ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অর্ধলক্ষাধিক কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা

উদ্বোধনের অপেক্ষায় চীনা ইকোনমিক জোনের নির্মাণ কাজ

প্রকাশিত: ০৯:৩২, ২০ আগস্ট ২০১৯

উদ্বোধনের অপেক্ষায় চীনা ইকোনমিক জোনের নির্মাণ কাজ

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের পর বাংলাদেশ ও চীনের সরকারী পর্যায়ে গঠিত হবে একটি যৌথ কোম্পানি। এরপরই শিল্প স্থাপনের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে যাবে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় চীনা ইকোনমিক জোন প্রকল্পের। সাগরের তীরবর্তী ৭৮৩ একর জায়গায় গড়ে উঠবে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল, যেখানে কর্মসংস্থানের টার্গেট প্রায় ৫০ হাজার মানুষের। প্রকল্প কাজের উদ্বোধন একমাসের মধ্যেই করা যাবে, এমনই আশা করছে বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। এদিকে, আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন না হলেও চীনা ইকোনমিক জোনের প্রাথমিক কাজগুলো এগিয়ে রেখেছে বেজা। ভূমি অধিগ্রহণসংক্রান্ত জটিলতা আর নেই। নির্মিত হয়েছে শিল্পজোনের ভেতরের প্রধান সড়ক। সমান করা হয়েছে উঁচুনিচু ভূমি। প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে হেলিপ্যাড। আনোয়ারায় চীনা ইকোনমিক জোন খুব সহজেই পাবে চট্টগ্রাম বন্দর ও কর্ণফুলী টানেল সুবিধা। এ শিল্পজোন বড় একটি ধাপ এগিয়ে দেবে পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রামকে। প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আনোয়ারা ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠায় কিছুটা ধীরগতি হয়েছে দ্বিপাক্ষিক বিষয় হওয়ায়। মীরসরাইয়ে বাস্তবায়নাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর হচ্ছে সম্পূর্ণ বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে। কিন্তু আনোয়ারা ইকোনমিক জোন হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগে, যার প্রাথমিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কিছু বাড়তি সময় লেগেছে। আর দীর্ঘসূত্রতার কোন কারণ নেই। মাঠ পর্যায়ে কাজ গড়িয়েছে আগেই। এখন শুধু কেবিনেটে অনুমোদনের অপেক্ষা। বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী জনকণ্ঠকে জানান, চীনা ইকোনমিক জোন বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হয়ে গেছে। এ সংক্রান্ত কাগজপত্রে মতামত দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়, যা কেবিনেটে চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়ে গেলে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে অর্থনৈতিক অঞ্চলের শিল্প অবকাঠামো গড়ার কাজ। মাসখানেকের মধ্যেই সকল প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। মহাজোট সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ১০০টি ইকোনমিক জোন গড়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। সে অনুযায়ী চট্টগ্রাম জেলায় হতে যাচ্ছে দুটি জোন। এরমধ্যে মীরসরাই, সীতাকু- ও ফেনীর সোনাগাজী মিলে প্রায় ৩০ হাজার একর ভূমিতে হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। এটি শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়াতে বৃহত্তম শিল্পজোন। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় হচ্ছে চীনা ইকোনমিক জোন। চীনের সহায়তায় মাত্র সাত কিলোমিটার দূরে কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মিত হচ্ছে টানেল। সমুদ্র বন্দর এবং টানেল সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে আনোয়ারাতেই শিল্প স্থাপনে আগ্রহ বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার চীনের। বেজা সূত্রে জানা যায়, জি টু জি ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে চীনা ইকোনমিক জোন। সেখানে ১৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। দুই দেশের সরকারী পর্যায়ে গঠিত একটি কোম্পানি এ শিল্পজোন নির্মাণ করবে। ৭৮৩ একর জায়গায় গড়ে উঠবে ৩৭১টি শিল্প কারখানা। এই জোনে জাহাজ নির্মাণ, ইলেকট্রনিক্স, ফার্নেস অয়েল ও সিমেন্ট কারখানাকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। চীনা ইকোনমিক জোনের দূরত্ব চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৩৯ কিলোমিটার, শহর থেকে ২৮ কিলোমিটার, টানেলের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে ৭ কিলোমিটার এবং সিইউএফএল (চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড) জেটি থেকে ৬ কিলোমিটার। ২০১৪ সালের ১১ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরকালে সে দেশের বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এরপর ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঢাকা সফর করেন। তখন অন্তত দুই ডজন প্রকল্পে সহায়তার যে সমঝোতা চুক্তি হয় তাতে আনোয়ারায় চীনা ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার বিষয়টিও ছিল। তবে এ সংক্রান্তে একটি ঋণ প্রস্তাবে অনুমোদন পেতে অনেক সময় গড়িয়ে যায়। বেজা জানায়, আনোয়ারায় চীনা ইকোননিক জোন হবে অত্যন্ত আধুনিক ও প্রয়োজনীয় সকল সুযোগ সুবিধা নিয়ে। নির্মিত হবে বিদ্যুত উপকেন্দ্র, বর্জ্য শোধন ব্যবস্থা, এলএনজি টার্মিনাল ও কালুরঘাট এলাকা থেকে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা। এছাড়া ইকোনমিক জোনের সঙ্গে সংযুক্ত সকল সড়ক চার লেনে উন্নীত করা হবে। বেজা কার্যালয়ের জন্য ওই জোনে নির্মাণ করা হবে ২০তলা একটি ভবন। প্রাথমিক কাজ শেষ হওয়ায় নির্মাণ কাজ শুরু হতে বেশি সময় গড়াবে না।
×