জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের পরমাণু হামলা মোকাবেলায় পুরোপুরি প্রস্তুতির ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিল পাকিস্তান। এবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এক টুইটে ভারতের সঙ্গে সম্ভাব্য পরমাণু যুদ্ধ নিয়ে বিশ্বকে সতর্ক হতে বললেন। তার ভাষায়, কাশ্মীর থেকে পুরো বিশ্বের নজর সরাতেই ভারত ওই পরমাণু যুদ্ধ লাগিয়ে দিতে পারে। খবর আনন্দবাজার, ডন, ওয়ান ইন্ডিয়া, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও এনডিটিভির।
একের পর এক টুইটে ইমরান লিখেছেন, ভারতের পরমাণু অস্ত্রভা-ার থেকে অন্য দেশগুলো কতটা নিরাপদ, এবার গুরুত্ব দিয়ে তা ভাবা উচিত পুরো বিশ্বের। কারণ এটা এমন একটা বিষয়, যার প্রভাব শুধুই এই অঞ্চলেই নয়, পড়বে পুরো বিশ্বে। শনিবার ইসলামাবাদ জানায়, ভারতের দিক থেকে যে কোন পরমাণু হামলা মোকাবেলায় পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে পাকিস্তান। ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের পর কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে শনিবার ইমরান সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের মন্ত্রী, অফিসার ও উচ্চপদস্থ সেনাকর্তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়। এরপরই যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি ও সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গফুর। মেজর জেনারেল গফুর বলেন, এই বিষয়ে আমাদের সন্দেহটা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে খুবই জোরালো হয়েছে যে, কাশ্মীর থেকে পুরো বিশ্বের নজর ঘোরাতে বড়সড় পরমাণু হামলা চালাতে পারে ভারত। তবে তার জন্য আমরা পুরোপুরি তৈরি রয়েছি।
শ্রীনগরে আবারও নিরাপত্তা কড়াকড়ি আরোপ ॥ রাতভর পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার পর কাশ্মীরের সবচেয়ে বড় নগরী শ্রীনগরে আবারও সাধারণ মানুষের চলাচলের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে ভারতীয় প্রশাসন। গত ২৪ ঘণ্টায় শ্রীনগরের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সঙ্গে স্থানীয়দের দফায় দফায় সংঘর্ষের পর রবিবার থেকে আবারও সেখানে নিরাপত্তা কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। যদিও ভারতীয় প্রশাসনের দাবি, কড়াকড়ি আরোপ করা হলেও নতুন করে কারফিউ জারি করা হয়নি। কিন্তু রবিবার নগরীর বেশিরভাগ সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রাখা হয়। কোথাও কোথাও নিরাপত্তা বাহিনী স্থানীয়দের কারফিউ জারি করার কথা বলেছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে জানায় রয়টার্স।
কাশ্মীরে ভুগছে সাংবাদিকরাও, সরকারপন্থীদের বিশেষ সুবিধা ॥ অবরুদ্ধ কাশ্মীরে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সংবাদকর্মীরা। টেলিফোন, মোবাইল, ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয়ায় একপ্রকারে মুখ বন্ধ গণমাধ্যমের। কাশ্মীরের খবর বাইরে পাঠানো বা বাইরের খবর ভেতরে পৌঁছানোর কার্যত সব দরজাই বন্ধ। এর মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে একটি মিডিয়া সেন্টার খোলা হলে কিছুটা আশার আলো দেখতে পান গণমাধ্যমকর্মীরা। কেন্দ্রের চারটি কম্পিউটার ও একটি মোবাইল ফোনই খবর পাঠানোর একমাত্র অবলম্বন হয়ে ওঠে তাদের কাছে। তবে, শত শত সাংবাদিকের জন্য এ সংখ্যাটি একেবারেই নগণ্য। তাছাড়া, ইন্টারনেটের গতিও অতিমাত্রায় কম। একটি সাধারণ ফাইল আপলোড হতে সময় নেয় ঘণ্টাখানেক। তার ওপর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা- দুটি কম্পিউটার বেশিরভাগ সময় দখলে রাখছেন সরকারের তথ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। শনিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ১৮-এর এক বিশেষ প্রতিবেদনে একথা জানানো হয়েছে।
কাশ্মীর ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদে শুধু চীনকেই পেল পাকিস্তান ॥ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে চীন ছাড়া আর কেউই পাকিস্তানের ডাকে সাড়া দেয়নি। ইসলামাবাদের পরমবন্ধু চীন ছাড়া অন্য রাষ্ট্রগুলো বলছে, কাশ্মীর ভারত-পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বৈঠকে পাকিস্তানকে খোলাখুলি সমর্থন দিয়েছে চীন। কিন্তু বাকি চার স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স ও ব্রিটেন পাশে দাঁড়িয়েছে ভারতের। তারা মনে করে, ভারত-পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক বিষয় কাশ্মীর। চীনের আবেদনে সাড়া দিয়ে কাশ্মীর নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছিল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনা চেয়ে ৫ আগস্ট চিঠি দেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি। পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ায় তাদের বন্ধু রাষ্ট্র চীন। বেজিংয়ের আবেদনে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সম্মত হয় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।