ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অবসর ইস্যু

সিদ্ধান্ত নিতে দুই মাস সময় চান মাশরাফি

প্রকাশিত: ১২:০০, ১৮ আগস্ট ২০১৯

সিদ্ধান্ত নিতে দুই মাস সময় চান মাশরাফি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে সেপ্টেম্বর অথবা অক্টোবরে দ্বিপক্ষীয় ওয়ানডে সিরিজ অথবা একটি ওয়ানডে আয়োজন করে মাশরাফি বিন মর্তুজাকে রাজসিক বিদায় দেয়ার কথা ছিল। সেই রকম প্রস্তুতিও হাতে নেয়া হয়েছিল। শুধু দরকার ছিল মাশরাফির সিদ্ধান্ত জানা। সেই সিদ্ধান্ত জানালেনও বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক। কিন্তু অবসরের সিদ্ধান্ত জানাননি। তিনি অবসরের সিদ্ধান্ত নিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কাছে দুই মাস সময় চেয়ে নিলেন। মাশরাফি আসলে তাহলে কবে অবসর নেবেন। কিংবা কোন সিরিজের পর মাশরাফির এমন সময় চেয়ে নেয়ার সিদ্ধান্তে তা ধোঁয়াশাতেই থাকল। বিসিবি চেয়েছিল রাজসিক বিদায় জানাতে। কিন্তু মাশরাফি কী তাহলে শেষ পর্যন্ত তেমন বিদায় পাবেন? কারণ আগামী বছর মে মাসের আগে বাংলাদেশ দলের কোন ওয়ানডে সিরিজ নেই। সেই সিরিজও আছে বিদেশের মাটিতে। তার মানে এই সিরিজে তো আর মাশরাফি বিদায় নিচ্ছেন না। তাকে দেশের মাটিতে বিদায় নিতে হলে আগামী বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত তাহলে অপেক্ষা করতে হবে। তখন দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজ রয়েছে। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডের মধ্যে এতটাই ভাল সম্পর্ক যে এমনও হতে পারে সিরিজটি আগামী বছর এপ্রিল-মে’র দিকে এগিয়ে আনা হলো। কিন্তু তাতেও তো মাশরাফির অবসর নেয়া অনেক দেরি হয়ে যাবে। তখন মাশরাফির এখন যে জনপ্রিয়তা, সেই জনপ্রিয়তায় কী ভাটা পড়ে যাবে না? অবসর বিষয়ে বোর্ড যতই মাশরাফিকে রাজসিক বিদায় দেয়ার চিন্তা করুক, সিদ্ধান্ত মাশরাফির আগে নিতে হবে। কবে তিনি অবসর নেবেন। এই অবসর নিয়ে বিসিবি সভাপতির সঙ্গে কথা বলতে শনিবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের বিসিবি কার্যালয়েও আসেন মাশরাফি। সেখানে কোচ নিয়েও আলোচনা হয়। বিসিবি সভাপতির সঙ্গে কথাও বলেন। এরপরই বিসিবি সভাপতি জানান অবসর নেয়ার সিদ্ধান্ত জানাতে মাশরাফি দুই মাস সময় চেয়েছেন। বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘আমরা সম্মানের সঙ্গেই ক্রিকেটারদের বিদায় দিতে চাই। তবে ঠিক কখন বিদায় নিতে হবে এটা ক্রিকেটারদেরও জানতে হবে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আরেকটা ব্যাপার ছিল, আমরা জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে একটা ওয়ানডে আয়োজন করব কি না। সেই সিদ্ধান্তর ব্যাপারে ওকে (মাশরাফিকে) জিজ্ঞেস করেছি। ও মনে করে, এটা খুব দ্রুত হয়ে যায়। আগামী মে মাসের আগে আমাদের কোন ওয়ানডে নেই। সে জন্য এখনি নাহলে ওর জন্য সুবিধা হয়। ও যদি দুই মাস সময় পায় তাহলে দুই মাস পর সিদ্ধান্ত নিতে চায়।’ সামনে কোন ওয়ানডে নেই। আগামী বছর মে মাসের আগে নেই কোন ওয়ানডে। আর তাই মাশরাফিকে সবদিক ভেবেই সিদ্ধান্ত নেয়ার পরামর্শ দেন বিসিবি সভাপতি। বলেন, ‘আমি বলেছি, কোন সমস্যা নেই। দুই মাস সময় নিক। সামনে যেহেতু আমাদের কোন ওয়ানডে নেই। ওয়ানডে অধিনায়কত্ব কি হবে, সেটা যখন খেলা হবে তখনই কথা হবে।’ বিসিবি আসলে মাশরাফিকে রাজসিক অবসরের সুযোগ করে দিতেই জিম্বাবুইয়েকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। তিন জাতি টি২০ সিরিজও আয়োজন করে। এরপর জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে মাশরাফির জন্যই একটি সিরিজ অথবা একটি ওয়ানডে আয়োজন করার ভাবনাও ছিল। কিন্তু মাশরাফি দুই মাস সময় চেয়েছেন। বিশ্বকাপে যখন বল হাতে মাশরাফি উজ্জ্বলতা ছড়াতে পারেননি তখন থেকেই আসলে মাশরাফির অবসরের বিষয়টি বেশি করে উঠেছে। ব্যাট হাতে তার তো তেমন কিছু করার নেই বললেই চলে। তিনি যে একজন পেসার। ৫ ম্যাচ ব্যাটিং করে ৮.৫০ গড়ে ৩৪ রান করেছেন। তবে বল হাতেই সবকিছু করার কথা মাশরাফির। ১৮ বছর ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ক্রিকেটার। দলের অধিনায়কও তিনি। কিন্তু এখানেই ব্যর্থ হয়েছেন। আর তাতে করে একটা সময় গিয়ে একাদশ থেকেই মাশরাফিকে বাদ দেয়ার কথাও ওঠে। বিশ্বকাপে ৮ ম্যাচে বোলিং করে ৫৬ ওভারে ৩৬১ রান দিয়ে মাত্র ১ উইকেট শিকার করেন মাশরাফি। প্রতি ওভারে ৬ রানের বেশিও দেন। তার যে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা তাতে ভাটাও পড়ে। অবসরের কথাও তাই জোরেশোরেই শোনা যায়। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) চেয়েছে মাশরাফিকে রাজসিক বিদায় জানাতে। সেটি আবার দেশের মাটিতেই। এ জন্য বিশ্বকাপে নয়, বিশ্বকাপের পর দেশের মাটিতে একটি সিরিজ আয়োজন করে মাশরাফিকে বিদায় দেয়ার চেষ্টা করেছে বিসিবি। জিম্বাবুইয়ে সিরিজটিতে খেলতে পারবে কিনা এ নিয়ে ছিল সংশয়। জিম্বাবুইয়ে ক্রিকেটে সরকারের হস্তক্ষেপ থাকায় ক্রিকেট থেকে জিম্বাবুইয়ে ক্রিকেটকে নির্বাসিত করে দিয়েছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থা (আইসিসি)। তাই জিম্বাবুইয়ে দলের খেলা নিয়ে ছিল সংশয়। কিন্তু সেই সংশয় দূর হয়ে গেছে। নির্বাসিত হলেও বাংলাদেশে সিরিজ খেলতে বাধা নেই জিম্বাবুইয়ের। এমনই জানিয়েছিলেন বিসিবি সভাপতি। তার মানে জিম্বাবুইয়ে ক্রিকেট নির্বাসিত হলেও আইসিসির সঙ্গে কথা বলেই জিম্বাবুইয়েকে বাংলাদেশে আনার ব্যবস্থা করে বিসিবি। সেই ব্যবস্থা মাশরাফিকে কেন্দ্র করেই করা হয়েছিল। টেস্ট খেলতে পারেন না মাশরাফি। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকেই তা পারেন না। এই ফরমেটে মাশরাফির আর খেলা হচ্ছে না তা ধরেই নেয়া হয়েছে। তবে টি২০ ও ওয়ানডে চালিয়ে গেছেন। ২০১৭ সালের এপ্রিলে টি২০ থেকে হঠাৎ অবসর নিয়ে নেন মাশরাফি। এরপর শুধু ওয়ানডে খেলে যান। কিন্তু বিশ্বকাপে মাশরাফির যে ব্যর্থতা ছিল তা ওয়ানডে থেকেও ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’কে অবসরের দিকে ভালভাবেই ঠেলে দেয়। বিশ্বকাপে অবসরের বিষয়টি অনেক জোরেশোরে শোনা গেলেও দেশের মাটিতেই মাশরাফির বিদায় হবে, সেটি রাজসিক বিদায় হবে তা বিসিবি সভাপতি পাপনই জানিয়ে দিয়েছিলেন। বিশ্বকাপ চলার ফাঁকে তিনি বলেছিলেন, ‘অবসর (মাশরাফির) হবে দেশের মাঠে। আমরা যত সুন্দরভাবে করা যায় (মাশরাফির বিদায়), সেটা করব। দেশের মাটিতে করাটাই উচিত হবে। তার সঙ্গে শেষ যেদিন কথা হয়েছে আমরা এটাই বলেছি। আমরা ভালভাবে দেশেই (বিদায়ী ম্যাচ) করতে চাই।’ সেই রাজসিক বিদায় মাশরাফি চাইলে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরেই নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি অবসরের সিদ্ধান্ত নিতে দুই মাস সময় চেয়ে নিয়েছেন। তাতে করে যদি আইসিসির ভবিষ্যত সফরসূচী অনুযায়ীই সব চলে তাহলে মাশরাফিকে অবসর নিতে ১৬ মাস অপেক্ষা করতে হবে। এ সিরিজটি বিসিবি ও শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড আলোচনায়, সমঝোতায় ২০২০ সালের এপ্রিল-মে’তেও আয়োজন করা যায়। দুই দলেরই এই সময়টায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোন সূচী আপাতত নেই। কিন্তু তাতেও তো অপেক্ষা ৮ মাসের হয়ে যাবে।
×