিকে, কৃষি বিপণন অধিদফতর জোরদারকরণ প্রকল্পের অনুমোদন কালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সবজি রফতানির জন্য যেন নিজেদের কার্গো ব্যবহার করা যায় সেজন্য দু’টি কার্গো প্লেন কেনার আগ্রহের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। সভায় কৃষির প্রকল্প অনুমোদনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সবজি বিভিন্ন দেশে রফতানি করছি। এখন কার্গো প্লেন কেনার সময় এসেছে। দু’টি কার্গো কিনে ফেলেন। পরে অর্থসচিব বলেন, বিমানের অবস্থা ভাল। বিমান নিজের টাকা দিয়েই দু’টি কার্গো প্লেন কিনতে পারবে। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বাংলাদেশ সবজি উৎপাদনে অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সবজি রফতানি করা হচ্ছে। এ কাজে আমরা কার্গো প্লেন ভাড়া করছি। তাই, দুটি হিমায়িত কার্গো প্লেন কেনার বিষয়ে চিন্তা করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে, জিএনএস করস এর নেটওয়ার্ক পরিধি সম্প্রসারণ এবং টাইডাল স্টেশন আধুনিকীকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১১৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। থানচি-রিমকীর-মদক-লিকরি সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৮৫৩ কোটি টাকা। সুনামগঞ্জ-মদনপুর-দিরাই-শাল্লা-জলসুখা-আজমিরিগঞ্জ-হবিগঞ্জ মহাসড়কের শাল্লা-জলসুখা সড়কাংশ নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৭৬৯ কোটি টাকা। হাওড় এলাকার প্রকল্পের অনুমোদনকালে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়ে বলেন, খেয়াল রাখতে হবে যাতে বর্ষার পানির প্রবাহ আটকে না যায়। প্রয়োজনে অধিক সংখ্যক কালভার্ট দিতে হবে। এ বিষয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজের কথা বলেছেন। এছাড়াও এই অঞ্চলে প্রয়োজনের সময় পানি ব্যবহারের জন্য হাওড় অঞ্জলের খাল খনন করে আরও গভীর করার নির্দেশনাও দিয়েছেন। অনুমোদিত রাঙ্গামাটি সড়ক বিভাগের অধীন পাহাড়/ভূমি ধসে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের বিভিন্ন কিলোমিটারে ড্রেনসহ স্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২৪৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা। নানা দিক-নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বৃষ্টির পানিতে ভাঙ্গন রোধে পার্বত্য এলাকায় সড়কের উভয় পাশে চিকন বাঁশ রোপণ করতে হবে। নদীভাঙ্গন রোধে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ে জোর দিতে হবে। সভায় অনুমোদন পেয়েছে খুলনা কর ভবন নির্মাণ প্রকল্প। এর খরচ ধরা হয়েছে ৭১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, খুলনা লবণাক্ততা-প্রবণ এলাকা। এখানে ভবন নির্মাণের সময় বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। বড় সরকারী ভবনে ‘ডে কেয়ার সেন্টার’র ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও সভায় মধুমতি-নবগঙ্গা উপ-প্রকল্প পুনর্বাসন ও নবগঙ্গা নদী পুনঃখনন/ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে পুনরুজ্জীবন পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩০৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা। মেঘনা নদীর ভাঙ্গন হতে ভোলা জেলার চরফ্যাশন পৌর শহর সংরক্ষণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২৭৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। প্রকল্পটির প্রথম সংশোধন অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)। এ প্রকল্পে যাকে প্রকৌশলী নিয়োগ করা হয়েছে, তিনি সেখানকারই আরেকটি প্রকল্পের প্রকৌশলী ছিলেন। তার গাফিলতির কারণে সরকারকে প্রচুর অর্থ গচ্চা দিতে হয়েছিল। যে কারণে সরকারের ক্ষতি হয়েছিল। সেই প্রকৌশলী কীভাবে আবার চরফ্যাশন পৌর শহর সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক হলেন, তাতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক প্রকল্পে প্রকৌশলীর গাফিলতিতে টাকা নষ্ট হওয়ার পর তার শাস্তির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর কাছে জানতে চান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এর আগে এ ধরনের একটি প্রকল্পে ইঞ্জিনিয়ারের গাফিলতির কারণে অনেক টাকা নষ্ট হয়েছে। আবার ওই ইঞ্জিনিয়ার দেখি এ প্রকল্পের সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন। তাহলে তার তখনকার ভুলের জন্য কি শাস্তি দেয়া হয়েছে?’ এ সময় পানিসম্পদমন্ত্রী এবং সচিব কোন সদুত্তর দিতে না পারলে প্রধানমন্ত্রী শাস্তি নিশ্চিত করার কথা বলেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রী ও সচিব বলেন, ‘একনেক থেকে ফিরে গিয়েই তারা ওই ইঞ্জিনিয়ারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনী ও বিধিবিধানগত ব্যবস্থা শুরু করবেন।’ পরিকল্পনামন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর কথা উল্লেখ করে বলেন, ইঞ্জিনিয়ারের ভুলের জন্য আমাদের এত বড় ক্ষতি হলো, তাকে তিরস্কার না করে পুরস্কার দেয়া হচ্ছে, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। এ সময় উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। পরিকল্পনামন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে প্রধানমন্ত্রী এসব প্রসঙ্গ তোলেন। এছাড়াও সভায় বাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার বড়িকান্দি হতে ধরাভাঙ্গা এমপি বাঁধ পর্যন্ত মেঘনা নদীর বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৭১ কোটি টাকা। ভূ উপরিস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহার ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে নাটোর জেলায় সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৭৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। কৃষি বিপণন অধিদফতর জোরদারকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৬০ কোটি টাকা। উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর, বিশেষত নারীদের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত লবণাক্ততা মোকাবেলায় অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২৭৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। সাইবার আক্রমণ থেকে সরকারী তথ্য ভা-ার রক্ষা করতে ১৪৬ কোটি টাকার ‘বিজিডি ই-গভ সিআইআরটি’ নামক প্রকল্প।
×