ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

পঁচাত্তর পরবর্তী বীরত্বগাথার অজানা অধ্যায়ের নাটক ‘রক্তঋণ’

প্রকাশিত: ১০:২৭, ১৯ আগস্ট ২০১৯

পঁচাত্তর পরবর্তী বীরত্বগাথার অজানা অধ্যায়ের নাটক ‘রক্তঋণ’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ইতিহাসের এক কলঙ্কিত অধ্যায় পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট। বিশ্বাসঘাতকদের ষড়যন্ত্রে নির্মমভাবে সপরিবারে খুন হন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। চলতে থাকে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ঘাতকদের মিথ্যা ও কুরুচিপূর্ণ প্রচার। এর মাঝেই সারাদেশে এ হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে সংগঠিত হয় প্রতিবাদী কর্মকান্ড। গারো পাহাড়ের পাদদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিয়ে গড়ে ওঠে সশস্ত্র আন্দোলন। প্রতিবাদকারীদের ওপর নেমে আসে তৎকালীন ঘাতক সরকারের মন-পীড়ন। অথচ ঘাতকচক্র সব সময়ই প্রমাণ করতে চেয়েছে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডেকে দেশের মানুষ নীরবে মেনে নিয়েছিল। হয়নি কোন প্রতিবাদ। সেই ভুল ও মিথ্যা তথ্যের বিপরীতে পঁচাত্তর পরবর্তী কালো অধ্যায়ে অজানা বীরত্বগাথার কথা উঠে এসেছে রক্তঋণ নামের নাটকে। তীরন্দাজ নাট্যদলের গবেষণাধর্মী প্রযোজনাটির তৃতীয় প্রদর্শনী হলো রবিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে। শাহীন রেজা রচিত নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন কাজী রকিব। নাটকের কাহিনীতে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে এক রাতে রক্তের হোলি খেলায় মেতে ওঠে হায়েনার দল। হারিয়ে যায় স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা ও তার লালিত স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন বাঁচাতে সেই রাতে এগিয়ে এল না কেউ, এগিয়ে এলেন শুধু একজন অকুতোভয় সৈনিক। সোবহানবাগ মসজিদের সামনে হায়েনাদের বুলেটে তিনিও খুন হলেন। ৩২ নম্বরের সিঁড়ি বেয়ে রক্তের ধারা বাংলাদেশকে প্লাবিত করে মিশে গেল বঙ্গোপসাগরে। রাস্তা দাপিয়ে বেড়ায় দানবদের ট্যাঙ্ক। রাস্তায় নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে সবার অগোচরে রচিত হলো দেশের জঘন্যতম কালো অধ্যায়। সেই ভোরেই ঢাকা থেকে বহু দূরে গারো পাহাড়ের পাদদেশের এক শান্ত সবুজ গ্রামে পৌঁছে গেল সেই মহাদুর্যোগের খবর। রেডিওর ঘোষণায় ক্ষত-বিক্ষত হলো যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইকরাম আলীর হৃদয়। সারাদেশ যখন দিশেহারা, সেই সময়ে ইকরাম কমান্ডার এক নতুন যুদ্ধের ডাক দিলেন। আরেক সাহসী মুক্তিযোদ্ধা গনি মিয়া তার গর্ভবতী স্ত্রী ফেলে ইকরাম কমান্ডারের ডাকে অস্ত্র হাতে যোগ দিল সেই যুদ্ধে। গারো পল্লীর সাইলেন, মনোরঞ্জন, নলিনীকান্ত, বিন্দুদিত্যসহ সবাই নাম লেখাল নতুন যুদ্ধে। একটি সামান্য রাম দা হাতে ছুটে এল ক্লাস সেভেনে পড়া অসীম সাহসী এক কিশোর। থানায় রান্নার কাজ করা এক বীরাঙ্গনা পুলিশের রাইফেল চুরি করে যোগ দিলেন সেই যোদ্ধাদের সঙ্গে। একাত্তরের মতোই সীমান্তবর্তী ভবানীপুরে গড়ে তোলা হলো ক্যাম্প। ১৪০টি বিওপি ও তিনটি থানা দখল করা হলো। সংগৃহীত হলো অস্ত্র। যুদ্ধে যোগ দিলেন সাত হাজারের বেশি যোদ্ধা। গারো পাহাড়ের পাদদেশের ৩০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা চলে এল সেই যোদ্ধাদের দখলে। অন্যদিকে চট্টগ্রামেও বিদ্রোহের খবর পাওয়া গেল। ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় লিফলেট বিতরণ হলো। বিচ্ছিন্নভাবে দেশের নানা জায়গায় শুরু হলো প্রতিবাদ। সবার ভেতরে জ্বলছিল বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধের আগুন। খুনী সরকারের বিভিন্ন বাহিনী হন্যে হয়ে খুঁজতে লাগল তাদের। জাতিসংঘেও দেয়া হলো অভিযোগ। সেই বীর যোদ্ধাদের বলা হলো দেশদ্রোহী, দুষ্কৃতিকারী ও সন্ত্রাসী। একের পর এক সম্মুখ সমরে নিহত হলেন অনেক যোদ্ধা। কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে হত্যার শিকার হলেন অনেকে। নিহতের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াল পাঁচ শতাধিকে। জ্বালিয়ে দেয়া হলো পাঁচ হাজার ঘরবাড়ি। দেশ ছাড়া হলেন বহু মানুষ। একদিন একরাম কমান্ডারের নির্দেশে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের হত্যার উদ্দেশে যোদ্ধারা রওনা হলেন ঢাকা অভিমুখে। কি পরিণতি হলো তাদের? বঙ্গবন্ধুর রক্তঋণ শোধ করার পথে কতটা অগ্রসর হয়েছিলেন তারা? কেউ কি জানে সেই বীরত্বগাথা? এসব প্রশ্ন ও তার জবাব নিয়ে এগিয়ে যায় নাটকের কাহিনী। প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সানজিদা প্রমি, এনামুল রিপন, হাসান মাহাদী, জাহিদ মোহাম্মদ, তামান্না তমা, শাহীন রেজা রাসেল, সাব্বির হাসান, মারুফ বিল্লাহ, রফিকুল সেলিম, আহমেদ শাওন, নুসরাত তিথি, মোস্তফা কামাল, অমিতাভ রাজীব, মহিউদ্দিন রোমান কাজী রাকীব, সৌরভ আহমেদ ও সোলায়মান মামুন।
×