ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জাতিসংঘ শরণার্থী প্রতিনিধিদলের মতামত গ্রহণ শুরু

প্রকাশিত: ১০:৫৩, ২১ আগস্ট ২০১৯

জাতিসংঘ শরণার্থী প্রতিনিধিদলের মতামত গ্রহণ শুরু

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ প্রত্যাশিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এ দফায়ও শুরু হবার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ বলে প্রতীয়মান। আগামীকাল ২২ আগস্ট বৃহস্পতিবার থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর অঘোষিত একটি বার্তা রয়েছে। এ নিয়ে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সরকার পক্ষ নানা প্রস্তুতিও নিয়েছে। কিন্তু মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের কোন পক্ষই প্রত্যাবাসন ইস্যু শুরুর ব্যাপারে কোন ঘোষণা দেয়নি। এদিকে, মিয়ানমার পক্ষ আগামীকাল ২২ আগস্ট থেকে প্রত্যাবাসন শুরু করতে যেমন আগ্রহী, তেমনি বাংলাদেশ পক্ষও এ নিয়ে চূড়ান্তভাবে প্রস্তুত। কিন্তু আবারও বেঁকে বসেছে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। তারা এবার ৫ দফা দাবি উত্থাপন করেছে ‘ভয়েস অব রোহিঙ্গা’ নামের ব্যানারে। ২০১৭ সালের আগস্ট মাস থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে চলে আসার পর প্রত্যাবাসন প্রশ্নে এরা দাবি দিয়েছিল ২১ দফা। পরবর্তীতে তা ১২ দফায় নেমে আসে। এরপর তা ৬ দফা। এবার সর্বশেষ হয়েছে ৫ দফা। এসব দফা মানা না হলে আশ্রিত ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতারা প্রত্যাবাসনে রাজি নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে ইউএনএইচসিআর ও মিয়ানমার থেকে আসা তদন্তদলের সদস্যদের। প্রত্যাবাসন প্রশ্নে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের পক্ষ থেকে প্রথমে আট দফা দাবি উত্থাপন করেছিল। যার মধ্যে ছিল নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা, বাড়িঘর, জমি ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা প্রদানের মতো বিষয়গুলো। এসব দাবি নিয়ে তখন বিক্ষোভ করেছিল ‘আরাকান হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড পিস সোসাইটি’ নামের একটি সংগঠন। এখন আবার যখন প্রত্যাবাসন শুরুর একটি বিষয় সামনে এসেছে তখন ভয়েস অব রোহিঙ্গা’ নামের একটি সংগঠনের পক্ষে ৫ দফা দাবির বাস্তবায়ন চেয়ে গত তিনদিন ধরে আশ্রয় শিবিরগুলোতে লিফলেট বিতরণ চালিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ উত্থাপিত এই ৫ দাবির মধ্যে রয়েছে রোহিঙ্গারা আরাকানে স্থানীয় আদিবাসী এবং সে জন্য তাদের ন্যাটিভ স্ট্যাটাস বা স্থানীয় মর্যাদা সংসদে আইন করে পুনর্বহাল করতে হবে। তাতে আন্তর্জাতিক গ্যারান্টি থাকতে হবে। নাগরিকত্বের প্রশ্নে দাবিতে রয়েছে প্রথমে আরাকান রাজ্যে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সিটিজেন কার্ড দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরও সিটিজেনশীপ কার্ড দিয়ে প্রত্যাবাসন করে স্থানীয় নাগরিকের মর্যাদা দিতে হবে। তৃতীয়ত, একইসঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় থাকা রোহিঙ্গাদেরও সিটিজেটশীপ কার্ড দিয়ে স্থানীয় নাগরিকের মর্যাদা দিতে হবে। প্রত্যাবাসন প্রশ্নে লিফলেটে উল্লেখ করা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের নিজ নিজ গ্রামে ফিরিয়ে নিতে হবে এবং তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া জমিজমা যথাযথ ক্ষতিপূরণসহ ফেরত দিতে হবে। নিরাপত্তা প্রশ্নে উল্লেখ করা হয়েছে, আরাকানে রোহিঙ্গাদের জীবন ও সম্পদ রক্ষার জন্য রোহিঙ্গা পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। জবাবদিহিতা প্রশ্নে উল্লেখ করা হয়েছে, মিয়ানমারের স্থানীয় আদালতের পরিবর্তে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বা আইসিসির মতো কোন ইন্টারন্যাশনাল আদালতে অপরাধীদের বিচার করতে হবে। উল্লেখ করা যেতে পারে, ভয়েস অব রোহিঙ্গা নামের এ সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শমসুল আলম নামের একজন। মিয়ানমার পক্ষ যেসব রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে রাজি এবং ক্লিয়ারেন্স প্রদান করেছে সেসব রোহিঙ্গার মতামত জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার পক্ষে যাচাই কাজ শুরু করার পর মঙ্গলবার দুপুর থেকে এসব লিস্টেড রোহিঙ্গাদের মতামত নেয়ার কাজ শুরু হয়। আজ বুধবার পর্যন্ত মতামত যাচাই-বাছাই কার্যক্রম চলবে। মতামত যাচাইয়ে নিয়োজিত হয়েছে ১০টি পৃথক টিম। এরা ইতোমধ্যেই বালুখালী ৯ নম্বর ক্যাম্পের ৬ ব্লক, জি ১৮, জি ১ জি ৯, জি-২০, জি-১, সি-১, সি-২ ব্লকের বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে দেখেছেন। এ সময় মিয়ানমার তদন্ত প্রতিনিধি দলের সদস্যগণও উপস্থিত ছিলেন। তারা একইসঙ্গে জামতলী ক্যাম্পও পরিদর্শন করেন। এর আগে গত সোমবার প্রতিনিধি দলের সদস্যরা কক্সবাজার পৌঁছেন। তারপর দুপুরে তারা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালামের সঙ্গে বৈঠক করেন। তদন্ত কমিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ফিলিপাইনের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোজারিও মানালো। অপরদিকে, মিয়ানমার প্রতিনিধি দলে সদস্যরা হলেন মিয়ানমারের সাংবিধানিক ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান মিয়ো থেইন, জাতিসংঘে জাপানের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি কেনজো উশিমা এবং ইউনিসেফের সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ড. অনতুন থেট। বেলা ১২টার দিকে কুতুপালং ২৬ নম্বর ক্যাম্পে প্রত্যাবাসনের তালিকায় থাকা রোহিঙ্গাদের মতামত যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়। এ সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন রোহিঙ্গা নেতা বদরুল আলম। তিনি সাংবাদিকদের জানান, ১১ লাখ রোহিঙ্গার দেখভাল করতে ক্যাম্পভিত্তিক প্রতিনিধি নিয়ে ৫৫ জনের একটি কমিটি করা হয়েছে। তার মতে, ৫ দফা দাবি বাস্তবায়ন ছাড়া প্রত্যাবাসন কাজ সফল হবে না। রোহিঙ্গাদের অধিকাংশ নেতার দাবি, জাতিসংঘর পক্ষে আগে প্রত্যাবাসিতদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুক আর মিয়ানমার সরকার তাদের অবস্থান পরিষ্কার করুক রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বিষয়ে। এদিকে, জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার কর্মীরা মঙ্গলবার আশ্রয় ক্যাম্পগুলোতে মতামত যাচাইয়ের কাজ শুরুর পাশাপাশি প্রত্যাবাসনের জন্য নির্বাচিতদের যেখানে রাখা হবে ও যেখান থেকে বিদায় দেয়া হবে, সেসব স্থানগুলোতে অবকাঠামোগত প্রস্তুতি আগেই নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হন। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এবং শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) কার্যালয়ের প্রতিনিধিদের কাছে সাক্ষাতকার দিতে আসেন প্রত্যাবাসনের তালিকাভুক্ত কয়েকজন রোহিঙ্গা। মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে দশ জন রোহিঙ্গা টেকনাফের শালবাগান রোহিঙ্গা শিবিরে নির্ধারিত স্থানে সাক্ষাতকার দিতে আসে। তবে তারা সবাই অভিন্ন সুরে জানিয়েছেন, এখনই তারা মিয়ানমারে ফেরত যেতে চান না। টেকনাফের জাদিমোরা শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ মোহাম্মদ খালেদ হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, সকাল থেকে মিয়ানমারে ফেরত যাবার বিষয়ে মতামত জানানোর কথা ছিল তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের। কিন্তু দুপুর পর্যন্ত শাল বাগান রোহিঙ্গা শিবিরে নির্ধারিত স্থানে সাক্ষাতকার দিতে আসেনি তাদের কেউ। পরে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এবং শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) কার্যালয়ের প্রতিনিধিরা তাদের সাক্ষাতকার দিতে আসার জন্য উৎসাহিত করার চেষ্টা করেন। দুপুর দেড়টার পর আট থেকে দশ জন সাক্ষাতকার দিতে আসেন। তিনি আরও জানান, যারা সাক্ষাতকার দিয়েছেন তাদের সবাই মিয়ানমারে ফেরত যাবার বিষয়ে এ মুহূর্তে অনীহা প্রকাশ করেছেন। সাক্ষাতকার দিয়ে বের হয়ে আসার পর আবু সিদ্দিক নামে এক রোহিঙ্গা জানান, ‘আমরা রাখাইনে বর্তমান অবস্থায় মিয়ানমারে ফেরত যেতে চাই না। মিয়ানমারে আমাদের ওপর নির্যাতনের বিচার করতে হবে, আমাদের সম্পত্তি ফেরত দিতে হবে, আমাদের নাগরিকত্ব দিতে হবে। এরপরই আমরা সেখানে ফেরত যাব। এই কথাই আমরা সাক্ষাতকারে বলেছি।’ উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিষয়টি তদন্তের জন্য ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট কমিশন অব ইনকোয়ারি’ গঠন করেছে মিয়ানমার। ওই কমিশনের একটি প্রতিনিধিদল চার দিনের সফরে শনিবার বাংলাদেশে আসে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে প্রতিনিধি দল বালুখালী ক্যাম্পের ক্যাম্প ইনচার্জ শেখ হাফিজুল ইসলামের কার্যালয়ে আধঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন। বাংলাদেশে নিবন্ধিত এখন যে এগারো লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী আছে, তার বড় অংশই বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করা শুরু করেছিল ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট গভীর রাত থেকে। এরপর জাতিসংঘসহ নানা সংস্থার নানা উদ্যোগের পর বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকারের আলোচনায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারি প্রত্যাবাসন শুরুর কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। এছাড়াও একই বছরের ১৫ নবেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা ছিল। রোহিঙ্গাদের গ্রহণ ও উদ্বোধনী দিনে ওপারে ঢেঁকিবুনিয়ায় এসেছিলেন দেশটির সমাজকল্যাণমন্ত্রী। কিন্তু রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা, বাড়িঘর জমি ফেরত পাবার নিশ্চয়তা দেয়ার শর্তে দ্বিতীয়বারও ফিরে যায়নি। এসব দাবি নিয়ে তখন বিক্ষোভ করেছিল আরাকান রোহিঙ্গা হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড পিস সোসাইটি নামের একটি সংগঠন। এবার আবারও ২২ আগস্ট প্রত্যাবাসনের একটি সম্ভাব্য তারিখ মিয়ানমারের তরফ থেকে প্রকাশের পর বাংলাদেশ সর্বেচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করে। রোহিঙ্গা ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম তিন হাজার ৫৪০ জন রোহিঙ্গাকে ২২ আগস্ট ফেরত পাঠানোর বিষয়ে যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করছেন। এর আগে বাংলাদেশ যে ২২ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারকে দিয়েছিল তা থেকে তিন হাজার ৪৫০ জন রোহিঙ্গার নাম প্রত্যাবাসনের জন্য নির্বাচন করে বাংলাদেশকে দিয়েছে মিয়ানমার। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোঃ আবুল কালাম বলেন, দুই দফায় ২২ হাজার ৪৩২ এবং ২৫ হাজার সাতজন রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এদের মধ্য থেকে তিন হাজার ৪৫০ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার ক্লিয়ারেন্স দিয়েছে। উল্লেখ্য মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে দেশটির নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। ১৩৫টি জাতিগোষ্ঠীকে সংখ্যালঘু জাতি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে মিয়ানমার সরকার। রোহিঙ্গারা এ তালিকার অন্তর্ভুক্ত নয়। ভয়েস অব রোহিঙ্গা নামের সংগঠনের নেতৃত্বে থাকা শমসু আলম নামে এক রোহিঙ্গা নেতা গণমাধ্যম কর্মীদের বলেছেন, তাদের মধ্যে সক্রিয় আরও অন্য সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করেই তারা এসব দাবি চূড়ান্ত করেছেন। মঙ্গলবার দুপুরে প্রত্যাবাসনের তালিকায় থাকা রোহিঙ্গাদের মতামত যাচাইয়ের কাজ করছিলেন জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার কর্মীরা। কুতুপালংয়ে ২৬ নম্বর ক্যাম্পে তাদের সঙ্গে থাকা রোহিঙ্গাদের নেতা বদরুল আলম বলেন, জাতিসংঘ আগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করুক আর মিয়ানমার সরকার তার অবস্থান পরিষ্কার করুক রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বিষয়ে। তারপর রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাবার সিদ্ধান্ত নেবে। প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন শুরু করে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রাণ বাঁচাতে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। পুরনো ও নতুন মিলিয়ে এখন উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি শিবিরে ১২ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ৮৫ হাজার ৫৫৭জন রোহিঙ্গা।
×