সমুদ্র হক ॥ রবিবারও উত্তরবঙ্গ মহাসড়কে বাসের অপেক্ষায় হাজারো মানুষের ভিড়। বেশিরভাগই কর্মস্থল ঢাকা ফেরার শেষ দিন শনিবার বাস ও ট্রাকের অপেক্ষায় থেকেছে। দাঁড়িয়ে বা বসে কোন আসনের ব্যবস্থা করতে পারেনি। তারা ফের মহাসড়কে নেমেছে। যোগ হয়েছে আরও নতুন যাত্রী। তবু ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই অবস্থা। বগুড়া শহরতলীর চারমাথা বাস টার্মিনাল, ঠনঠনিয়া টার্মিনাল, শাকপালার মোড়, বনানী মোড় শেরপুর উপজেলা বাস টার্মিনাল, শেরপুর-ধুনট রোড বাস স্ট্যান্ড, শিবগঞ্জের আমতলী বাস স্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন পয়েন্টে কর্মস্থলে ফেরার নারী-পুরুষের ভিড়। অপেক্ষায় থেকে মহাসড়কের দিকে দৃষ্টি। কখন কোন বাস ও খালি ট্রাক পার হয়। যখন ঢাকামুখী কোন বাস, ট্রাক ও পিকআপ দাঁড়াচ্ছে তখনই কে কার আগে উঠবে এই প্রতিযোগিতায় এক অসম যুদ্ধাবস্থা তৈরি হচ্ছে। যাত্রীদের বেশিরভাগই পোশাক কারখানার (গার্মেন্ট) শ্রমিক ও অন্যান্য বিভাগের কর্মচারী। এর পাশাপাশি নানান কাজে ঢাকা যাওয়ার সাধারণ যাত্রীও আছে।
বগুড়া থেকে ঢাকাগামী ব্র্যান্ড কোচগুলোর টিকেট এখনও নেই। কর্তৃপক্ষ বলছেন, ২০ আগস্ট থেকে টিকেট প্রাপ্তি স্বাভাবিক হবে। এবার কেন এত চাপ! খোঁজখবর করে জানা গেল ঈদের ছুটি ছিল বেশি। ঐচ্ছিক ছুটি নিয়ে অনেকে বেশি দিন থেকেছেন। কোরবানির ঈদের ছুটির পর এমন অবস্থা হয়। তবে এবার একটু বেশি। এই সময়টায় পোশাক কারখানার শ্রমিক কর্মচারী বেশি যাচ্ছেন। শেরপুর-ধুনট বাস স্ট্যান্ডের একজন মোটর শ্রমিক জানালেন বগুড়ার শেরপুর, ধুনট সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, শিবগঞ্জ, নন্দীগ্রামের অন্তত ৩৫ হাজার শ্রমিক ঈদে বাড়িতে আসেন। তাদের কর্মস্থলে ফেরার ভিড় কাটেনি। গাজীপুরের গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির শ্রমিক শিউলী, আসমা খাতুন, হাসনা বানু বললেন, ঈদের আগে উত্তরবঙ্গমুখী অনেক বাসের মধ্যে কোন একটিতে এসেছেন। ৩৫০ টাকার ভাড়া দিতে হয়েছে ৫০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা। ছাদে উঠলে ৪০০ টাকা। ঈদের খরচাপাতি শেষে হাত প্রায় খালি। ট্রাক মিনি ট্রাক ও পিকআপে ২০০/২৫০ টাকায় যাওয়া যাচ্ছে। কয়েকজন পুরুষ কর্মচারী বললেন, পিকআপে বসার জায়গা কম। কখনও ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। তারপরও যদি সময়মতো ঢাকা পৌঁছা যায়।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আর ভোগান্তি সয়ে পোশাক শ্রমিকরা ঢাকা গাজীপুর সাভার থেকে বগুড়া এসেছে। ঝুঁকি আর ভোগান্তি সঙ্গে নিয়েই ফিরছে কর্মস্থলে। ঈদের আনন্দ আর অস্তিত্বের লড়াইয়ে জীবনের আনন্দ- এমন সমান্তরাল জীবন তাদের। আর সাধারণ মানুষ! ঈদের আগে ও পরে ঢাকা-বগুড়া-ঢাকা যাত্রা পথে দুর্ভোগ আর ভোগান্তির শেষ কবে!
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: