ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মত

ঝুঁকিতে ফেডারেল ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৮:০৭, ১৯ আগস্ট ২০১৯

  ঝুঁকিতে ফেডারেল ব্যবস্থা

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার প্রথম থেকেই নিজেকে একজন গণতান্ত্রিক ও স্বায়ত্তশাসনের পক্ষের নেতা হিসেবে নিজের ইমেজ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। বক্তব্যের নানা জায়গায় তিনি ঐক্যবদ্ধ ভারত গড়ার কথা বলেন। তবে সম্প্রতি কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নিয়ে মোদি নিজেই তার গণতান্ত্রিক নেতার ইমেজে কালিমালেপন করেছেন। এই পদক্ষেপ ছিল কাশ্মীরবাসীসহ বিশ্বের গণতন্ত্রকামী মানুষের কাছে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ঠেকেছে। বিবিসি। গত ৫ আগস্ট ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা তুলে দিয়ে জম্মু-কাশ্মীরকে দুইভাগ করে এসব অঞ্চলে কেন্দ্রের শাসন জারি করে মোদি সরকার। কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কাশ্মীর নিয়ে মোদি সরকারের এই হটকারী সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত বৃহৎ ভারতের ফেডারেল প্রথায় প্রভাব ফেলতে পারে। এক পর্যায়ে দেশটির ফেডারেল প্রথা দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এখন থেকে জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখকে দিল্লী থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহ ফেডারেল সরকার থেকে কম স্বায়ত্তশাসন ভোগ করে। এ বিষয়ে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের আন্তর্জাতিক ও তুলনামূলক রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক সুমন্ত্র বসু মোদি সরকারের এই পদক্ষেপকে ‘মহিমান্বিত দিল্লীর পৌরসভা প্রথা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, মোদি সরকার জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নিয়ে ভারতের কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যগুলোর সম্পর্কের ভারসাম্যের আরও অবনতি ঘটল। দীর্ঘ বছর ধরে কাশ্মীরবাসী এই ৩৭০ ধারার বিশেষ সুবিধা পেয়ে আসছিল। তবে এই সুবিধা অনেকটাই ছিল আলঙ্কারিক। কারণ ওই অঞ্চলে বছরজুড়ে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি থাকায় স্বায়ত্তশাসনের নিশ্চয়তা এমনিতেই ঝুঁকির মুখে পড়েছিল। তারপরও কাশ্মীর আলাদা ও ৩৭০ ধারা বিলোপ করার প্রয়োজন দেখছেন না অনেকে। কারণ ভারতের সংবিধানে সমাজের সাধারণ মানুষের কথা বলা হয়েছিল। পাশাপাশি ভারত ছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য বৃহৎ দেশ যেমন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় এই ফেডারেল প্রথা বলবত রয়েছে। এসব দেশে দীর্ঘদিন ধরে ধর্ম ও সংস্কৃতির একটা মেলবন্ধন বজায় রয়েছে। তবে ভারতের মতো একটি দরিদ্র দেশে- তা কেন সম্ভব নয়। ভারতের সংবিধানে কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্যের নির্বাচিত সরকারের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য এবং ক্ষমতার মানদন্ডের কথা বলা আছে। দিল্লীভিত্তিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি রিসার্সের প্রধান নির্বাহী বলেন, কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ক্ষমতার সূক্ষ্ম ভারসাম্য যেন বজায় থাকে সেটি সংবিধানে নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া ভারতের রাজ্যগুলোতে একজন রাজ্যপাল থাকেন। যাকে কেন্দ্রীয় সরকার নিয়োগ দেয়। এই রাজ্যপাল কেন্দ্রীয় সরকারের সরাসরি প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। তবে ওই রাজ্যপাল দায়িত্ব পালনে অসুবিধার মুখোমুখি হলে ওই রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসন জারির বিধান রয়েছে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ১৯৫১ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত মোট ৮৮ বার রাষ্ট্রপতি শাসন জারির ঘটনা ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ব্রুকিং ইনস্টিটিউটের সাবেক ভিজিটিং স্কলার নবনিতা চাড্ডা বেহরা বলেন, মোদি সরকারের এই পদক্ষেপে মনে হচ্ছে ক্রমেই এককেন্দ্রিক শাসনের পথে এগুচ্ছে ভারত। অপরদিকে দেশটিতে ক্রমেই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ কমে আসছে। তার মতে, ভারতের অনেক লোক সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাচ্ছে। তবে এর ফলে যে ভারতের দীর্ঘ ফেডারেল প্রথা ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে- তা মানুষ ভাবছে না। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের অপর শিক্ষক যামিনী আইয়ার বলেন, এই ফেডারেল প্রথার ওপর ভিত্তি করেই ১৯৪৭ সালে ভারতের সংবিধান প্রণীত হয়েছিল। তবে এই প্রথা ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়া ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্য অশনি সঙ্কেত।
×