ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার কমতে শুরু করেছে

প্রকাশিত: ১০:০০, ২০ আগস্ট ২০১৯

 ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার কমতে শুরু করেছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ডেঙ্গুজ্বরের আক্রান্তের হার নি¤œগতি হতে শুরু করেছে। তবে তা এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে রয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই এইরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। যদিও স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা আর বাড়বে না। কিছুদিনের মধ্যেই এটি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসবে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন এখন পর্যন্ত আক্রান্তের যে পরিসংখ্যান তা বেশ উদ্বেগজনক। তারা বলছেন গত জুনের মাঝামাঝি থেকে দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত তা অব্যাহত রয়েছে। এই রোগে মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় জনমনে আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে বেশি। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সর্বশেষ তথ্য বলছে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৬শ’ ১৫ জন। একই সঙ্গে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়েছেন ২ হাজার ৫০ জন। তাদের দেয়া তথ্য বলা হচ্ছে এই মৌসুমে ৫৪ হাজার ৭৯৭ জন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪৮ হাজার ২৪ জন। এদিকে প্রতিনিধির পাঠানো তথ্যে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫জন জনের মৃত্যু হয়েছে। মিডিয়ার খবর অনুযায়ী ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছে মৃত্যুর সংখ্যার একশ’ ছাড়িয়েছে অনেক আগেই। প্রায় প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকালে উপজেলার সীমান্ত সংলগ্ন বিলগাথুয়া গ্রামের বিল্লাল হোসেনের স্ত্রী চালন বেগম (৩৫) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য ও নিহতের আত্মীয় ইসমাইল হোসেন চালন বেগমের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিহত চালন বেগম ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে কর্মরত ছিলেন। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সে ঈদে বাড়ি যাওয়ার পর অবস্থার অবনতি হলে তাকে গত ১৭ আগস্ট রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকালে চালন বেগমের মৃত্যু হয়। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে খুলনাতে মিজানুর রহমান (৪০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকাল ৭টায় খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তিনি ১৫ আগস্ট বৃহস্পতিবার খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিলেন। খুমেক হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরপি) ডাঃ শৈলেন্দ্রনাথ বিশ্বাস তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মৃত মিজানুর পেশায় সবজি বিক্রেতা ছিলেন। তার বাড়ি খুলনার রূপসা উপজেলার খাজাডাঙ্গা গ্রামে। খুলনার সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, খুলনায় সোমবার পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৫৭৩ জন। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক লক্ষ্মীনারায়ণ মজুমদার জানান, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে আনোয়ার হোসেন নামের একজন সোমবার মৃত্যুবরণ করেছেন। ভোরে মারা যান তিনি। আনোয়ার কয়েকদিন নেত্রকোনা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। শরীরের বিভিন্ন অর্গানের কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলার কারণে তার মৃত্যু হয়। ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক কামদাপ্রসাদ সাহা জানান, দেলোয়ার হোসেন নামের একজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি একটি মসজিদের খাদেম হিসেবে কাজ করতেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মারা যান। তিনি দুই সন্তানের জনক ছিলেন। এদিকে বাবার সঙ্গে ঢাকায় ঈদ করতে গিয়ে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার গেদুড়া ইউনিয়নের বরুয়াল (ধনসোড়া) গ্রামের মোস্তফার মেয়ে শিশু মাসরুফা (১০) লাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। সোমবার সকাল ছয়টায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় মারা যায়। তার পিতা জানান, গত তিন বছর ধরে তিনি ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করছেন। এবার পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে ঈদ উদযাপন করার জন্য তার স্ত্রী মাজেরা ঈদের কয়েকদিন আগে তিন কন্যা সন্তানকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় আসেন। এর মধ্যে শিশু মেয়ে মাসরুফা অসুস্থ হলে তাকে ঈদের একদিন পর (১৪ আগস্ট) চিকিৎসার জন্য রামপুরা বনশ্রীর এ্যাডভান্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের ডাক্তার কামরুল হাসান পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বলেন মাসরুফা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। এরপর ওই ডাক্তার দুইদিনের ওষুধ দিয়ে সোমবার আবার হাসপাতালে আসতে বলেন। কিন্তু পুনরায় ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগেই তার শিশু কন্যা মারা যায়। এদিকে সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়েছে সারাদেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী কিছুদিনের মধ্যেই রোগটি নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে। অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডাক্তার সানিয়া তহমিনা বলেন, প্রায় প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার নিম্নগতি পর্যবেক্ষণ করছি। আশা করছি রোগীর সংখ্যা আর বাড়বে না। তিনি বলেন, ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৬শ’ ১৫ জন। হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে এ সময়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ হাজার ৫০ জন। এই ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর ৪১টি সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালে নতুন ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৭৫৭ জন এবং ছাড়পত্র পাওয়া রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৬ জন। ঢাকার বাইরে নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৮৫৮ জন এবং ছাড়পত্র নিয়েছেন ১ হাজার ৪৪ জন। এ তথ্য বিশ্লেষণ করে অধ্যাপক ডাঃ তহমিনা বলেন, আগের দিনের তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৫ শতাংশ কমেছে। সারাদেশে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ৬ হাজার ৭শ’ ৩৩ জন যা আগের দিনের তুলনায় ৬ শতাংশ কম। ঢাকা মহানগরীর হাসপাতালগুলোতে বর্তমানে ভর্তি থাকা রোগী সংখ্যা ৩ হাজার ৪শ’ ১৯ জন। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি আছে ৩ হাজার ৩শ’ ১৪ জন। আগের দিনের তুলনায় ঢাকা ও ঢাকার বাইরে মোট ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা যথাক্রমে ৭ শতাংশ এবং ৫ শতাংশ কমেছে। তিনি বলেন, দেখতে পাচ্ছি নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমছে অর্থাৎ রোগীর হারে নিম্নগতি। আশা করছি এটা আর বাড়বে না। এটা সম্ভব হয়েছে সবার সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং মানুষ সচেতন হয়েছে বলে। যশোর ॥ জেলাজুড়েই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টা জেলার ৮ উপজেলায় নতুন করে আরও ৪২ রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৯ জন। বাকিরা বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে। সব মিলিয়ে জেলায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৯২ ডেঙ্গু রোগী। যশোর সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত যশোর জেলায় মোট ৬শ’ ৮৫ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪শ’ ৯৩ জন। আর বর্তমানে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৭৯ জন, ৮টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৮২ জন ও বেসরকারী হাসপাতালে ৩১ জন। কুড়িগ্রাম ॥ ঈদ-উল-আজহা পালন করতে এসে ২২ ডেঙ্গু রোগীকে শনাক্ত করেছে চিকিৎসকরা। এদের মধ্যে কেউ কেউ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কেউবা উন্নত চিকিৎসার জন্য কুড়িগ্রামের বাইরে চলে গেছেন। সোমবার দুপুর পর্যন্ত কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১৩ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ পর্যন্ত এই হাসপাতালে ৯৩ ডেঙ্গু রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়েছে। জরুরী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে চিকিৎসকরা ঈদের দিনেও হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা প্রদান করেন।
×