ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বন্যা পরবর্তী রোপা আমন আবাদে চারা নিয়ে বিপাকে কৃষক

প্রকাশিত: ০৯:৪১, ২০ আগস্ট ২০১৯

 বন্যা পরবর্তী রোপা আমন আবাদে চারা নিয়ে বিপাকে কৃষক

সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ রোপা আমনের চারা নিয়ে অনেকটাই বিপাকে পড়ে গেল কৃষক। এদিকে রোপণের সময় বয়ে যাচ্ছে। এত তাড়াতাড়ি চারা পাবে কোথায়! কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর অবশ্য বলেছে, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে চারা বিতরণ করবে। বীজতলা তৈরি হয়েছে। তাও এই চারা পেতে অন্তত তিন সপ্তাহ সময় লাগবে। তবে স্বচ্ছল কৃষক ও গৃহস্থ নিজেরাই বীজতলা তৈরি করছে। কেউ অন্য কোথাও থেকে চারা সংগ্রহ করছে। চারার দামও বেশি। বন্যার পানি নেমে গিয়েছে। রেখে গিয়েছে উজানি ঢলের মৃত্তিকা ক্ষতির চিহ্ন। এর পাকেই পড়েছে কৃষক। সরকারী হিসাবে বলা হয়েছে, বগুড়ার ১২ উপজেলার মধ্যে বন্যা প্রথম দফায় বড় আঘাত করেছে ৫ উপজেলায়। ঢলের পানি নেমে যাওয়ার পর্যায়ে আঘাত করেছে আরও দুই উপজেলায়। মোট সাত উপজেলার ২২ হাজার ১শ’ ৩৬ হেক্টর ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে যমুনা ও বাঙালী তীরের সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলার গ্রাম ও চরগ্রামে। যেখানে প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার হেক্টর ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়াও ধুনট, শেরপুর, শাজাহানপুর, গাবতলি ও শিবগঞ্জে ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে। বলা হয়েছিল পানি নেমে যাওয়ার পরই বন্যা পরবর্তী কৃষি পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হবে। বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ৬ উপজেলার ১শ’ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করেছে। যা চাহিদার মাত্র ৪ শতাংশ। চারা তৈরিতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কয়েক লাখ টাকার বীজ দিয়েছে। প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে চারা রোপণে কৃষকদের সহায়তা দেয়া হবে। বাকি কৃষকদের নিজ উদ্যোগেই রোপা আমন মৌসুমের মাঠে নামতে হবে। তারা বীজতলা তৈরি করছে। বগুড়ার যে এলাকাগুলো বন্যাক্রান্ত হয়নি সেই সব এলাকায় রোপা আমনের আবাদ বেশ ভালোই হয়েছে। চলতি আবাদ মৌসুমে বগুড়ায় রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৪শ’ ৮৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়ে চাল আকারে উৎপাদিত হবে ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৫শ’ ৮০ মেট্রিক টন। বন্যার আঘাত করার আগে ১ লাখ ৩১ হাজার ১শ’ হেক্টর জমিতে আবাদ কার্যক্রম শুরু হয়। তবে মৌসুমের শুরুতেই বন্যা আঘাত করায় অনেকটাই বিঘ্ন ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত জমিগুলোতে কিভাবে আবাদ চালু করে টার্গেট পূরণ করা যায় সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে কৃষকের বড় একটি অংশ নিজেদের উদ্যোগে চারা বীজ উপকরণ সংগ্রহ করছে। সারিয়াকান্দি উপজেলার হাটফুলবাড়ি নিজবলাইল ও কাজলা এবং সোনাতলা উপজেলার রানীরপাড়া গড়ফতেপুর গ্রামের কয়েকজন মধ্যম সারির কৃষক বললেন, সময়মতোই আবাদ শুরু করেছিলেন। ঢলের পানিতে ফসল বরবাদ হয়েছে। বাসেত আলী ৮ বিঘা জমিতে চারা রোপণ করেছিলেন। এখন নতুন করে আবাদ শুরু করতে হচ্ছে। তিনি কিছু জমি আধিয়ারকে দেবেন (কোন কৃষককে আবাদ করতে দিয়ে উৎপাদিত ধানের অর্ধেক অংশ নেয়া)। দেরিতে চারা রোপণের পর সেই চারায় কতটা উৎপাদন হবে এমন প্রশ্ন উঠছে। প্রবীণ কৃষক আফসার বললেন, দেরিতে পাওয়া চারায় উৎপাদনে হেরফের হয়। অর্থাৎ কমে যায়। কখনও ধানের বদলে চিটাও হয়। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট অনেক জাতের ধান উদ্ভাবন করেছে। বন্যা পরবর্তী কোন উফশী জাতের চারা রোপণ করা হবে। এতে উৎপাদনে কোন প্রভাব পড়বে না।
×