ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চামড়া খাতের বেশিরভাগ ঋণই খেলাপী

প্রকাশিত: ০৯:৩২, ২০ আগস্ট ২০১৯

 চামড়া খাতের বেশিরভাগ ঋণই খেলাপী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কয়েকবছরে চামড়া খাতে সরকারী চারটি ব্যাংক ঋণ দিয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। এসব ঋণের বেশিরভাগই হয়েছে খেলাপী। খেলাপীর বিষয়টি স্বীকার করেছেন ব্যবসায়ীরাও। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ঋণ পরিশোধে অনিয়ম থেকে বেরিয়ে আসতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে। ঋণ ছাড় ও আদায়ে ব্যাংকগুলোকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের। দেশের রফতানি আয়ের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খাত চামড়া। এ খাতের ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহায়তায় বিগত কয়েকবছরে সরকারের ৪টি ব্যাংক ঋণ দিয়েছে ৩ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা। পরিসংখ্যান বলছে, এসব ঋণের সিংহভাগই লিপিবদ্ধ হয়েছে খেলাপীর খাতায়। গত ছয় বছরে সোনালী ব্যাংক ১০টি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়েছে ৮১৩ কোটি টাকা। এরমধ্যে ৭৩৩ কোটি টাকা চামড়া কিনতে ব্যয় দেখানো হলেও খেলাপী হয়েছে ৫৮৩ কোটি টাকা। জনতা ব্যাংকের এ পর্যন্ত ৩২টি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া ১ হাজার ৩৮২ কোটি টাকার মধ্যে পুরনো ঋণের বেশিরভাগই খেলাপী। অগ্রণী ব্যাংক দিয়েছে ৬৭৩ কোটি। এর মধ্যে গতবছর ৩০৮ কোটি টাকার ঋণের মধ্যে বকেয়াই রয়েছে ২৫৫ কোটি টাকা। আর রূপালী ব্যাংক ২০১৭ সাল পর্যন্ত দিয়েছে ৭৯৩ কোটি টাকা। যার পুরনো খেলাপীই রয়েছে ১৩৫ কোটি। ব্যাংকগুলোতে এমন খতিয়ান থাকলেও, কিছু খেলাপী হয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। বাংলাদেশ ট্যানার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, ব্যাংকের টাকাগুলো আমরা কোথায় ইনভেস্ট করেছি সেটা ব্যাংক ভাল করেই জানে। তবে হ্যাঁ, এটা করতে গিয়ে আমাদের কিছু কিছু ট্যানারি মালিক ঋণ খেলাপী হয়েছে। চামড়া কেনার ঋণ নিয়ে অন্য খাতে ব্যয় এবং পরে খেলাপীর ঘটনা নতুন কিছু নয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সরকারের মনিটরিং জোরদারের পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের। অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের চামড়ার ক্ষেত্রে একটা সুবিধা হলো, চামড়া কম দামে পাচ্ছে তারা। আরেকটা সুবিধা হলো, আমাদের শ্রমিক সস্তা। এতকিছুর পরেও যদি তাদের সক্ষমতা না থাকে যে, যারা তাদের ম্যাটেরিয়াল সরবরাহ করছে তাদের অর্থ পরিশোধ করার। তাহলে তো সেটা বন্ধ হয়ে যাওয়া উচিত। এটা সুযোগ সন্ধানী আচরণ বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, খেলাপী এড়াতে সঠিক পর্যালোচনা করে দিতে হবে ঋণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, যে উদ্দেশে লোনটা নেয়া হচ্ছে, সেখানে খরচ করা হচ্ছে কিনা সেটা দেখার দায়িত্বও যারা ঋণ দিচ্ছে তাদের থেকেই যাচ্ছে। ব্যাংক এগুলো যাচাই-বাছাই করেই তারা ঋণ দিবে। ঋণ খেলাপীর এ নৈরাজ্যের মধ্যেই নতুন করে এ বছর চামড়া কেনায় সরকারের ৪টি ব্যাংকের ঋণ দেয়ার লক্ষ্য রয়েছে প্রায় ১২শ’ কোটি টাকা।
×