ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতে বহু আটক কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৯:২৯, ২০ আগস্ট ২০১৯

 ভারতে বহু আটক কেন্দ্র  তৈরির পরিকল্পনা

ভারত সরকার কট্টর হিন্দুত্ববাদী নীতি বাস্তবায়নের নামে দেশটিতে বসবাসরত প্রায় ৪০ লাখের বেশি নাগরিককে অভিবাসী হিসেবে ঘোষণা করতে যাচ্ছে। তদের মানুষের বেশিরভাগই মুসলিম সম্প্রদায়ের। মোদি সরকারের এই সিদ্ধান্ত ভারতের দীর্ঘদিনের বহুত্ববাদী সংস্কৃতির ধারা হুমকির মুখে পড়েছে। ভারতের অন্যতম গরিব ও পাহার বেষ্টিত অসম রাজ্যের এসব নাগরিক এখন তাদের ভোটাধিকারসহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধা খোয়াতে বসেছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্ত লাগোয়া ভারতের রাজ্য অসমের এসব নাগরিকদের বিদেশী আখ্যা দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে মোদি সরকার। এসব নাগরিকের জন্ম ভারতের মাটিতে। এসব লোকজন এতদিন ভারতের পূর্ণ নাগরিক সুবিধা ভোগ করত। এরা ভোট দিতে পারত। নিউইয়র্ক টাইমস। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এখন নাগরিক সুবিধা হারাতে বসা মানুষকে বিচারের জন্য দ্রুত হারে বিদেশীদের বিচারের নামে ট্রাইব্যুনাল ও নতুন করে বহু আটক কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। অসম থেকে ইতোমধ্যে শত শত লোককে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রথম সারির অনেক নেতা একং দেশটির সাবেক সেনা সদস্যও রয়েছেন। অধিকার কর্মীদের দাবি, অনেক নাগরিক ভারতীয় বাহিনীর হাতে আটক এবং লাঞ্ছনার ভয়ে ইতোমধ্যে আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যার এসব ঘটনার পরও মোদি সরকার তার সিদ্ধান্তে অনড়। একই সঙ্গে ভারত সরকার দেশটির অন্যান্য অংশেও একই পদ্ধতি অনুসরণের চিন্তাভাবনা করছে। চলতি বছরের ভারতের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে মোদি বিপুল বিজয় পাওয়ায় বিজেপির সামনে ভারতের অন্যান্য অংশেও এই পদ্ধতি অনুসরণে পথ আরও সুগম হয়েছে। এতে ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনের জন্য একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এদিকে চলতি মাসের ৫ তারিখে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নিতে একটি বিল পাস করে মোদি সরকার। স্থানীয় নেতা ও ভারতের অন্য বিরোধী নেতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনায় বসায় সৌজন্যতা পর্যন্ত দেখায়নি মোদি সরকার। জম্মু-কাশ্মীরের মর্যাদা কেড়ে নিয়ে আবার কাশ্মীরের সাবেক তিন মুখ্যমন্ত্রীসহ অন্য নেতাদের আটকে পুরো কাশ্মীরকে একটি খোলা গারদে পরিণত করে রেখেছে। অসমের নাগরিক পঞ্জি নিয়ে মোদি সরকার দেশটির পার্লামেন্টে একটি বিল পাস করাতে চাইছে। এখানে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রীস্টান অন্য ধর্মের লোক ছাড়া শুধু মুসলিমদের ভারত ছাড়ার কথা বলা হয়েছে। এদিকে মোদির এই সব পদক্ষেপকে বিপজ্জনক খেলা আখ্যা দিয়েছেন সমালোচকরা। তারা বলছেন, এতে ভারতের বৈচিত্র্য ও বহুত্ববাদ নীতির মুখে কালিমালেপন করা হবে। আবার অনেকে বলছেন, ভারতের স্বাধীনতার সময় দেশটিতে যেমন হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় লেগেছিল। মোদির এই পদক্ষেপে ভারতে আবার ধর্মের নামে বিভক্তি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। অসমে এমনিতেই জাতিসত্তা সহিংসতার ঘটনা রয়েছে। মোদির এই সিদ্ধান্ত অসমকে আরও সহিংসতার পথে ঠেলে দিতে পারে। এদিকে মোদির অনেক হিন্দুত্ববাদী নেতাও এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানায়নি। তারা বলছেন, এসবের চেয়ে মোদির উচিত ভারতে বিদ্যমান অন্যান্য সমস্যা যেমন দারিদ্র্য দূরীকরণ ও শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি নজর দেয়া উচিত।
×