ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজশাহীর বিট খাটালে গরু আমদানি বৃদ্ধি

প্রকাশিত: ১১:৩৭, ২০ আগস্ট ২০১৯

 রাজশাহীর বিট খাটালে  গরু আমদানি বৃদ্ধি

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহী সীমান্তের বিট খাটাল দিয়ে গরু আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে। কোরবানির ঈদের পরদিন থেকে জেলার চরমাঝারদিয়া সীমান্ত বিট খাটাল হয়ে বিপুলসংখ্যক গরু ঢুকছে বাংলাদেশে। প্রতিদিন এই পথেই অন্তত এক থেকে দেড় হাজার ভারতীয় গরু আসছে। গত রবিবারে এ বিট খাটাল হয়ে প্রবেশ করেছে এক হাজার ৫৪০টি গরু। অভিযোগ উঠেছে এসব গরু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে ‘গলাকাটা অর্থ’। জানা গেছে, রাজশাহী সীমান্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত বিট খাটাল রয়েছে ছয়টি। তবে ভারত থেকে গরু আসছে শুধুমাত্র মহানগর পুলিশের দামকুড়া থানা এলাকার চরমাঝারদিয়া বিট খাটাল হয়ে। ঈদের আগে এক সপ্তাহ গরু কম আসলেও ঈদের পরদিন থেকে আবার আমদানি বেড়ে গেছে। অন্য বিট খাটাল মালিকদের অভিযোগ, চরমাঝারদিয়া বিট খাটালের মালিক আনোয়ার হোসেন প্রভাব খাটিয়ে অপর খাটালগুলোতে গরু যেতে দিচ্ছেন না। আর এ সুযোগে তিনি এক জোড়া গরুর জন্য এক হাজার ১০০ টাকার পরিবর্তে আদায় করছেন ২৪ হাজার ২০০ টাকা। এতে চরম ক্ষুব্ধ গরু ব্যবসায়ীরা। রাজশাহী বিভাগের শুল্ক ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার মজিবুর রহমান জানিয়েছেন, সীমান্তপথে আসা ভারতীয় গরু বিট খাটালে আনার পর প্রতি গরু থেকে ৫০০ টাকা শুল্ক এবং খাটাল ব্যবস্থাপনা কমিশন বাবদ গরু প্রতি ২০ থেকে ৫০ টাকা আদায়ের বিধান রয়েছে। এই হিসাবে প্রতি জোড়া গরু থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ১০০ টাকা আদায় করা যেতে পারে। এর বেশি আদায় করা হলেই আইনের লঙ্ঘন। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাইদুল ইসলাম, হাসিবুল ইসলাম, ইয়ানুস আলী, শরিফুল ইসলাম, সাহিদ হোসেন, মোহর আলী, জহুরুল ইসলাম, হুমায়ন আলী ও ফারুক হোসেনসহ ১০ থেকে ১২ জন ব্যবসায়ী চরমাঝারদিয়া বিট খাটাল দিয়ে নিয়মিত গরু-মহিষ আমদানি করেন। সর্বশেষ রবিবার এ বিট খাটাল দিয়ে গরু এসেছে এক হাজার ৫৪০টি। তবে তাদের কাছ থেকে গলাকাটা অর্থ আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তারা। গরু ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলাম জানান, রবিবার ভোরে তার ১০০ জোড়া (২০০টি) গরু এসেছে। বিট খাটাল মালিক আনোয়ার হোসেন প্রতি জোড়া গরুর জন্য ২৪ হাজার ২০০ টাকা করে নিয়েছেন। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী প্রতি জোড়া গরুর জন্য এক হাজার ১০০ টাকা নিতে পারবেন। এর মধ্যে শুল্ক এক হাজার ও বিট খাটাল ফি ১০০ টাকা। কিন্তু বাড়তি টাকা দিতে রাজি না হলে তাদের নানাভাবে হয়রানি করা হয় বলে জানান এই গরু ব্যবসায়ী। শরিফুল ইসলাম নামের আরেব ব্যবসায়ী জানান, একইদিন তার গরু এসেছে সাতটি। সিটি হাট পর্যন্ত পৌঁছাতে তার এক জোড়া গরুর জন্য খরচ হয়েছে ২৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে বিট খাটাল মালিক নিয়েছেন ২৪ হাজার ২০০ টাকা। বাকি চার হাজার টাকা খরচ হয়েছে রাখাল, নদী পারাপার ও যানবাহন ভাড়ায়। তিনি বলেন, ২৪ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে রাজস্ব শুল্ক ও বিট খাটাল ব্যবস্থাপনা কমিশন এক হাজার ২০০ টাকা। সিটি হাটে গরু নিয়ে আসা রাখাল হালিম আলী জানান, চরমাঝারদিয়ার বিট খাটাল থেকে রাজশাহী সিটি হাটে এক জোড়া গরু নিয়ে আসলে এক হাজার টাকা পান। নিজের খাওয়া ও যাতায়াত খবর বাদ দিয়ে তার ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা থাকে। গরুর রাখালদের সবচেয়ে বেশি ফাঁকি দেয়া হয় বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। তবে বাড়তি টাকা আদায় নিয়ে খাটাল মালিক আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার বিট খাটালে কর্মরত এক কর্মচারী জানান, গরু যাতে সীমান্ত পেরিয়ে নির্বিঘ্নে হাট পর্যন্ত যেতে পারে সে জন্য বিভিন্ন সংস্থাকে টাকা দিতে হয়। এর মধ্যে থানা পুলিশ ও কাস্টমস কর্মকর্তারা রয়েছে। তাই এই অতিরিক্ত অর্থ আদায় করতে হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজশাহীর অপর এক বিট খাটাল মালিক জানান, আনোয়ার হোসেন চরমাঝারদিয়া বিট খাটালের মালিক। ক্ষমতা ও অর্থের প্রভাব খাটিয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তিনি বাকি পাঁচটি বিট খাটালে গরু যেতে দিচ্ছেন না। ফলে তাদের খাটালে গরু আমদানি না হওয়ায় তারা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এ সুযোগে আনোয়ার হোসেন অর্থ আদায় করছেন ইচ্ছেমতো। ঈদের আগে যেখানে এক জোড়া গরুর জন্য নেয়া হচ্ছিল ১২ হাজার ২০০ টাকা সেখানে এখন নেয়া হচ্ছে ২৪ হাজার ২০০ টাকা বলে দাবি এই বিট খাটাল মালিকের। রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত সহকারী কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, ভারত থেকে গরু আমদানির বিষয়টি দেখে থাকে বিজিবি ও কাস্টমস। তবে পুলিশের নামে বিট খাটালে গরু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হচ্ছে কি না তা জানা নেয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
×