ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাড়ে ৫ লাখ, চামড়া সংগ্রহ সাড়ে ৩ লাখ

প্রকাশিত: ১০:২৫, ২০ আগস্ট ২০১৯

 চট্টগ্রামে লক্ষ্যমাত্রা  ছিল সাড়ে ৫ লাখ, চামড়া সংগ্রহ সাড়ে ৩ লাখ

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে একদা বিশটির বেশি ট্যানারি থাকলেও একে একে বন্ধ হয়েছে প্রায় সবই। ফলে চামড়া বিক্রির জন্য মৌসুমি ও খুচরা ব্যবসায়ী এবং আড়তদারদের তাকিয়ে থাকতে হয় ঢাকার ট্যানারিগুলোর দিকে। এ বছর অবস্থা হয়েছে আরও করুণ। সাড়ে ৫ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও চামড়া সংগৃহীত হয়েছে সাড়ে ৩ লাখ। আড়তদাররা বলছেন, ট্যানারিগুলোর কাছে অনেক আগে বকেয়া পাওনা থাকায় তারা চামড়া সংগ্রহ করতে পারেননি। এদিকে, অতি মূল্যবান এই কাঁচামালের ব্যবহার নিশ্চিত করতে চট্টগ্রামে চামড়া শিল্প গড়ে তোলার দাবি ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর। চামড়া আড়তদার সমিতি সূত্রে জানা যায়, বৃহত্তর চট্টগ্রাম থেকে এবার অন্তত সাড়ে ৫ লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু ট্যানারি মালিকরা অনেক আগে কেনা চামড়ার মূল্যও পরিশোধ করেননি। এই কোরবানি ঈদের তারা ধার দেনা করে যতটা সম্ভব চামড়া কেনার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ট্যানারিগুলো এখনও সেই চামড়া কেনা শুরু করেননি। এ অবস্থায় তারাও চামড়া নিয়ে বিপাকে রয়েছেন। চট্টগ্রামে এবার কোরবানির ঈদে চামড়া নিয়ে ছিল হতাশার চিত্র। মৌসুমি ও মাঠ পর্যায়ে খুচরা ব্যবসায়ীরা বরাবরের মতো এবারও চামড়া কিনে নিয়ে আসেন। কিন্তু মহানগরী ও জেলার মহাসড়কের পাশে সেই চামড়া রেখে বৃষ্টিতে ভিজে ও মশার কামড় সহ্য করে সারারাত থেকেও ক্রেতা পাননি। কেনা দামের চেয়ে কম দামেও বিক্রি হয়নি চামড়া। ফলে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম মহানগরীতেই রাস্তায় ফেলে যাওয়া হয় লক্ষাধিক পশুর চামড়া। পরে সিটি কর্পোরেশন এগুলো ডাম্পিং স্টেশনে নিয়ে ফেলে দেয়। নষ্ট হয় অতি মূল্যবান শিল্পের কাঁচামাল। চট্টগ্রাম মহানগরীর আতুরারডিপো এলাকায় রয়েছে দুই শতাধিক চামড়ার আড়ত। একদা এই চট্টগ্রামে ছিল প্রায় দুই ডজন ট্যানারি। এর মধ্যে ২০টি ট্যানারি বন্ধ হয়ে যায়। কোন রকমে চলার মতো রয়েছে দুটি ট্যানারি। রিফ লেদার ও মদিনা ট্যানারি নামের এই দুই প্রতিষ্ঠান নগদ মূল্যে চামড়া কিনে থাকে। কিন্তু এত চামড়া মাত্র দুটি ট্যানারির পক্ষে কিনে নেয়া সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় চামড়া ব্যবসায়ীদের নির্ভর করতে হয় ঢাকার ট্যানারিগুলোর ওপর। আর ঢাকা ট্যানারিগুলো ঠিকমতো মূল্য পরিশোধ করে না। এক কোরবানি ঈদের চামড়ার মূল্য পেতে আরেক কোরবানি গড়িয়ে যায়। চট্টগ্রামে বন্ধ হয়ে যাওয়া ট্যানারিগুলো আবার চালু করার দাবি জানিয়েছেন আড়তদাররা। প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে গরুর চামড়ার মূল্য নির্ধারিত হয়েছিল প্রতি বর্গফুট ৯০ টাকায়। লবণযুক্ত খাসির চামড়া দাম ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। ২০১৯ সালে এসে গরুর চামড়ার মূল্য নেমে দাঁড়ায় প্রতি বর্গফুট ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। অথচ এত কমদামেও এখন চামড়া বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি সভাপতি মাহবুবুল আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, এখানে অসাধু সিন্ডিকেটের কারসাজি রয়েছে। ওই অসাধুরা ভাবে যে, চামড়া যেহেতু পশুর উচ্ছিষ্ট জিনিস সেহেতু শেষ পর্যন্ত তাদের কাছেই যাবে, দাম যাই হোক না কেন। মাঠ পর্যায়ের খুচরা ব্যবসায়ীরা এবার বেশিমূল্যে চামড়া কেনেননি। স্বল্পমূল্যে কেনা চামড়াও বিক্রি করতে না পেরে রাস্তায় ফেলে গেছেন। চট্টগ্রামে চামড়া শিল্প গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে অভিমত এই ব্যবসায়ী নেতার।
×