ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুবাই বসে ঢাকায় ইয়াবা সাম্রাজ্যের দেখভাল সোহেলের

প্রকাশিত: ১০:২৫, ২০ আগস্ট ২০১৯

 দুবাই বসে ঢাকায় ইয়াবা সাম্রাজ্যের দেখভাল সোহেলের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ থাকেন দুবাই, কিন্তু সামাল দেন ঢাকায় গড়ে তোলা ইয়াবা সা¤্রাজ্য। বিগত কয়েক বছর ধরে তিনি বেশ নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে চালিয়ে আসছিলেন কোটি টাকার ইয়াবার কারবারি। তার নিয়ন্ত্রণে ঢাকায় সক্রিয় রয়েছে শক্তিশালী এক ইয়াবা সিন্ডিকেট। কৌশলের পর কৌশল অবলম্বন করে ঢাকা থেকে দুবাই নিয়ে যেতেন ইয়াবার চালান। কেউ কখনো সন্দেহও করতে পারেনি। যদিও শেষ রক্ষা হয়নি। র‌্যাবের দীর্ঘ নজরদারির পর ফাঁদে ধরা পড়ে এই ইয়াবা স¤্রাট সোহেলের সেকেন্ড ইন কমান্ড নাসির। তারপরই বেরিয়ে আসে সোহেলের ইয়াবা কারবারের চমকপ্রদ সব কাহিনী। আন্তর্জাতিক মাদককারবারি চক্রটির অন্যতম সদস্য নাসির উদ্দিন সরকারকে ২৬ হাজার পিস ইয়াবাসহ রাজধানীর উত্তরা থেকে আটকের পর এসব তথ্য পেয়েছে পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাব। শুধু সোহেল নয়- ইয়াবা সা¤্রাজ্যের আরও ক’জন সদস্যের নাম ফাঁস করে দিয়েছে নাসির। এ সম্পর্কে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম সোমবার জানান- গোয়েন্দা অনুসন্ধানে র‌্যাব জানতে পারে একটি আন্তর্জাতিক মাদককারবারি চক্র দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে মাদককারবারি পরিচালনা করে আসছে। চক্রটি পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে কারবারির মাধ্যমে নিয়ে আসা ইয়াবা কৌশলে আকাশপথে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সরবরাহ করছে। র‌্যাব-১ এর অনুসন্ধানী দল চক্রটির কয়েক সদস্যকে শনাক্ত করে। অনুসন্ধানে জানা যায়, মাদকের একটি বড় চালান ঢাকা থেকে দুবাইয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। মাদককারবারিকে ধরতে র‌্যাব-১ গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। রবিবার রাত ১০টার দিকে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ৩ নম্বর সেক্টরের রবীন্দ্র সরণি, ১৫ নম্বর রোডের একটি আবাসিক হোটেল থেকে আচারের দুটি বয়ামে ২৬ হাজার পিস ইয়াবা ও একটি পাসপোর্টসহ নাসির উদ্দিন সরকার (৩৫) নামে ওই চোরাকারবারিকে আটক করে। তার বাড়ি কুমিল্লার বুড়িচং থানার চান্দ্রপুর গ্রামে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নাসির উদ্দিন জানান, দুবাইয়ের আবুধাবিতে অবস্থানরত বাংলাদেশের সোহেলের হাত ধরে তিনি এ মাদককারবারিতে জড়িয়ে পড়েন। সোহেল দীর্ঘদিন ধরে মাদককারবারি ব্যবসায় জড়িত। বাংলাদেশে তার নিয়ন্ত্রণে ১৫-২০ জন সক্রিয়ভাবে যুক্ত। মাদকের সিন্ডিকেটে যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে নাসির উদ্দিন জানান, ২০০৮ সালে তিন বছর মেয়াদী ভিসা নিয়ে দুবাই যান নাসির। আবুধাবির মোসাম্বা শহরে বহুতল ভবনের জন্য এসি তৈরির প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। সোহেলের সঙ্গে সেখানেই তার পরিচয়। সোহেল ওই একই প্রতিষ্ঠানের ফেব্রিকেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে গেলে ২০০৯ সালের শেষ দিকে নাসির উদ্দিন দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফেরার পর মাঝে মধ্যে সোহেলের সঙ্গে কথা হতো। একপর্যায়ে সোহেল তাকে মোটা অঙ্কের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে মাদককারবারিতে সম্পৃক্ত করেন। এরপর এ পর্যন্ত তিনি এ সিন্ডিকেটের হয়ে ২০-২৫টির মতো মাদকের বড় চালান দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেছেন। এ প্রসঙ্গে নাসির জানান, চক্রের হয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বস্ততার সঙ্গে কাজ করায় সোহেল তাকে মাদকের একটি চালান নিয়ে দুবাইয়ে যেতে বলেন। এতে তাকে মোটা অঙ্কের টাকা দেয়ার প্রলোভন দেখানো হয়। দুবাই যাওয়ার জন্য ভিসা প্রক্রিয়াকরণ ও টিকেট বুকিংসহ সব কাজ সোহেলের লোক করে দেয়। এ ছাড়া তাকে অগ্রিম ১০ হাজার টাকা দেয়া হয়। বিমানবন্দরে চেকিংয়ে মাদকের উপস্থিতি যাতে বোঝা না যায় সেজন্য একটি বিশেষ কৌশল অবলম্বন করা হয়। তিনি সোহেলের নির্দেশে ইয়াবা প্রথমে কার্বন পেপারে মুড়িয়ে তার ওপর কালো স্কচটেপ দিয়ে পেঁচিয়ে দুটি আচার ভর্তি বয়ামের ভেতর নেয়। এ প্রক্রিয়ায় সিন্ডিকেটের সদস্যরা এখন পর্যন্ত অসংখ্যা মাদকের চালান আকাশপথে দেশের বাইরে নিয়ে গেছে বলে জানান নাসির। জিজ্ঞাসাবাদে নাসির আরও কয়েকজনের নাম জানিয়েছেন। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। দুবাইয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রবাস জীবন কাটানো সোহেলের বাড়ি কুমিল্লার দক্ষিণ সদর থানায়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মাদককারবারির সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশে তার নিয়ন্ত্রণে মাদক সিন্ডিকেটে যুক্ত ১৫-২০ জন। তাদের মাধ্যমে বিশেষ কৌশলে বাংলাদেশ থেকে আকাশপথে ইয়াবার চালান যায় দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে। যদিও সিন্ডিকেটটি মূলত দেশের অভ্যন্তরে মাদককারবারির সঙ্গে যুক্ত। তবে দুবাইয়ে সোহেলের চেয়েও আরও বড় কোন গডফাদার আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখছে র‌্যাব।
×